ইকারুস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৪/১০/২০১৯ - ২:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক।।

“আপনি তাহলে পাথরে বিশ্বাস করেন না?”

সাইফুল সাহেবের প্রশ্ন শুনে খানিকটা থমকে গেলাম আমি। ভদ্রলোক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, মুখের উপর চট করে না বলে দিতে বাঁধছে। শুধু পাথর কেন, ভুত-পেত্নী-দত্যি-দানো-রেখা-রাশি-ঈশ্বর-এলিয়েন কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নেই আমার। হাসি চেপে মোলায়েম গলায় বললাম,

“মিছে মিছিই রেগে যাচ্ছেন সাইফুল ভাই। বিষয়টা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের নয়।”

“তাহলে কিসের, শুনি?”

একবার ভাবলাম বলি যে বিষয়টা কুসংস্কারের। কিন্তু সবসময় সব কথা বলা যায় না। আমি, হঠাৎ অবাক হয়ে গিয়েছি এমন ভান করে বললাম,

“পাখি গুলোর কাণ্ড দেখেছেন সাইফুল ভাই! একদম আমাদের পায়ে পায়ে ঘুরছে, কোনো রকম ভয়ডর নেই।”

সামনেই সমুদ্র, আমরা দাঁড়িয়ে আছি সৈকতে, চারপাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে একদল ঘুঘু।

সাইফুল সাহেব একবার আমার দিকে আরেকবার পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,

“কোনো রকম ভয়ডর নেই কারণ আমাদের উপর ওদের বিশ্বাস আছে।”

সৈকতের পেছনে টুরিস্ট অফিসে ঝুলিয়ে রাখা নোটিশটা দেখিয়ে বললাম,

“পাঁচ হাজার ডলার ফাইন সাইফুল ভাই। কার সাহস আছে ঘুঘুদের ধরে? হতো বাংলাদেশে তখন দেখতাম কোথায় যায় আপনার ঘুঘুদের বিশ্বাস।”

“আপনার কি ধারণা ঘুঘুরা ওই নোটিশটা পড়তে পারে?”

“কী মুশকিল! তা হবে কেন? এরা জন্মাবধি দেখে আসছে মানুষ কোন ক্ষতি করে না। বিশ্বাস-টিশ্বাসের ব্যাপার না রে ভাই, এটা ওদের পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান।”

“আপনাকে চেনে পাখিগুলো? আগে কখনো দেখেছে আপনাকে? কী করে জানলো যে আপনি কোনো ক্ষতি করবেন না? এই যে না জেনেও আপনার পায়ে পায়ে ঘুরঘুর করছে, এটাই বিশ্বাস।”

“আমাকে নাহয় চেনেনা। আগে কখনো দেখে নি। কিন্তু অন্যদেরকে তো দেখেছে, তাইনা?”

“কটা পাথর হাতে নিয়ে দেখেছেন আপনি?”

ছোটো বেলায় গুলিস্তানের মোড়ে চাদর পেতে বসে থাকা একজনের কথা মনে পড়ে গেলো, লোকটা টিয়া পাখি দিয়ে ভাগ্য গুনতো। খাঁচার পাশে শুইয়ে রাখা একটা কাঁচের বাক্সে লাল-নীল কিছু পাথর থাকলেও ওদিকে খুব একটা নজর যায় নি আমার। চোখের সামনে কথা বোলা একটা টিয়া পাখি থাকলে পাথরের দিকে তাকায় কোন কিশোর?

সাইফুল ভাইয়ের যুক্তি কোনদিকে যাচ্ছে বুঝতে পারছি আমি। বললাম,

“ইয়ে মানে, হাতে নেয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি কখনো।”

“অথচ বিশ্বাস করে বসে আছেন যে পাথরে ভাগ্য ফেরেনা। ঠিক এই এই ঘুঘুদের মতো, কোনোদিন না দেখেও আপনাকে এরা যেমন বিশ্বাস করে বসে আছে। চলুন চলুন, একটা পাথর নাহয় ধরেই দেখলেন হাত দিয়ে। ভয় নেই, কিনতে হবে না।”

টুরিস্ট অফিসের বারান্দায় রাজ্যের পাথর বিছিয়ে বসে রয়েছে একজন মানুষ। পরনে হাতে বোনা রঙিন জামা, জটা ধরা চুলের ভাঁজে গোঁজা তিনটি পালক, সম্ভবত বাজপাখির। পাশেই ঝুলছে একটা পোস্টার, সেখানে লেখা ‘পাথরে ভাগ্য বদলায়’। কিছুক্ষণ আগে হেঁটে যেতে যেতে ওটা দেখেই হেসে উঠেছিলাম। সেই থেকে এতো তর্ক।

মানুষটা ইন্ডিয়ান। ইন্ডিয়ান ইন্ডিয়ান নয়, ক্যানাডার কোন এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের কেউ। আমাদেরকে দেখেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“সুপ্রভাত, পাথর কিনবে তো?”

আমি মুখ খোলার আগেই সাইফুল ভাই বলে উঠলেন,

“পছন্দ হলে কিনবো নিশ্চয়ই।”

আমি ফিসফিস করে বললাম,

“আপনার মাথা ঠিক আছে তো সাইফুল ভাই? এগুলোর কোনটাই চুনি-পান্না-পোখরাজের মতো দামি জিনিস নয়। স্রেফ সৈকত থেকে কুড়িয়ে আনা। আবার দেখুন, লিখে রেখেছে দাম একশ ডলার থেকে শুরু!”

ইন্ডিয়ান লোকটা যেন আমার মনের কথা পড়তে পারলো।

“ভাবছো সৈকত থেকে কুড়িয়ে এনেছি, তাইনা? মিথ্যে বলবো না, এনেছি সেখান থেকেই। তবে কি জানো, এগুলো এই পৃথিবীর নয়। তারা থেকে খসে পড়া পাথর এসব।”

একটা পাথর হাতে নিতেই কেমন যেন লাগলো। অনেকটা মুরগির ডিমের মতো দেখতে, কিন্তু বেশ ভারি। মনে হলো পাথর নয়, যেন লোহার একটা টুকরো হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সেই সাথে অদ্ভুত একটা কথা মনে হলো, মনে হলো পাথরটা যেন জীবন্ত!

সাইফুল সাহেব কয়েকটা পাথর নেড়ে চেড়ে বললেন,

“চলেন রুবেন, ব্যাটা ধান্দাবাজ। আপনি ঠিকই বলেছেন। রত্ন টত্ন কিছুই না, কুড়িয়ে আনা রদ্দি মাল সব।’

ফিরিয়ে দিতে গিয়েও কী মনে করে যেন দাম জিগ্যেস করে ফেললাম।

ইন্ডিয়ানটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“চার ’শ ডলার, একদাম।”

দাম শুনেই হাঁটতে শুরু করে দিয়েছেন সাইফুল ভাই। কিন্তু কেন যেন আমার কিছুতেই ইচ্ছে করলো না পাথরটা ফিরিয়ে দিতে। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে গুনে গুনে চারটে নোট ধরিয়ে দিলাম লোকটার হাতে।

“এটা তোমার ভাগ্যে ছিলো। আমি হাজার ডলার চাইলেও কিন্তু নিতে তুমি। হা হা হা।”

নিজেকে ভীষণ বেকুব বেকুব লাগছে। কিন্তু টাকা-পয়সা একবার হাত থেকে বেরিয়ে গেলে আর কিছু করার থাকেনা। সাইফুল ভাই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে কীভাবে এই গল্পটা অফিসের কলিগদের বলবেন তা ভেবে গায়ে জ্বালা ধরে যাচ্ছে।

পাথরটা ব্যাকপ্যাকে রেখে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখি সাইফুল ভাই পেটে হাত দিয়ে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছেন। পেছন থেকে হারামজাদা ইন্ডিয়ানটা ডাক দিলো,

“তিন দিন পর পাথরটাতে আট ফোঁটা পানি দিতে ভুলো না কিন্তু।”

আমাদের অফিসের নাম ‘হুইটি টুইটি’। শুনে মনে হতে পারে আমরা বুঝি পোষা পাখি নিয়ে কাজ কারবার করি। আসলে তা নয়। ‘হুইটি টুইটি’র গমের ব্যাবসা। অফিস থেকে আমাদের পাঠিয়েছে চলতি মৌসুমের খবর নিতে। প্রতি বছরই কোথাও না কোথাও যাই, এবার কুইবেক। এখানে টুরিস্ট স্পটের অভাব নেই। কিন্তু খুঁজে খুঁজে দাঁত ভাঙা ফরাসি নামের একটা সৈকত বের করেছেন সাইফুল ভাই। সবাই যেখানে যায় সেখানে গিয়ে নাকি মজা নেই।

