'এইযে শুনছেন! এদিকে! শুনতে পাচ্ছেন? এইযে এদিকে। '
লোকটা তার সংকেত ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে হাতের ছোট পতাকাটা নাড়ছিল। আমার ডাক শুনে তিনি উপরে তাকানোর বদলে পেছন দিকে ঘুরলেন। অথচ জায়গাটার বৈশিষ্ট্যই এমন যে ডাক শুনে সেটা কোথা থেকে আসছে অনুমান করতে সাধারণত ভুল হবার কথা নয়। উঁচু জমির মধ্যে দিয়ে মাটিতে গভীর খাদ কেটে রেললাইন চলে গিয়েছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি উঁচু জমিতে; লোকটা যেখানে দাঁড়িয়ে ঠিক তার মাথার উপর। অথচ আমার ডাক শুনে তিনি উপরে না তাকিয়ে পেছনের অন্ধকার সুড়ঙ্গ যার মধ্যে দিয়ে রেললাইন চলে গিয়েছে সেইদিকে ঘুরলেন। তার এই পেছনে ঘোরার ভঙ্গিতে কেমন একটা অদ্ভুত কিছু ছিল যেটা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। উপর থেকে অবশ্য তাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তবে মনে হল বেশ ছোটখাট চেহারার মানুষ। সূর্য অস্ত যাবার আগ মুহূর্তে তার একফালি রশ্মি বেশ রাগান্বিত ভাবে আমার চোখের উপর ফেলে চোখ ধাঁধিয়ে দিল। আমি হাত দিয়ে চোখ ঢেকে আবার লোকটাকে ডাকলাম - 'এইযে শুনছেন! এদিকে! শুনতে পাচ্ছেন? এইযে এদিকে দেখুন। '
তিনি এবার সামনে ঘুরে ধীরে ধীরে উপর দিকে তাকিয়ে আমায় দেখতে পেলেন।
'এখান থেকে নীচে নামার কোন রাস্তা আছে কি? আপনার সাথে একটু কথা বলতাম। '
উনি কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি আবার প্রশ্নটা করার আগেই আকাশ বাতাস মাটি সব একসাথে কাঁপিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে প্রচণ্ড শব্দে একটা ট্রেন বেরিয়ে গেল। ধোঁয়া কেটে চারিদিক দৃশ্যমান হবার পর নীচে তাকিয়ে দেখলাম উনি হাতের পতাকাটি গুটিয়ে রাখছেন।
আমি পুনরায় আমার প্রশ্নটি করলাম। উনি একমুহূর্ত চুপ করে হাতের পতাকাটি দিয়ে আমার থেকে দু-তিনশ গজ দূরে একটা জায়গায় দিকনির্দেশ করলেন।
'ধন্যবাদ।', বলে আমি সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একটা পথ এঁকেবেঁকে নীচের দিকে নেমে গেছে। উপরের জমিটা বেশ খাড়া। আর নামার পথটিও সহজ নয়। নরম পাথরের উপর পা দিলেই ভেঙে যাচ্ছে। তারমধ্যে কাদায় পিচ্ছিল। সব মিলিয়ে নামতে বেশ সময় লাগলো। লোকটা সম্ভবত এই অসুবিধের কথা ভেবেই নামার রাস্তা বলতে ইতস্তত করছিল।
নীচে নেমে দেখলাম তিনি পাশের সরু জমির বদলে একদম রেললাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। যেন আমার আসার অপেক্ষাতেই আছেন। তার বাম হাত বাম গালে রাখা আর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের কনুইটিকে ধরে আছেন। চোখেমুখে এমন গভীর চিন্তা মগ্ন দৃষ্টি নিয়ে আমার অপেক্ষা করছেন দেখে আমি প্রথমে কিছুটা থমকে গেলাম। তারপর ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেলাম।