আসার সময় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি কেন সবাই আসে না এখানে। শহর থেকে অনেক দুরে, গাড়ি চলার রাস্তা নেই, এমনকি সাইকেলে করে আসবো সেটাও সম্ভব নয়। পুরোটাই হাঁটাপথ। পাইন-হিকরির জঙ্গল ভেঙে পাক্কা দুই ঘণ্টা হেঁটে যখন হাঁপিয়ে উঠেছি, ঠিক তখন চোখে পরলো সমুদ্র। সমুদ্রের পানিতে কোন ঢেউ নেই। ভাগ্যিস এসেছিলাম! এমন অপূর্ব নীলচে সবুজ পানি কেবল ডিসকভারি আর ন্যাট জিওর চ্যানেলেই দেখা যায়।

আর দশটা সৈকতের মতো হাজার হাজার টুরিস্টদের ভিড় এখানে নেই। আমরা আর ওই ইন্ডিয়ানটা ছাড়া আর মাত্র জনা কুড়ি মানুষ, তাঁদের দুজন আবার টুরিস্ট অফিসের কর্মচারী। রাতটা এখানে থেকে যেতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু উপায় নেই, টরন্টো ফেরার ট্রেন আজ রাতেই, টিকিট কেনা হয়ে গিয়েছে।

ফিরে চললাম যে পথে এসেছি, সেই জঙ্গল মাড়িয়েই। ফেরার পথটা ধীরে ধীরে উঠে গিয়েছে উপরের দিকে। এমনিতে বোঝার কায়দা নেই, কিন্তু অনেকক্ষণ হাঁটলে টের পাওয়া যায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কতখানি উপরে চলে এসছি আমরা। এক ঘণ্টা হাঁটার পর দম ফুরিয়ে গেলো আমার।

একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম,

“বাংলাদেশ হলে কবে এই জঙ্গল কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলতো! কী বলেন সাইফুল ভাই?”

সাইফুল ভাই বেশ খানিকটা এগিয়ে। আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,

“তারও আগে জঙ্গল কেটে চাষবাস শুরু করে দিতো এলাকার মানুষজন, আর সৈকতের কাছে চিংড়ির ঘের। কিন্তু আপনি থেমে পড়লেন কেন রুবেন? কাম অন! এই তো বয়েস হাইকিঙের। চলুন চলুন।”

কিন্তু চলুন বললেই কি আর চলা যায়? পা দুটো যেন সিসার মতো ভারি হয়ে আছে। বরং বসে একটু জিরিয়ে নিই।

সাইফুল ভাইকে আর দেখা যাচ্ছে না। আমি ডাক দিলাম,

“অতো তাড়া কিসের সাইফুল ভাই? ট্রেন তো রাত দশটার সময়। একটু দাঁড়ান!”

কোন উত্তর নেই। ভদ্রলোক গেলেন কোথায়! আমার ডাক যে তাঁর কানে গিয়েছে সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। এই শুনশান জঙ্গলে গাছের পাতা খসে পড়লেও শোনা যায়। আমি আবার ডাকলাম। জঙ্গলের গাছে গাছে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে আমার কানে ফিরে ফিরে এলো আমারই কণ্ঠস্বর, কিন্তু সাইফুল ভাইয়ের কোন সাড়া নেই। এবার একটু ভয় ভয় লাগতে শুরু করলো। বেলা এখন আড়াইটা হলেও উঁচু উঁচু গাছে আকাশ ঢেকে থাকার কারণে জঙ্গলটায় বেশ অন্ধকার, অনেকটা শেষ বিকেলের মতো। অন্ধকার আরও ঘনিয়ে এলে পথ চিনে ফিরতে পারবো তো! কিন্তু ভয়ের চেয়ে ক্লান্তির তীব্রতা এই মুহূর্তে অনেক বেশি। গাছের তলায় জমে থাকা ঝরা পাতার চাঁদরে বসে পড়লাম হাত পা ছড়িয়ে।

কতক্ষণ বসে ছিলাম জানিনা, হঠাৎ খুব কাছেই খসখস খসখস একটা শব্দ শুনে চমকে উঠলাম। ভালুক টালুক নয়তো! ভয়ে আমার কলজে শুকিয়ে গিয়েছে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে শুরু করলাম আশেপাশে, একটা লাঠি কিংবা পাথর যদি মেলে। নাহ নেই, কিচ্ছু নেই। হঠাৎ মনে পড়লো ইন্ডিয়ান লোকটার কথা, পাথরে ভাগ্য ফেরে। ভাগ্যিস একটা পাথর আছে আমার কাছে! ব্যাকপ্যাকে হাত ঢুকিয়ে পাথরটাকে ছুঁতেই মনে সাহস ফিরে এলো।

পাথরটা বের করেছি কি করিনি, আমার ডান দিকের জঙ্গল ফুঁড়ে বেরিয়ে এলেন সাইফুল ভাই। আমার চোখ তাঁকে দেখেছে, আমি তাঁকে চিনেছি। কিন্তু আমার ডান হাতটা কিছুতেই সেটা বুঝতে চাইলো না। একটা, দুটো তিনটা আঘাত করে যখন থামলাম তখন রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সিডার গাছের তলা।

ভদ্রলোকের মাথাটা থেঁৎলে গিয়েছে একেবারে। একটা চোখ রক্তাক্ত, আরেকটা চোখে অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে শুধু বললেন,

“আমি কেবল আপনার সাথে একটু মজা করতে চেয়েছিলাম রুবেন!”

সাইফুল ভাই যে মারা গিয়েছেন সেকথা বোঝার জন্য ডাক্তার হওয়া লাগে না। সৈকত আর শহরের ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আমি। কী করবো এখন? কোনদিকে যাবো সাহায্যের আশায়?

রওনা হবার সময় দেখে এসেছি টুরিস্ট অফিসের লোকজন পাততাড়ি গুটচ্ছে। ইন্ডিয়ানটাও আমার কাছ থেকে এক সপ্তার কামাই জুটিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে নিশ্চয়ই। শহরের পথেই ছুটলাম। খানিকক্ষণ ছোটার পর একটা বাঁক ঘুরতেই দেখি সাইফুল ভাই। মাটিতে আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছেন। আমাকে দেখেই সহাস্যে বললেন,

“এলেন তাহলে! আমি সেই কখন থেকে বসে রয়েছি আপনার জন্য। কী হয়েছিলো? পথ হারিয়েছিলেন বুঝি!”

ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়লাম। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। সাইফুল ভাইয়ের এখানে থাকার কথা নয়। ‘হুইটি টুইটি’র সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সাইফুল ইসলামকে মিনিট দশেক আগেই আমি খুন করে ফেলে এসেছি একটা সিডার গাছের তলায়। সাইফুল ভাই এগিয়ে এসে আমাকে তোলার জন্য হাত বাড়াতেই আতংকে কুঁকড়ে গেলাম আমি।

“আপনি জীবিত! আপনার মাথা, মাথা, থা-থা থা-থা-থা-থা……”

“কী ব্যাপার রুবেন, এমন তোতলাচ্ছেন কেন? উঠুন তো, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আমাদের।”

আমি ভূতে পাওয়া মানুষের মতো ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। অস্ফুটস্বরে বললাম,

“আপনার মাথা ঠিক আছে!”

“কী মুশকিল! আমার মাথা ঠিক থাকবে না কেন? বলি আপনার মাথা ঠিক আছে তো? এই নিন ধরুন, ফেলে এসেছিলেন। চার’শ টাকা দিয়ে কেনা জিনিস এমন করে ফেলে আসে কেউ?”

সাইফুল ভাইয়ের হাতে আমার ব্যাকপ্যাক। আমি ত্রস্ত ভঙ্গিতে ব্যাগ খুলে পাথরটা হাতে নিয়ে চমকে উঠলাম। নাহ, কিচ্ছু নেই। রক্ত, কাদা, হলদে মগজ, কোন কিছুর কোনো চিহ্ন নেই পাথরটায়।

গাছের আড়াল থেকে পিছলে নামা সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক। ভুত-পেত্নী-দত্যি-দানো-রেখা-রাশি-ঈশ্বর-এলিয়েন কোনো কিছুতেই বিশ্বাস নেই আমার, তারপরও কেন জানিনা, সাইফুল ভাইয়ের দিকে ভালো করে তাকালাম আমি। পায়ের কাছে দিব্যি একটা ছায়া পড়েছে ভদ্রলোকের। বুকটা হালকা হয়ে এলো। পাথরটা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে বললাম,

“কয়টা বাজে সাইফুল ভাই?”

“তিনটে বেজে আঠাশ। পাক্কা একঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন মশাই। চলুন, আরও অন্তত দুই ঘণ্টার পথ বাকি।”

সবকিছু কেমন যেন অবিশ্বাস্য লাগছে। আমি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! কিন্তু ঘুমটা তাহলে ভাঙলো কখন?

“সাইফুল ভাই আপনি কি আমাকে দৌড়ে আসতে দেখেছেন?”

“হা হা হা, তা দেখেছি বৈকি। চোখ বুজে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিলেন আপনি। মনে হচ্ছিলো খুন করে পালিয়ে যাচ্ছেন, হা হা হা।”

আমিও হাসলাম। একবার ভাবলাম ভদ্রলোককে বলি স্বপ্নটার কথা। নাহ থাক, জংগলটা পেরোই আগে।

খাড়াইটা পেরিয়ে আসার পর থেকে আর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে না। সাইফুল ভাইয়ের সাথে মোটামুটি তাল রেখেই চলছি আমি। কথাবার্তা খুব একটা হচ্ছেনা, কেননা সেই তখন থেকেই একটানা গান গেয়ে চলেছেন ভদ্রলোক। গানগুলো বাংলাতেই, কিন্তু কথাগুলো খুব অদ্ভুত। এই যেমন এখন গাইছেন,

“এক যে ছিলো মাছি
তার নামটি ছিলো পাঁচী
উড়তে উড়তে পাঁচী
গিয়ে পড়লো সাঁচী…”

আমি আর থাকতে না পেরে জিগ্যেস করলাম,

“কোথায় পান এসব গান সাইফুল ভাই?”

ভদ্রলোক গান থামিয়ে অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে। বললেন,

“আপনি অন্তরা চৌধুরীর গান শোনেননি!”

“ইয়ে মানে, ব্যান্ডের গান ছাড়া বাংলায় তেমন একটা কিছু শোনা হয়নি আমার। আর তাছাড়া অনার্সের পর তো বিদেশেই চলে এলাম।”

“আপনি নিশ্চয়ই সলিল চৌধুরীর নামও শোনেননি।”

“জী না। এই দুজন কি আত্মীয়?”

“বাদ দেন ভাই, বরং আরেকটা গান হয়ে যাক। এটাও অন্তরার।”

সাইফুল ভাই শুরু করলেন,

“কেউ কখনো ঠিক দুপুরে
রায়পুরেতে যেওনা
যদি বা যাও আন্না মাসির
রান্না সুক্তো খেওনা………”

এর আগে তাঁকে কখনো গান গাইতে শুনিনি। শুধু যে গাইছেন তাই নয়, গানের সাথে মাঝে মাঝে তাল ঠুকে ঝুঁকে পড়ছেন ডানে-বামে-সামনে-পেছনে। দৃশ্যটা মজার হলেও কেমন যেন অস্বস্তিকর।

ট্রেনে কুইবেক থেকে টরন্টো সাত ঘণ্টার পথ। এই পুরোটা সময় থেমে থেমে অন্তরা চৌধুরীর গান গেয়ে কাটিয়েছেন সাইফুল ভাই। সবচেয়ে বেশিবার গেয়েছেন,

“না দের দের দের তুম না না
তা না না না না
নাচো তো দেখি
আমার পুতুল সোনা…”

রাগে আমার মাথা খারাপ হবার দশা! রাতের ট্রেন নিয়েছিলাম যাতে আরাম করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আসতে পারি। ভোরের আলো ফোঁটার আগে আমরা যখন টরন্টোর ইউনিয়ন স্টেশনে এসে পৌঁছুলাম তখন দুজনেরই চোখ রক্তজবার মতো লাল। আমার চোখ অনিদ্রায়, সাইফুল ভাইয়ের চোখ লাল কারণ তিনি এই মুহূর্তে বদ্ধ উন্মাদ। প্লাটফর্মে খুব একটা লোকজন না থাকায় রক্ষা। নইলে ভিড় জমে যেতো এতক্ষণে। এ্যাম্বুলেন্স এসে পৌছুনো পর্যন্ত তাও কিছুটা সামাল দিয়ে রেখেছিলাম ভদ্রলোককে। এপ্রন পড়া প্যারামেডিকদের দেখেই আমার হাত ছাড়িয়ে তিনি দিলেন দৌড়। সে এক দৃশ্য! ষাট বছরের বাঙালি বৃদ্ধ ছয় বছরের শিশুর সারল্য নিয়ে লুকোচুরি খেলে চলেছেন। কখনো তিনি থামের আড়ালে, কখনো আবার চলন্ত সিঁড়ির পেছনে, ধরতে গেলেই হাওয়া। মাঝে মাঝে বেরিয়ে এসে মুখ ভেংচে বলছেন,

“কুমির তোর জলে নেমেছি!”

সাইফুল ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করে বেরুতে বেরুতে সকাল আটটা বেজে গেলো। বাসায় না গিয়ে সোজা চলে এলাম অফিসে। এদেরকে খবরটা জানানো দরকার। তাছাড়া সাইফুল ভাইয়ের গাঁটটি বোঁচকা সব আমার কাছেই। এসব বয়ে নিয়ে এক রুমের স্টুডিও ফ্ল্যাটটাকে ঘিঞ্জি করার কোনো মানে হয় না।

বেলা বারোটার দিকে অফিসের কলিগদের নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে শুনি সাইফুল ভাই কিছুক্ষণ আগে পালিয়ে গিয়েছেন। হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা অসংখ্যবার ক্ষমা চাইতে চাইতে বললেন পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে, তাঁরা এই এসে পড়লেন বলে।

একটার পর একটা অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড আর রাতের অনিদ্রা, কতক্ষণ আর নিতে পারে শরীর! কলিগদের বিদায় দিয়ে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমের একটা চেয়ারে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

বড়জোর দশ মিনিট। বাজখাই একটা হুংকারে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে দেখি জাঁদরেল চেহারার এক পুলিশ অফিসার আমার সামনে দাঁড়িয়ে।

“রুবেন আহমেদ, আমরা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।”

“নিশ্চয়ই অফিসার, বলুন কী জানতে চান।”

“এখানে নয়, আপনি বরং আমাদের সাথে থানায় চলুন।”

ভাগ্যিস এটা বাংলাদেশ নয়! বাংলাদেশের পুলিশ কাউকে থানায় যেতে বলা মানেই চোদ্দ শিক। এরা বেশ খাতির করেই আমাকে একটা ঘরে নিয়ে বসালো। পুরো ঘরটায় কেবল একটা টেবিল আর টেবিলের দুপাশে দুটো চেয়ার।

ঘণ্টা খানেক বসে থাকার পর সেই জাঁদরেল অফিসারটি দুহাতে দু মগ কফি নিয়ে উল্টো পাশের চেয়ারে বসলেন। একটা মগ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলেন।

“সাইফুল ইসলামকে আপনি কতোদিন ধরে চেনেন?”

“এই ধরুন বছর ছয়েক। আমি আর উনি একই অফিসে চাকরি করি।”

“আমরা জানি। হুইটি টুইটির হিউম্যান রিসোর্সের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। আচ্ছা, আপনি তো প্রতি বছরই সাইফুল ইসলামের সাথে ফিল্ড ভিজিটেশনে যান, তাইনা?”

“প্রথম দু’বছর যাইনি, তবে গত চার বছরে এটা একটা নিয়মের মতোই হয়ে গিয়েছে।”

“কখনো তাঁর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন কী?”

কী সব বাকোয়াজ প্রশ্ন করছে আমাকে! প্রশ্ন করার কথা আমার। জলজ্যান্ত একজন মানুষকে সকালে রেখে গেলাম, দুপুরে এসে দেখি নেই। এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? একটু রেগে গিয়েই উত্তর দিলাম,

“অস্বাভাবিক বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন? পাগলামি! না জনাব, সাইফুল ইসলামের মতো ঠাণ্ডা মাথার মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনি। কিন্তু এইবার যে কী হয়ে গেলো!”

“কী হয়েছিলো?”

“আমরা সৈকত ঘুরে জংগল হয়ে হোটেলে ফিরছিলাম। পথে কিছুক্ষণের জন্য পথ হারিয়ে দুজন দুদিকে চলে যাই। আবার দেখা হবার পর থেকেই উনাকে কেমন যেন অন্য রকম লাগছিলো।”

“অন্যরকম মানে?”