যেমনটা ভেবেছিলাম তেমন ছোটখাট মানুষটি। ঘন ভ্রুঁ। মুখমণ্ডল কালো গোঁফ দাড়ির জঙ্গলে ঢাকা। এমন জনমানবহীন শুনশান কর্মস্থল পৃথিবীতে আর একটিও আছে কি না সন্দেহ। রেললাইনের দুই পাশে খাড়াই উঁচু স্যাতঁস্যাতে পাথরের দেয়াল উপরের উঁচু জমিতে গিয়ে মিশেছে। দু দেয়ালের মাঝে কোন মতে এক চিলতে আকাশ দেখা যায়। একদিকের রেললাইন এভাবেই যতদূর দেখা যায় চলে গিয়েছে। অন্যদিকে একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মুখ দেখা যাচ্ছে যার সামনে একটা লালবাতি জ্বলছে। সেই সুড়ঙ্গ এতটাই অন্ধকার আর তার মধ্যে থেকে বয়ে আসা বাতাসে এমন এক আদিম গন্ধ যে গা ছমছম করে ওঠে।
আমি হাটতে হাটতে একদম লোকটার কাছে চলে যাচ্ছিলাম। উনি একটা হাত তুলে আমাকে একটু দূরেই থামিয়ে দিলেন।
'এমন নির্জন জায়গায় কারো কর্মস্থল হতে পারে আমি আগে কখনো দেখিনি। উপরের রাস্তা ধরে যেতে যেতে হঠাৎ আপনাকে চোখে পড়লো। তাই ভাবলাম কিছুক্ষন কথা বলি। আশাকরি বিরক্ত করছি না। '
আমার মতো দর্শনার্থী নিশ্চয়ই খুব বিরল ঘটনা। বাইরের মানুষ তার কাজের সমন্ধে কৌতুহলী হবে এমনটাও নিশ্চিত খুব একটা হয় না। আমিও সাধারণত অপরিচিত মানুষের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলি না। কিন্তু তার মধ্যে কিছু একটা ছিল যা আমায় প্রচণ্ড ভাবে আকর্ষণ করছিল।
তিনি আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আবার পেছনে ঘুরে সুড়ঙ্গের সামনে জ্বালানো লাল আলোর দিকে তাকালেন। যেন ওখানে কিছু একটা দেখার কথা ছিল কিন্তু উনি দেখতে পাচ্ছেন না। তারপর আবার আমার দিকে ঘুরলেন।
'ওই লাল আলোও তো আপনারই দায়িত্বে। তাই না!'
কেমন অস্বাভাবিক মৃদুগলায় জবাব এলো, 'আপনারতো ভালোই জানার কথা ওটা আমার দায়িত্বে'।
লোকটার রকমসকম দেখে হঠাৎ মনের মধ্যে কু ডাকতে লাগলো। এইরকম চেহারা, ওইরকম দৃষ্টি। লোকটা কি আদতেই কোন রক্তমাংসের মানুষ। নাকি কোন অশরীরী প্রেতাত্মা!
আমি পিছিয়ে চলে যাবো কি না ভাবছি কিন্তু দেখি উল্টো লোকটার চোখেই প্রচন্ড ভয়ের ছাপ।
জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম, 'আপনি এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছেন মনে হচ্ছে ভুত দেখছেন।'
'আমার মনে হচ্ছিল আমি আপনাকে আগেও দেখেছি।'
'কোথায় দেখেছেন?'
'ওইখানে।', তিনি সুড়ঙ্গের সামনের লাল আলোর দিকে নির্দেশ করে বললেন।
'ওইখানে?'