“মানে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছিলো। বাচ্চাদের মতো গান গাইছিলেন। হোটেলে ফিরে আবার যেই কে সেই। গোসল করলেন, শেভ করলেন, রাতের খাবার খেয়ে হোটেল ম্যানেজারের সাথে তাস পেটালেন কিছুক্ষণ। আপনি দরকার হলে ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে পারেন, এই যে তাঁর বিজনেস কার্ড।”

“আমরা এরই মধ্যে কথা বলেছি। আপনি মিথ্যে বলছেন না। ট্রেনে কিছু খেয়েছিলেন উনি?”

“জি না। ভদ্রলোক খুব স্বাস্থ্য সচেতন। রাতে একবারের বেশি খান না।”

“পানিও না?”

“না, পানিও না। বয়েস হয়েছে কিনা, ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়াটা তাঁর পছন্দ নয়।”

“তারপর?”

“আমাদের কামরাটা একেবারে ফাঁকা ছিলো। ট্রেন চলতে শুরু করতেই সাইফুল ভাই হাত তালি দিয়ে বললেন ফাঁকা কামরায় গান নাকি দারুণ শোনায়। তারপরের কাহিনী তো হাসপাতালে ভর্তির সময় বলেইছি। আবার শুনতে চান?”

“না না, তার দরকার নেই। রুবেন আহমেদ, আপনার কলিগ সাইফুল ইসলাম দুজন নার্সকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছেন।”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

“কী বলছেন আপনি! হাসপাতালের ওরা তো আমাকে কিছুই বলেনি।”

“হাসপাতালে বলে রেখেছিলাম আমি এসে পৌঁছুনোর আগে আপনাকে কিছু না জানাতে।”

ডাক্তারদের ধারণা সাইফুল ভাই সাডেন স্কিতজোফ্রেনিয়া সিনড্রোমে ভুগছেন। জংগলে হাঁটার সময় বুনো কোন ফলটল খেয়ে ফেলেছিলেন হয়তো। সম্ভবত সেটারই বিষক্রিয়া। এই মুহূর্তে তিনি নিজের এবং অন্যদের জন্য দারুণ বিপজ্জনক। যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে খুঁজে পাওয়া দরকার। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সাইফুল ভাই অদৃশ্য-প্রায় একজন মানুষ। আমরা সাধারণ মানুষেরা অনেকটা গন্ধগোকুলের মতো, যেখানে যাই একটা গন্ধ ছড়িয়ে আসি। কখনো ভালো গন্ধ, কখনো খারাপ, কখনো মাংসল, কখনো ভেষজ, তীব্র অথবা মৃদু- গন্ধের সূত্র ধরে ঠিক ঠিক খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের। সাইফুল ভাই ব্যতিক্রম। অফিসের বাইরে তাঁর আলাদা কোন জীবন নেই। একেবারে একা বলতে যা বোঝায় তিনি তাই। তাঁর পরিবার নেই, আত্মীয় নেই, বন্ধু নেই, আড্ডা নেই- তাঁর কোন গন্ধ নেই। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাঁর কোন হদিস পায়নি।

আমাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেলেন অফিসার মারভিন।

লিফটের জন্য অপেক্ষা করছি। ঘুমে চোখ বুজে বুজে আসছে আমার। মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল ঘুমাইনি আমি। লিফটটা আসতে এতো দেরি করছে কেন? আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়কজন এরইমধ্যে বিরক্ত হয়ে সিঁড়ির দিকে চলে গিয়েছে। পেছনে কতজন আছে দেখার জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চোখে পড়লো এপার্টমেন্ট বিল্ডিঙের সামনের রাস্তায় দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে। কেউ বলে না দিলেও আমি বুঝতে পারলাম এই দুজন আগামী কয়েকদিন এখান থেকে নড়বে না। এই বিল্ডিঙে হুইটি টুইটির সেই পাগল হয়ে যাওয়া সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সাইফুল ইসলামের একজন কলিগ থাকে।

পুলিশগুলো গন্ধ খুঁজতে এসেছে।

তাইতো, সাইফুল ভাই যদি এখানে চলে আসেন! যদি কাল সকালে দরজা খুলেই দেখি সাইফুল ভাই হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে অন্তরা চৌধুরীর একটা গান গাইছেন? ওই যে ওই গান টা, প্লাটফর্মে নেমেই যেটা ধরেছিলেন তিনি,

“ও সোনা ব্যাঙ, ও কোলা ব্যাঙ
সাড়া রাত হেড়ে গলায় ডাকিস ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
তোরা কি গলা সাধিসনি তোরা কি নাড়া বাঁধিসনি
আয়রে তোরা আমার কাছে শিখিয়ে দেবো গান…।।”

ভয়ে আমার কলজে শুকিয়ে গেলো। কেন যেন মনে হচ্ছে লিফট খুললেই দারুণ অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটে যাবে। বরং লাইনের পেছনে চলে যাই, পেছনটাই নিরাপদ।

দুই।।

কাছেই কোথাও একটা শব্দ হচ্ছে। একঘেয়ে এই শব্দটা যে এলার্ম ক্লকের সেটা বুঝতে বেশ সময় লাগলো আমার। সকাল ছ’টার এলার্ম। বাড়ি ফিরেছিলাম বিকেল চারটায়, তার মানে চোদ্দ ঘণ্টা টানা ঘুমিয়েছি। উঠতে গিয়েই ধরাম করে আছড়ে পড়লাম মেঝেতে। বিছানার একেবারে প্রান্ত ঘেঁষে শুয়েছিলাম, ঠিক শুয়ে নয়, একটা পা বাইরে রেখে বিছানার চাঁদরে মুখ থুবড়ে ঝুলে ছিলাম আমি। ঠিক সেই ভঙ্গিতেই ঘুম ভেঙ্গেছে।

ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ কফি বানিয়ে খাওয়া আমার অনেকদিনের অভ্যাস। আজকে অবশ্য কফি না হলেও চলতো। সকালে উঠে এমন সতেজ অনুভব করিনি বহুদিন। তারপরও অভ্যাসবশত কফির মগটা হাতে নিয়ে টেলিভিশনের সামনে গিয়ে বসলাম।
সি টিভিতে সকালবেলা গোমড়ামুখো মাঝবয়সী একটা লোক খবর পড়ে। আজকে সে নেই। তার বদলে রুপোলী পর্দা আলো করে বসে আছে বার্বি ডলের মতো দেখতে একটি মেয়ে। আমি মেয়েটার বয়স যাচাই করার চেষ্টা করতে করতে কফিতে চুমুক দিচ্ছি। জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে মিঠে রোদ। কানে ভেসে আসছে পাখির কিচির মিচির, গাড়ির হর্ন, বাইসাইকেলের টুংটাং। আমি রাজ্যের আলস্য নিয়ে ধূমায়িত কফির মগের উষ্ণতা অনুভব করতে করতে ভাবলাম, দিনের এই কুড়িটা মিনিট একান্তই আমার।

কোনো একটা জায়গায় আগুন লেগেছে। টিভির পর্দায় দেখে মনে হচ্ছে কুইবেক, আশেপাশের সাইনবোর্ড গুলো সব ফরাসি ভাষায় লেখা। ভালো করে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। গরম কফি ছলকে পড়লো হাতে। কিন্তু সেদিকে আমার নজর নেই। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি টিভির দিকে। দাউদাউ করে পুড়ে যাচ্ছে নোটরডেমের গির্জা। সাড়ে আট’শ বছরের পুরনো গির্জাটার একটা অংশ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। চেয়ারটা টেনে টিভির আরেকটু কাছে গিয়ে বসলাম। হাত ছোঁয়া দূরত্বে ফ্রান্স, আধপোড়া গির্জাটার পেছনে উঁকি দিচ্ছে প্যারিসের ঘন নীল আকাশ, আকাশে ভোরের শিউলির মতো শুভ্র খণ্ড খণ্ড মেঘ। বিহ্বল দৃষ্টিতে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে গুনগুন করে গেয়ে উঠেছি টের পাইনি-

“গাছে শিউলি ফুটেছে
কালো ভোমরা জুটেছে।
আজ পাল্লা দিয়ে আকাশে
মেঘেরা ছুটেছে।”

অদ্ভুত তো গানটা! কোথায় শুনেছি? শিখলামই বা কখন! এই অংশটা কি গানের স্থায়ী, অস্থায়ী, নাকি……নাকি অন্তরা?

আরও একবার চমকে উঠলাম। আরও একবার হাতে ছলকে পড়লো গনগনে গরম কলম্বিয়ান কফি। আমার মনে পড়ে গিয়েছে। এটা অন্তরা চৌধুরীর গান। সাইফুল ভাইয়ের মুখে গতকাল, না না কাল নয়, গত পরশু কম করে হলেও দশবার শুনেছি আমি।

তিনবার রিং হতেই অফিসার মারভিন ফোনটা ধরলেন। জানালেন সাইফুল ভাইয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি এখনও, পুলিশ চেষ্টার কোন ত্রুটি করছে না।

অফিসে পৌঁছুতেই একজন কলিগ এসে জানালো হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার আমাকে খুঁজে গিয়েছে। কে জানে আবার কী হলো! ট্যুরের রিপোর্টটা আগে জমা দিয়ে নেই, তারপর দেখা যাবে। কিন্তু জমা দেবো কার কাছে? সাইফুল ভাই আমার বস, রিপোর্ট টিপোর্ট তাঁকেই জমা দেই আমি। সেসব নিয়ে তিনি কার কাছে যান সে আমার মাথা ব্যাথা নয়।

রিপোর্ট শেষ করে প্রিন্ট নিয়ে দেখি আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এই মুহুর্তে হাতে আর কোনো কাজ নেই। একবার ভাবলাম থানায় ফোন করে সাইফুল ভাইয়ের একটা খোঁজ নেই। পরক্ষনেই মনে হলো খবর থাকলে পুলিশই আমাকে ফোন করবে, কী দরকার আগ বাড়িয়ে উৎসাহ দেখানোর।

এমন সময় করিডোরে হাই হিলের ঠকাস ঠকাস আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখি অ্যানা আসছে, অ্যানা আমাদের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,

“আমাকে ফোন করলেই পারতে!”

হিউম্যান রিসোর্সের মানুষগুলো কেমন যেন রোবটের মতো হয়। অ্যানা ব্যতিক্রম। কিন্তু আজ ওকেও খুব গম্ভীর দেখাচ্ছে।

“তোমার জন্য একটা খবর আছে রুবেন, ভাবলাম আমি নিজে এসেই দিয়ে যাই।”

“খবর!”

“হ্যাঁ খবর, এই নাও।”

আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো অ্যানা।

খাম খুলে চিঠিটায় চোখ বুলিয়ে থতমত খেয়ে গেলাম। আমার প্রমোশন হয়েছে। এক ধাক্কায় বেতন বেড়ে গিয়েছে বছরে ত্রিশ হাজার ডলার! এখন আমি চাইলেই একটা ভালো ফ্ল্যাটে উঠে যেতে পারি, লক্কর ঝক্কর গাড়িটা পাল্টে কিনে ফেলতে পারি ঝাঁ চকচকে একটা নতুন এসইউভি।

কিউবিকল থেকে বেরিয়ে সোজা ছুটলাম অ্যানার অফিসে। যেতে যেতে চোখে পড়লো সাইফুল ভাইয়ের দরজায় নতুন নেমপ্লেট- রুবেন আহমেদ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ।

সারাদিন একটার পর একটা মিটিং করে ক্লান্ত হয়ে যখন বাড়ি ফিরলাম তখন সন্ধ্যে নেমে গিয়েছে। পুলিশ দুজন এখনও রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে। আমি না দেখার ভান করে গটগট করে হেঁটে লিফট নিয়ে চলে এলাম এগারো তলায়। ঘরে ঢুকেই মনে পড়লো ফ্রিজে কোনো খাবার নেই। অবশ্য সেটা কোন সমস্যা না, বরিসকে ফোন করলে আধাঘণ্টার মধ্যেই গরম গরম চাইনিজ খাবার চলে আসবে। নাম শুনে রাশান মনে হলেও বরিস আসলে চাইনিজ, এদেশে সব চীনা মানুষেরই একটা করে অচীনা নাম থাকে।

ভাবছি সাইফুল ভাইয়ের কথা। ভাগ্যে আমার বিশ্বাস নেই, কিন্তু যা ঘটেছে তাকে দুর্ভাগ্য না বলে আর কীই বা বলতে পারি আমি? অবশ্য শুনতে খারাপ লাগলেও, আমার জন্য ব্যাপারটা যে সৌভাগ্য বয়ে এনেছে সে কথাই বা অস্বীকার করি কেমন করে!

মানুষ বড় গোলমেলে প্রাণী। সাইফুল ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি তিরিশ হাজার ডলারের বাড়তি ওম।

দরজার কলিং বেলটা আমাকে ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো। খাবার এসেছে।

পয়সা চুকিয়ে, টিপস দিয়ে, রান্নাঘরে ঢুকলাম প্লেটের সন্ধানে। খেতে খেতে বারবার মনে হচ্ছে কী যেন একটা ভুলে গিয়েছি। কিছু একটা যেন একটা করার কথা ছিলো আমার! ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত খচখচানিটা আর গেলো না।

এমনিতে আমার ঘুম খুবই গাঢ়, প্রগাঢ় বললেও ভুল হবে না। তাই রাত দুটোর সময় ঘুমটা যখন ভেঙে গেলো তখন ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি, মনে হয়েছিলো স্বপ্ন দেখছি। ভেঙে যাওয়া ঘুম কেমন করে আবার জোড়া দেবো ভাবতে ভাবতেই টের পেলাম কেউ একজন খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছে।

সম্ভবত ঘরে চোর ঢুকেছে, কোন না কোন ভাবে দরজা খুলে ঢুকে পড়েছে কেউ। এখন যদি টের পায় আমি জেগে গিয়েছি তাহলে আর রক্ষা নেই। চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে পড়ে রইলাম। জিনিসপত্র যায় যাক, বেঘোরে প্রাণটা হারাতে চাইনা।

কিন্তু চোরটা যেন কেমন! সেই তখন থেকে কেবল শ্বাস ফেলে যাচ্ছে- নড়ছে না, হাঁটছে না, কোন কিছু ধরছে বলেও মনে হচ্ছে না। যা হয় হবে ভেবে বিকট একটা চিৎকার দিয়ে শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠলাম। আমার হাতে একটা বেসবল ব্যাট। সিনেমায় প্রায়ই দেখি একলা থাকা লোকেরা এই জিনিস সাথে নিয়ে ঘুমায়। কী ভেবে যেন একদিন আমিও কিনে এনেছিলাম একটা।

কিন্তু কই, কেউ তো নেই! ঘরের ভেতর শুধু আমি আর আমার ঘুমবাতির সবুজাভ আলো। কী ভয়টাই না পেয়েছিলাম শুধু শুধু! আরেকটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো আমার। টলতে টলতে রান্না ঘরে ঢুকে ঢকঢক করে প্রায় একজগ পানি খাওয়ার পর বুকের ধড়ফড়ানিটা কমে এলো। বিছানার দিকে পা কেবল বাড়িয়েছি, মনে হলো কেউ একজন খুক খুক করে কাশছে।

শব্দটা আসছে আমার টেবিলের দিক থেকে। কাঁপতে কাঁপতে দেয়াল হাতড়ে বাতিটা জ্বালিয়ে দিতেই সবকিছু আবার আগের মতো। কোন শব্দ নেই। আমার হেলুসিনেশন হচ্ছে নাকি! এভাবে আর যাই হোক ঘুমনো যায় না। তারচে বরং বই পড়ি, রাত দুপুরে টিভি দেখতে আমার ভালো লাগে না।

জেরোম কে জেরোমের ‘থ্রি মেন অন এ বোট’ বইটা কুইবেক ট্রিপে নিয়ে গিয়েছিলাম পড়বো বলে। আধাআধি শেষ করে রেখছি। ফেরার পর নানান ঝামেলায় বইটা আর ধরা হয়নি।

বইয়ের খোঁজে ব্যাকপ্যাক খুলে উঁকি দিতেই ভেতর থেকে সাইফুল ভাই আমার দিকে তাকিয়ে খুব চিন্তিত গলায় বললেন,

“বুঝলেন রুবেন, সেই কখন থেকে চেষ্টা করছি নিশ্বাস নিতে! কিন্তু কেন যেন বাতাসটা বুক অবধি পৌঁছুচ্ছে না!”

তীব্র আতংকে মূর্ছা যাবার দশা আমার। পারলে একটা চিৎকার দিতাম। কিন্তু পারছি না। চিৎকারটা বুক থেকে গলায় এসে থমকে গিয়েছে, কিন্তু মুখ অবধি পৌঁছুচ্ছে না কিছুতেই। নবিশ গল্পকারেরা এইরকম পরিস্থিতিতে লিখে দেন, তারপর ধড়মড় করে ঘুম ভেঙে গেলো আমার, ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠলাম আমি।

“কী হয়েছে রুবেন? আপনাকে এমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন?”