' হ্যাঁ। ', উনি আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললেন।
'ওইখানে আমি কী করতে যাবো ভাই! আমি এর আগে কখনো এজায়গায় আসিনি। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। '
'আমার মনে হলো যেন আমি আপনাকে ওখানে দেখেছি।', লোকটা বললো। তার ব্যাবহার এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এলো। আমিও স্বস্তি বোধ করলাম।
তার কাজে যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। একদম ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করতে হয়। এজন্য সর্বদাই তাকে সতর্ক থাকতে হয়। অবশ্য কাজের পরিমাণ বেশি নয়। আর শারীরিক পরিশ্রম নেই বললেই চলে। কাজের মধ্যে সময় মত সঠিক সংকেত দেখানো, সংকেতের আলো পরিবর্তন করা, মাঝে মাঝে হাতল ঘুরিয়ে এক লাইন থেকে অন্য লাইনে সংযোগ দেয়া। বাকি সময়টা একদমই অলস বসে কাটাতে হয়। সেই অবসর সময়টা তিনি নিজের মত কাজে লাগান। নিজে নিজে নতুন একটা ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন। স্কুলে থাকতে অঙ্কে কাঁচা ছিলেন। তাই মাঝে মাঝে এলজেব্রা, ভগ্নাংশ এসবও অভ্যাস করেন।
কিন্তু এরকম স্যাঁতসেঁতে জায়গায় সবসময়ই কি তাকে বসে থাকতে হয়? সেটা নির্ভর করে কাজের উপর, উনি জানালেন। মাঝে মাঝে আবহাওয়া ভালো থাকলে উনি উপরের উঁচু জমিতে গিয়ে কিছুটা হেটে আসেন। কিন্তু যেকোন সময় টেলিগ্রাফের ঘন্টা বেজে উঠতে পারে। তাই বেশিরভাগ সময় তার এখানেই কাটাতে হয়।
তিনি আমাকে তার সংকেত ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসালেন। সেখানে ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে। ঘরের মধ্যে একটা টেবিল আছে তার উপরে একটা খাতায় তাকে নির্দিষ্ট তথ্য টুকে রাখতে হয়। আর আছে একটা টেলিগ্রাফ মেশিন। যেটায় ডায়াল করে উনি সংকেত পাঠান। তার কাছে সংকেত এলে টেলিগ্রাফের ঘন্টা বেজে ওঠে।
আমার কাছে তিনি জীবনের অনেক কথা খুলে বললেন। বেশ পড়ালেখা করা শিক্ষিত ব্যাক্তি। অন্তত এই কাজের জন্য যতটা পড়ালেখা জানা দরকার তার তুলনায় তিনি বেশ উচ্চশিক্ষিত। যুবক বয়সে ( তাকে দেখে অবশ্য তিনি যে কোনদিন যুবক ছিলেন একথা বিশ্বাস করা শক্ত) দর্শনের ছাত্র ছিলেন। কুসঙ্গে পড়ে পড়াশোনা শেষ করেন নি। সেইজন্য জীবনে খুব বেশি কিছু করে উঠতে পারেননি। অবশ্য এই নিয়ে তার আক্ষেপও নেই। তিনি নিজের মতো জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছেন। নতুন করে শুরু করার জন্য এখন অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।
শান্ত ধীর গলায় নিজের কথা বলছিলেন। এর মধ্যে কয়েকবার টেলিগ্রাফের ঘন্টা বাজলো। তিনি সংকেত পড়ে সেই অনুযায়ী জবাব পাঠালেন। মাঝে একবার ট্রেনের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পতাকা দেখিয়ে সংকেত দিতে হল। তারমধ্যেই ড্রাইভারের সাথে হাত নেড়ে কুশল বিনিময় করলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি বেশ দায়িত্বের সাথে নিজের কর্তব্য পালন করেন এবং এই কাজের জন্য তার উপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।
একটা ব্যাপার খেয়াল করে অবশ্য একটু অবাক হলাম। আমার সাথে কথা বলতে বলতে দুবার টেলিগ্রাফের ঘন্টা না বাজা সত্ত্বেও তিনি মেশিনটার দিকে ফ্যাকাশে মুখে তাকালেন। তারপর পরই ঘরের দরজা খুলে বাইরে গিয়ে সুড়ঙ্গের লাল আলোর দিকে তাকালেন। তারপর এমন অদ্ভুত দুশ্চিন্তা মাখা চেহারা নিয়ে ফিরে এসে আমার সামনে বসলেন যেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
বেশ খানিকটা গল্প টল্প করে আমি যাওয়ার জন্য উঠলাম। তাকে বললাম, পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনাকে দেখেও মনে হল আপনি আপনার জীবন নিয়ে বেশ সুখী এবং তৃপ্ত। (অনেকটা ইচ্ছে করেই আমি একথাটা বললাম তিনি উত্তরে কী বলেন শোনার জন্য।)
'সুখী মানুষ ছিলাম স্যার।', তিনি তার নরম মৃদু গলায় বললেন। 'কিন্তু ইদানীং আর আমি ভালো নেই স্যার। ভীষণ বিপদের মধ্যে আছি। '
'কিরকম বিপদ?'