বলতে বলতেই সার্কাসের এক্রোব্যাটদের মতো দুমড়ে মুচড়ে ব্যাককপ্যাক থেকে বেরিয়ে এলেন সাইফুল ভাই। মানে সাইফুল ভাইয়ের মাথা। সে মাথার দুপাশ থেকে অদ্ভুত ভাবে বেরিয়ে রয়েছে তাঁর হাত দুটো। হাচড়েপাঁচড়ে টেবিলের উপর খানিকটা থিতু হয়েই ডাক দিলেন,

“কই, তোমরাও এসো।”

আরও দুটো মাথা, আমার অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়ে একই ভাবে বেরিয়ে এলো। তাদের ঠোঁটে যত্ন করে দেয়া লাল টুকটুকে লিপস্টিক। পাটভাঙা কাপড়ের সাদা নার্সিং ক্যাপ মাথা থেকে টেবিলে নামিয়ে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ওরা।

হাসি যে এমন রক্ত হিম করা হতে পারে আমি জানতাম না। গলার কাছে আটকে থাকা চিৎকারটা এবার বেরিয়ে এলো। বেসবল ব্যাটটা হাতেই ছিলো, অসুরের মতো পিটিয়ে থেঁৎলে দিলাম মাথা তিনটিকে।

কতক্ষণ পিটিয়েছি বলতে পারবো না। অনেকক্ষণ নিশ্চয়ই। আমার টেবিলের উপরটা রক্ত-মান্স-মগজে থকথক করছে।

করিডোর জুড়ে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ। আশেপাশের ফ্ল্যাটের মানুষজন সব চলে এসেছে আমার চিৎকার শুনে। কী বলবো তাদের! টেবিলের উপর তিনটে থ্যাঁতলানো মাথাই বা লুকাবো কোথায়!

ভয়, আতংক, দুর্ভাবনা সব মিলিয়ে পাগল হবার জোগাড় আমার। দরদর করে ঘামছি, তৃষ্ণায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে। পানি, একটু পানি খাওয়া দরকার।

রান্না ঘরে ঢুকতেই দেখি গ্লাস হাতে সাইফুল ভাই দাঁড়িয়ে।

“নিন, পানি খেয়ে নিন এক গ্লাস। যা পরিশ্রম গেলো! আপনি ভাই মানুষ না রুবেন। এমন করে পেটায় কেউ?”

কীভাবে যে দৌড়ে বেরুলাম রান্নাঘর থেকে, বলতে পারবো না। দরজা খুলে করিডোরে বেরিয়ে দেখি সেখানে বিরাট জটলা। আমার হাতের বেসবল ব্যাটটা দেখে সভয়ে পিছিয়ে গেলো সবাই।

লিফটের জন্য অপেক্ষা না করে সোজা চলে গেলাম সিঁড়ির দিকে। এই বিল্ডিঙে আর এক মুহূর্ত নয়।

সিঁড়ির দরজাটা খুলতেই ভ্যাপসা একটা গন্ধ আছড়ে পড়লো নাকে। এই অভিজ্ঞতা আমার নতুন নয়। বহুতল ভবনে পারতপক্ষে কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেনা। সারাক্ষণ দরজা বন্ধ থাকায় বাতাস চলাচল কমে গিয়ে একটা গুমোট ব্যাপার তৈরি হয়। এই বিল্ডিঙের মতো পুরনো ভবন হলেতো কথাই নেই। এক হাত দিয়ে নাক চেপে তরতর করে নামতে শুরু করলাম।

নামছি তো নামছিই, কিন্তু পথ যেন আর ফুরোয় না। মাথার উপর টিম টিম করে জ্বলতে থাকা বাতিগুলোও কমজোরি হয়ে এসেছে অনেক। ঘোলাটে আলোয় রেলিং হাতড়ে ছুটছি আমি, ছুটতে ছুটতে হাঁপ ধরে গিয়েছে বুকে। পেটের কোনে একটা চিনচিনে ব্যাথা, উরুর পেশিতে খিঁচ, হাঁটু-গোড়ালির গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা- দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে ছুটছি। কিন্তু কতো আর পারে মানুষ! শেষমেশ রেলিঙে হাত রেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। বুকের খাঁচার নিচে লুকিয়ে থাকা হৃৎপিণ্ডটা পাগলা ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে খুব। পা ভাঁজ করে বসতে গেলাম, অমনি আমার জামাটা পেছন থেকে খামচে ধরলো কেউ। শুধু যে খামচে ধরেছে তাই নয়, টানছেও। ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু যে ধরেছে তার শক্তি আমার চেয়ে কম নয়।

অন্য সময় হলে ভয় পেয়ে যেতাম। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে যা ঘটে গিয়েছে তারপর থেকে ভয় জিনিসটা মন থেকে মুছেই গিয়েছে একরকম। বেসবল ব্যাটটা এক হাতে শক্ত করে ধরে সপাটে চালিয়ে দিলাম পেছনের দিকে। সাথে সাথেই গোটা পৃথিবীটা যেন দুলে উঠলো। যেন একশ গির্জার ঘণ্টা একসাথে বেজে উঠেছে আমার কানের কাছে।

ব্যাটটা হাত থেকে খসে গিয়ে ছিটকে পড়েছে উল্টোদিকে। কোনমতে সামলে নিয়ে আরেকটা ঝটকা দিলাম। ফড়ফড় করে ছিঁড়ে গেলো গায়ের জামা। আমি মুখ থুবড়ে পড়লাম মেঝেতে।

কিন্তু মেঝেটা এমন নরম আর ভেজা ভেজা ঠেকছে কেন? মুখে, গলায় এ কিসের সুড়সুড়ি! সিঁড়িটা কোথায় গেলো?

হালকা একটা বাতাস বইছে আমার চারপাশ জুড়ে। ভ্যাপসা গন্ধটা আর নেই।এই ভয়ানক দুঃসময়েও, কেন জানিনা, খুব আরাম আরাম একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে আমার শরীরে, প্রতিটি কোষে, প্রতিটি স্নায়ুতে।

তিন।।

“রুবেন আহমেদ, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?”

কেউ একজন কথা বলছে। প্রতিটি উচ্চারণ স্পষ্ট, কিন্তু মনে হচ্ছে এই বুঝি হারিয়ে গেলো! মানুষের শ্রবণ ক্ষমতার প্রায় শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থেকে কেউ কথা বললে যেমন শোনায়। ঠিক ডানে-বামে কিংবা সামনে-পেছনে নয়, কথাটা আসছে উপর থেকে, অনেক অনেক অনেক উপর থেকে।

“অনুগ্রহ করে আপনার বাঁ হাতটা তুলুন একবার।”

আমি বাঁ হাতটা তুললাম।

“চমৎকার! এবারে ডান হাতটা তুলুন।”

আমি ডান হাতটাও তুললাম।

“বাহ! দারুণ হচ্ছে। এবার মন দিয়ে শুনুন আমার কথা। প্রথমে বাম পা, তারপর ডান পা, একটা একটা করে দুটো পা ই উপরে তুলে দিন।”

আমি বাধ্য ছেলের মতো দুই পা উপর দিকে তুলে দিলাম।

“দুর্দান্ত! হাত পা নামাবেন না কিন্তু। এবার পুরো শরীরটা আলতো করে উঠিয়ে দিন উপর দিকে।”

কী যা তা বলছে! হাত পা তুলে রেখে শরীরটা উঠিয়ে দেবো কেমন করে?

“আমি বুঝতে পারছি আপনি কী ভাবছেন। এতো না ভেবে চেষ্টা করে দেখুনই না একবার।”

আমি চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু ব্যাপারটা সোজা নয়। সম্ভব নয়।

“হুম, সড়গড় হতে আরও সময় লাগবে। প্রথম দিকে এমনই হয়। ঠিক আছে আমি বরং আপনাকে একটু সাহায্য করি।”

নিচ থেকে মৃদু একটা ধাক্কা অনুভব করলাম। সাথে সাথে শরীরটা পালকের মতো হালকা হয়ে গেলো।

“এইতো পেরেছেন! এবার ধীরে ধীরে চোখ মেলুন।”

আমি চোখ মেললাম। একটা নীল আকাশ। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ। মেঘেদের গা ছুঁয়ে ভেসে বেড়াচ্ছি আমি। জলের স্পর্শে থেকে থেকে ভিজে যাচ্ছে আমার মুখ। কী যে ভালো লাগছে! যদি স্বপ্ন হয়, তাহলে মানতেই হবে অদ্ভুত সুন্দর একটা স্বপ্নে ডুবে রয়েছি আমি।

ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি।

ডান দিকে, দশ বারো হাত দুরে রুপোলী রঙের একটা পিলার চোখে পড়লো। সেটার গা ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে কালো রঙের ছোটো ছোটো হাতল, হাতলগুলোর প্রান্ত বিভিন্ন দিকে বাঁকানো। ঠিক যেন একটা মাংকি পোল, বাচ্চাদের খেলার মাঠে যেমন থাকে। পিলারটা মেঘের সীমানা পেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছে আকাশে।

এবার নিচের দিকে তাকালাম।

একরাশ মেঘ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না আমার।

“ভয় নেই। আপনি সাঁতার জানেন তো? না জানলেও সমস্যা নেই। স্রেফ ধরে নিন আপনি সাঁতার কাটতে পারেন। সাঁতার কেটে সোজা পিলারটার কাছে চলে যান।”

সাঁতার আমি জানি না । তবে হাত পা ছুড়ে ঠিক ঠিক পিলারটার কাছে পৌঁছে গেলাম। আমার জামার ছেঁড়া অংশটা ঝুলে রয়েছে একটা হাতলের প্রান্তে।

“আপনার সামনে দুটো রাস্তা রয়েছে। চাইলে পিলার বেয়ে উপর দিকে উঠে আসতে পারেন। আবার নেমে যেতে পারেন নিচে। আপনার যা ইচ্ছে।”

যদিও জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর, যদিও মাথার উপর হাতছানি দিয়ে ডাকছে ঘন নীল আকাশ, কেন যেন মনে হলো আমাকে নিচেই যেতে হবে। সাবধানে হাতল ধরে ধরে নামতে শুরু করলাম। পিলারটা সম্ভবত ধাতব, তবে লোহা কিংবা অন্য কোন পরিচিত ধাতু দিয়ে তৈরি নয় বলেই মনে হচ্ছে। দারুণ মসৃণ এর গা, একটা আরামদায়ক উষ্ণতা ছড়িয়ে রয়েছে সেই গা জুড়ে। একটার পর একটা মেঘের স্তর পেরিয়ে নেমে চলেছি আমি। কে জানে কতক্ষণ ধরে নামলাম। হঠাৎ মেঘ কেটে গিয়ে পরিষ্কার হয়ে গেলো চারিদিক। নিচে দিগন্ত জোড়া একটা মাঠ। মাঠের একপাশে বয়ে চলেছে কিশোরীর চুলের ফিতের মতো সরু এক চিলতে একটা নদী।

নেমে আসতেই পা ডুবে গেলো নরম ঘাসে। পায়ের কাছেই আমার বেসবল ব্যাট। নিচু হয়ে ব্যাটটা তুলে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কোথায় আছি, কেন আছি, কী করবো, কোনদিকে যাবো বুঝতে পারছিনা কিছুই!

“তারপর, কেমন লাগছে এখানে? জায়গাটা ভারি সুন্দর, তাইনা?”

চমকে উঠলাম। একেবারে ঘাড়ের পেছন থেকে এসেছে প্রশ্নটা। মেঘের রাজ্য শোনা সেই কণ্ঠস্বর।

“আপনি কি কথা বার্তা কিছু বলবেন না বলে ঠিক করেছেন?”

পেছন দিক থেকে ঘুরে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন একজন মানুষ।

সমুদ্র সৈকতের সেই ইন্ডিয়ান লোকটা।

আমি হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললাম,

“আপনি এখানে!”

“এতে অবাক হবার কী আছে?”

“না মানে, আপনি তো ছিলেন সেই সৈকতে। আর আমি ছিলাম আমার অ্যাপার্টমেন্টের সিঁড়ি ঘরে। ঠিক বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে। আমি এখানে এলাম কেমন করে, আর আপনিই বা এখানে কী করছেন? এই জায়গাটা কোথায়? আপনি আসলে কে?”

ইন্ডিয়ান লোকটা মিটিমিটি হাসছেন। হাসি শেষ করে বললেন,

“আপনার সাথে এর আগে আমার কখনো দেখা হয়নি। কোন সৈকতের কথা বলছেন আমি জানিনা। যে জায়গাটায় আমরা দাঁড়িয়ে আছি তার নাম প্লে গ্রাউন্ড। দেখতে পাচ্ছেন না চারিদিকে কেমন সুন্দর খেলার মাঠ, হাতের কাছে মাংকি পোল। কিছুদূর গেলেই দোলনা, চরকি সব পাবেন। আমার নাম ইকারুস, আমি একজন টিকিট কালেক্টর।”

“কিসের টিকিট!”

“প্লেগ্রাউন্ডের টিকিট। দুটো স্তর রয়েছে এখানে। এটা নিচের স্তর। এই স্তরে টিকিট ছাড়াই খেলতে পারবেন আপনি। তবে উপরের স্তরে যেতে হলে টিকিট দেখাতে হবে। আর মাঝখানের স্তরটা, ওই যে মেঘের উপর যেখানে আপনি অপেক্ষা করছিলেন, ওটা ওয়াটিং জোন। মাংকি পোলটা হচ্ছে এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাবার রাস্তা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন অসংখ্য মাংকি পোল রয়েছে এখানে। খেলোয়াড় তো আর একজন দুজন নয়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসে তারা। কেউ আপনার মতো নতুন, কেউ পুরনো।”

“আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না ইকারুস। ভয়ংকর একটা বিপদে থেকে পালাতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু কেমন করে যেন এই প্লেগ্রাউন্ডে ঢুকে পড়েছি।”

“কেমন করে নয়। রীতিমতো টিকিট কেটে এখানে এসেছেন আপনি। এই তো আমার খাতায় লেখা রয়েছে, দেখুন না!”

বহুকালের পুরনো, চামড়ায় বাঁধানো জীর্ণ একটা খেরোখাতা আমার সামনে মেলে ধরলেন ইকারুস। অনেক নামের ভিড়ে জ্বলজ্বল করছে আমার নাম। পাশে লেখা, ৪০০ ডলার। বন্ধনীতে চারদিন আগের একটা তারিখ দেয়া।

“চারশ ডলার! চার দিন আগে চারশ ডলার দিয়ে একটা জিনিষই কিনেছি আমি। একটা পাথর। ঠিক আপনার মতো দেখতে একজনের কাছ থেকে।”

“জি, ওটাই আপনার টিকিট। আর ওই লোকটা যে আমার মতো দেখতে তার একটা কারণ রয়েছে।”

“কারণটা জানতে ইচ্ছে করছে।”

“এটা আমাদের ইউনিফর্ম।”

“কোনটা!”

“এই চেহারাটার কথা বলছি।”

“আমি ধরতে পারছি না ইকারুস।”

“সব জানতে পারবেন। সময় তো আর ফুরিয়ে যাচ্ছে না। আগে খেলাটা শুরু হোক!”

আমরা হাঁটতে হাঁটতে নদীটার পারে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে অসংখ্য মানুষ, কেউ কেউ আমার মতোই হতবিহ্বল, কেউ কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে চনমনে ভাব নিয়ে। এবং এঁদের প্রত্যেকের সাথে একজন করে ইকারুস। বেশ উৎসব উৎসব ভাব চারিদিকে।

আমার কানের কাছ ফিসফিস করে বললেন ইকারুস,

“এখন ভারি মজার একটা ব্যাপার হবে রুবেন।”

“কী ব্যাপার?”

“ইকারুসদের কাছে টিকিটগুলো জমা দিয়ে আপনারা দৌড়ে যাবেন যার যার মাংকি পোলের কাছে। তারপর যা হবে……সে আপনি সময় হলেই দেখবেন।”

আমার চারপাশে যেন হাজারো মৌমাছির গুঞ্জন। ইকারুসেরা টিকিট গুলো সংগ্রহ করে একটা জায়গায় জমিয়ে রাখছেন। টিকিট মানেই যে কেবল পাথর তা কিন্তু নয়।

“কই, আপনার টিকিটটা দিন রুবেন। পিছিয়ে পড়বেন তো!”

“আমার টিকিটটা যে সংগে নেই ইকারুস। ওটা আছে একটা ব্যাগপ্যাকে। ব্যাকপ্যাকটা আছে আমার ঘরের টেবিলে। আর টেবিলটার এই মুহুর্তে যা অবস্থা! পাথরটা কেনার পর থেকে একটার পর একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছি আমি। ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটে ঘটে চলেছে আমার জীবনে।”

ইকারুস হো হো করে হেঁসে উঠলো।

“আপনাকে টাইপ জেড ধরিয়ে দিয়েছে দেখছি, হা হা হা।”

“টাইপ জেড!”