'এক কথায় বলে বোঝনো যাবে না স্যার। আপনি যদি আবার আরেকদিন আসেন তাহলে তখন বলার চেষ্টা করতে পারি। '
' আমার কোনই আপত্তি নেই। খুবই ভালো লাগবে। আগামীকালই আসতে পারি। কখন এলে দেখা হতে পারে?'
'আমার কাজ ভোরবেলা শেষ হবে। আবার কাল রাত ১০টা থেকে ডিউটি। '
'আমি ঠিক ১১টার সময় আসবো।'
তিনি ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে এগিয়ে দেবার জন্য উঠলেন। তার অদ্ভুত মৃদু কণ্ঠে বললেন আমি ঠিক ওই সময় আলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো স্যার। যাতে আপনার পথ দেখতে অসুবিধে না হয়। কিন্তু দয়া করে আমাকে আজকের মতো ডাকাডাকি করবেন না স্যার। আলো দেখলেও ডাকবেন না আর উপরের জমিতে দাঁড়িয়েও ডাকবেন না। '
কথা শুনে গায়ের মধ্যে কেমন শিরশির করে উঠলো। কিন্তু রাজি হয়ে বললাম, 'বেশ তাই হবে।'
'যাওয়ার আগে একটা কথা জিজ্ঞেস করি স্যার! আজ আমাকে অমন করে ডাকছিলেন কেন? '
'কে জানে! অত কিছু ভেবে ডাকিনি। '
'কিন্তু ঠিক ওই কথা গুলোই কেন বললেন? - এইযে শুনছেন, এদিকে তাকান '
'কেন আবার! আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। '
'আর কোন কারণ নেই? '
'আর কী কারণ থাকবে!'
'আপনার কি মনে হয় না যে কেউ আপনাকে দিয়ে ওই কথা গুলো বলিয়েছে?'
'একদম না।'
তিনি আমায় শুভরাত্রি বলে বিদায় জানালেন। হাতের আলোটা উঁচু করে ধরে রইলেন যেন আমার পথ দেখতে অসুবিধে না হয়। রেললাইনের পাশের সরু জমি ধরে এগোতে এগোতে কেমন যেন একটা অস্বস্তি অনুভব করছিলাম। সেই আঁকাবাঁকা পথ ধরে উঁচু জমিতে ওঠা অবশ্য নামার চাইতে সহজ ছিল। তারপর ধীরে ধীরে হেঁটে আমার হোটেলে ফিরে গেলাম।
পরদিন ঘড়ি ধরে ঠিক রাত ১১টার সময় আবার সেই আঁকাবাকা পথের কাছে এসে হাজির হলাম। ভদ্রলোক নীচে আলো ধরে আমার অপেক্ষায় ছিলেন। তার আগেরদিনের অনুরোধ মনে রেখে তাকে আগ বাড়িয়ে কোন ডাকাডাকি করলাম না। একদম মুখোমুখি হবার পর জিজ্ঞেস করলাম, 'এবার কি কথা বলতে পারি?'