“সব টিকিট এক জাতের নয়। সে অনেক জটিল ব্যাপার। পরে সময় করে বুঝিয়ে দেবো। এখন চলুন আপনার বাসায় গিয়ে টিকিটটা নিয়ে আসি। সময় চলে যাচ্ছে।”

আমি কিছু বলার আগেই চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো।

নিকষ কালো অন্ধকারে ভেসে এলো ইকারুসের গলা।

“আমরা আপনার বাসায় এসে গিয়েছি। আলোটা জ্বালিয়ে দিন রুবেন।”

দেয়াল হাতড়ে সুইচটা পেয়ে চেপে দিতেই হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে ধাঁধা লেগে গেলো চোখে। চোখ বন্ধ করে আবার খুলতেই যা দেখলাম তা বিশ্বাস করতে পারছি না। টেবিলটা একেবারে ঝকঝকে তকতকে। ফিসফিস করে ইকারুসকে বললাম,

“এই ঘরে খুব খারাপ একটা ঘটনা ঘটেছিলো। কোন চিহ্নই তো দেখছিনা এখন।”

“টাইপ জেড রুবেন, টাইপ জেড। যা দেখেছেন তার কিছুই সত্য নয়, যা ঘটেছে তার কিছুই আসলে ঘটেনি। কই, টিকিটটা দিন।”

ব্যাগপ্যাক খুলে পাথরটা হাতে নিতেই কেমন যেন খটকা লাগলো। মনে হচ্ছে এ পাথর সে পাথর নয়। যদিও দেখতে হুবহু একই রকম। ইন্ডিয়ানটার কাছ থেকে কেনা পাথরটা ছিলো দারুণ ভারি। আর এটা অস্বাভাবিক রকম হালকা। আর, আর…আর………

“একি! এটায় তো প্রাণ নেই! কী করেছেন আপনি রুবেন? সৈকতের ইকারুস কি কিছুই বলেনি আপনাকে?”
“বলেছিলো পাথরটায় তিন দিন পর আট ফোঁটা পানি দিতে।”

“পাথর নয় রুবেন পাথর নয়! প্লে গ্রাউণ্ডের টিকিট, যেমন তেমন টিকিট নয়, টাইপ জেড। আপনি কি পানি দিয়েছিলেন?”

ইকারুসকে কেমন যেন বিপন্ন দেখাচ্ছে। আমার হাতের পাথরটা, না না, পাথর নয়, প্লে গ্রাউণ্ডের টাইপ জেড টিকিটটায় অনেকগুলো ফাটল। ইকারুসের পা টলমলে, টাইপ জেড ভাঙছে, ইকারুস মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে, টাইপ জেড গুঁড়ো গুঁড়ো। আমার হাতের আঙুল থেকে ঝরে ঝরে পড়ছে ধুলোর গুঁড়ো। খোলা জানালা দিয়ে পিছলে আসা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ধুলোর একটা ঘূর্ণি উঠলো ঘরে।

চার।।

“আপনার ধারণা পালক গুলো নকল!”

সাইফুল সাহেবের প্রশ্ন শুনে খানিকটা থমকে গেলাম আমি। ভদ্রলোক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, মুখের উপর এভাবে না বললেই বোধহয় ভালো করতাম।

“মিছে মিছিই রেগে যাচ্ছেন সাইফুল ভাই। আমার কী ধারণা সেটা এখানে মুখ্য নয়।”

“মুখ্য তাহলে কী, শুনি?”

একবার ভাবলাম বলি যে বিষয়টা ধাপ্পাবাজির। পালক গুলো আসল কী নকল সেটার চেয়েও বড় কথা দামের জায়গায় লিখে রেখেছে ‘একশ ডলার থেকে শুরু’। কিন্তু সবসময় সব কথা বলা যায় না। আমি, হঠাৎ অবাক হয়ে গিয়েছি এমন ভান করে বললাম,

“ঘুঘুগুলোর কাণ্ড দেখেছেন সাইফুল ভাই! একদম আমাদের পায়ে পায়ে ঘুরছে, কোনো রকম ভয়ডর নেই।”

সামনেই সমুদ্র, আমরা দাঁড়িয়ে আছি সৈকতে, চারপাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে একদল ঘুঘু।

সাইফুল সাহেব একবার আমার দিকে আরেকবার পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,

“ঘুঘু কোথায় রুবেন! একদল মুরগির ছানা গায়ে নকল পালক লাগিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আপনি তো আসল নকল ভালো চেনেন, আপনার সাথে তাই রসিকতার চেষ্টা ওদের।”

নাহ দারুণ রেগে গিয়েছেন ভদ্রলোক। আমি কাঁচুমাচু কণ্ঠে বললাম,

“মাফ করে দিন ভাই। ভুল হয়ে গিয়েছে। চলুন একবার কাছে গিয়ে দেখেই আসি। বল্ড ঈগলের পালক বলে কথা। পছন্দ হলে না হয় কিনলেনই আপনি। আসল নকলে কী এসে যায়? শখ বলে কথা। ভয় নেই, আমি এই নিয়ে অফিসে কোন গসিপ করবো না। হা হা হা।”

টুরিস্ট অফিসের বারান্দায় ঈগল পাখির একগাদা পালক বিছিয়ে বসে রয়েছে একজন মানুষ। পরনে হাতে বোনা রঙিন জামা, গলায় ঝুলছে ছোটো বড় বিভিন্ন আকৃতির পাথর দিয়ে বানানো অদ্ভুত একটি মালা। পাশেই ঝুলছে একটা পোস্টার, সেখানে লেখা ‘বল্ড ঈগলের পালক’। কিছুক্ষণ আগে হেঁটে যেতে যেতে ওটা দেখেই হেসে উঠেছিলাম। সেই থেকে এতো তর্ক।

মানুষটা ইন্ডিয়ান। ইন্ডিয়ান ইন্ডিয়ান নয়, ক্যানাডার কোন এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের কেউ। আমাদেরকে দেখেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“সুপ্রভাত, পালক কিনবে তো?”

সাইফুল ভাই প্রবল উৎসাহ নিয়ে পালকগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন। আর আমি দেখছি ইন্ডিয়ান লোকটাকে। মনে হচ্ছে এই লোকটাকে আমি চিনি।

হঠাৎ পাখির ডাকে চমক ভাঙলো। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটা ঈগল। উড়তে উড়তে উঠে যাচ্ছে আরও উঁচুতে। সূর্যকে ছুঁয়ে ফেলবে যেন। যেমন ছুঁয়েছিল ইকারুস। প্রথম আকাশচারী মানব, হারিয়ে যাওয়া সময়ের হারিয়ে যাওয়া গ্রীক তরুণ। যাকে নিয়ে বাংলাদেশের কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন অপূর্ব একটি কবিতা, ইকারুসের আকাশ।


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

চমৎকার হৈচ্চে হাসি

(শেষ প্যারাগ্রাফটা অতিরিক্ত লেগেছে।)

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ এক লহমা। আমাদের এক বড় ভাই বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ৯ এর দশকের কিংবদন্তিদের একজন তিনি। তো সেই তাপস ভাই ভাইবা মডেল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রবল কোপের শিকার হলেন একবার। একজন অধ্যাপক বললেন, "তাপস, দোতলায় তো কয়েকটা পিলার মিসিং আছে।" তাপস ভাই বিনয়ের সাথে বললেন, "টেনশন কইরেনা স্যার, লাগলে দিয়া দিমু"। আরেকজন অধ্যাপক মডেল দেখে বললেন, "কিন্তু নিচতলায় চারটা পিলার বেশি দিয়েছো কেন?"

তাপস ভাই কোন জবাব খুঁজে না পেয়ে বললেন,

"দিয়া দিলাম স্যার, পোক্ত অইবো"।

আমার শেষ প্যারাগ্রাফটাও অমন।

---মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার লেখা পাওয়া গেল। যথারীতি অতীন্দ্রিয়।

জে এফ নুশান

সোহেল ইমাম এর ছবি

অনেকদিন ধরে ননফিকশনেই আটকে ছিলাম, গল্প-উপন্যাস পড়ি পড়ি করেও পড়া হয়না। আপনার গল্পটায় একটা ডুব দিতেই দেখি ওই পারে চলে এসেছি। গুরু গুরু

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।