'নিশ্চয়ই স্যার। আমার হাতটা ধরুন। ধীরে ধীরে আসুন। '
আমরা পাশাপাশি হেটে তার সঙ্কেত ঘরের দিকে এগোতে লাগলাম। ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আগুনের সামনে বসবার পর উনি খুব আস্তে প্রায় ফিসফিস করে বললেন, 'আমি ঠিক করেছি আপনাকে আমার বিপদের কথা খুলে বলবো স্যার। গতকাল আমি আপনাকে অন্য একজন ভেবেছিলাম। আর সেটাই আমার বিপদ।'
'ভুলে আমায় অন্য কেউ ভেবেছেন সেটা?'
'না সেই অন্য কেউ। আপনাকে দেখে যার কথা ভেবেছিলাম তিনিই আমার বিপদ।'
'কে সে?'
'আমি জানিনা স্যার।'
'আমার মতো দেখতে?'
'জানিনা স্যার। আমি তার চেহারা দেখিনি। তার হাত তার চোখের উপর ঢাকা ছিল। আর ডান হাতটা অস্থির ভাবে নাড়ছিলেন। এইভাবে।'
উনি আমায় অভিনয় করে দেখালেন। সাধারণত কেউ তীব্রভাবে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে এভাবে হাত নাড়ে। 'সে আমায় হাত নেড়ে নেড়ে বলছিল - সরে যান। সরে যান। দোহাই লাগে। রাস্তা ছাড়ুন। '
'একদিন জোছনা রাতে আমি আমার এই ঘরে বসেছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম কেউ ডাকছে - এইযে শুনছেন! এদিকে! শুনতে পাচ্ছেন? এইযে এদিকে। আমি চমকে উঠে দরজা খুলে বাইরে তাকালাম। দেখি কেউ একজন সুড়ঙ্গের ওই লাল আলোর সামনে দাঁড়িয়ে। আমার দিকে হাত নাড়ছে। ঠিক যেভাবে আপনাকে দেখালাম। সে অস্থির গলায় আমাকে বললো -এইযে শুনছেন! এদিকে! এদিকে তাকান। আমি আমার আলোটা হাতে নিয়ে লোকটার দিকে দৌড়ে গেলাম। যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম - কী হয়েছে? কী সমস্যা? লোকটা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। আমি দৌড়ে তার কাছে যেতে লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল। '
'সুড়ঙ্গের মধ্যে চলে গেল?'
'না। আমি সুড়ঙ্গের মধ্যে আরো চার-পাঁচশো গজ দৌড়ে গেলাম। হাতের আলো উঁচু করে চারিদিক দেখলাম। কোথাও কেউ নেই। ফিরে এসে টেলিগ্রাফে দুদিকেই জানালাম একটা সতর্ক সংকেত পেয়েছি। কোথাও গোলমাল থাকলে জানাও। দুদিক থেকেই উত্তর এলো - সব ঠিক আছে। কোন গোলমাল নেই। '
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। সেটা জোর করে উপেক্ষা করে যুক্তি দিলাম কিভাবে জোছনা রাতের আলোছায়া দুর্বল মনের সাথে লুকোচুরি খেলতে পারে। আগেও এরকম অনেক অদ্ভুত উদাহরণ দেখা গিয়েছে। আর সুড়ঙ্গের মধ্যে আসা বাতাস টেলিগ্রাফের তারের সাথে বাড়ি লেগে হয়তো কোন অদ্ভুত আওয়াজ সৃষ্টি করেছে। যেটাকে কারো ডাক বলে উনি ভুল করেছেন। নিজের কাছেই যুক্তি তেমন জোরালো মনে হলো না। আমার সামনে বসা ব্যাক্তি এই নির্জন জায়গায় বহু রাত্রি একা একা বাতাসের শব্দ শুনে কাটিয়েছেন। কোনটা বাতাসের শব্দ তা আমার চাইতে তিনি ভালোই জানেন।
তিনি আমার কথার মাঝে বাধা দিয়ে বললেন, 'আমি এখনো পুরো ঘটনা বলিনি স্যার। '
আমি আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করার জন্য ক্ষমা চাইলাম। উনি বলে চললেন, 'ওই লোকটাকে দেখার ছয় ঘন্টার মধ্যে এই লাইনে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দূর্ঘটনাটি ঘটে। আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যে দূর্ঘটনায় নিহতদের মৃতদেহ ঠিক ওই জায়গাটায় এনে জড়ো করে রাখা হয় যেখানে ওই লোকটা দাঁড়িয়ে ছিল। '
আমি ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা চালালাম। বললাম, 'এটা খুব আশ্চর্য সমাপতন হতে পারে। যদিও খুবই অদ্ভুত। কিন্তু একে কাকতালীয় ঘটনা ছাড়া আর কী নাম দেয়া যায়?'
উনি আমার কথায় আবারও বাধা দিয়ে বললেন, 'আমার কথা এখনো শেষ হয়নি স্যার। '
আমি আবারো মাঝখানে কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইলাম। উনি কেমন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে চললেন, ' ওই ঘটনা প্রায় বছর খানেক আগের কথা। তারপর ছয়-সাত মাস কেটে গেছে। আমি ওই ভয়াবহ ঘটনা আর তার সম্পর্কিত সমস্ত স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক ভাবে কাজ চালানোর চেষ্টা করছি। একদিন ভোরবেলা মাত্র সূর্য উঠছে। আমি দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেইসময় আবার তাকে দেখি ওই লাল বাতির কাছে। '
'সে আবারও ডাকলো?'
'না এবার সে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। '
'আগেরবারের মতো হাত নাড়ছিল? '
'না হাত নাড়েনি। হাত দিয়ে মুখ ঢেকেছিল। এইভাবে। '
উনি অভিনয় করে দেখালেন। মানুষ প্রচণ্ড শোকে বা ভয়ঙ্কর কিছু দেখলে এভাবে হাত দিয়ে চোখ ঢাকে।
'এবারেও আপনি তার কাছে এগিয়ে গেলেন?'
'না আমি ঘরে এসে বসে ধাতস্থ হবার চেষ্টা করলাম। চুপ করে নিজের চিন্তা ভাবনা গুছিয়ে নিয়ে তারপর আবার দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি তখন চারিদিক আলো হয়ে গেছে। আর সেই ভুতও অদৃশ্য। '
'তারপর সেদিন কি কিছু ঘটেছে?'
উনি শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে বললেন, ওইদিন সুড়ঙ্গ দিয়ে একটা ট্রেন এলো। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে চলমান কামরাগুলির দিকে চেয়েছিলাম। হঠাৎ একটা জানালায় দেখি একটা হাত। সেটা দেখে আমার কেমন যেন কী মনে হল বোঝাতে পারবো না কিন্তু আমি ড্রাইভারকে থামার জন্য সঙ্কেত দিলাম। ড্রাইভার গাড়ি থামাতে থামাতে গাড়ি আরো পঞ্চাশ গজ সামনে এগিয়ে গেল। আমি দৌড়ে সেই কামরার দিকে যেতে যেতেই একটা তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শুনতে পেলাম। একজন সুন্দরী তরুণী ঠিক সেই মুহুর্তে সেই কামরাটিতে খুণ হয়েছে।'
আমি নিজের অজান্তেই শিউরে উঠলাম।
'বানিয়ে বলছি না স্যার। প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। '
আমার মুখে আর কোন যুক্তি এলো না। গলা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। জোছনার আলোছায়া, বাতাস আর টেলিগ্রাফের তারের শব্দ এসব খুব হাস্যকর যুক্তি ঠেকলো।
উনি বলে চললেন, ' এখন আপনিই বিচার করুন স্যার। আমার কেমন বিপদ। সেই ভুতটাকে গত এক সপ্তাহ ধরে আবার যখন তখন দেখতে পাচ্ছি।'
'ওই লালবাতির কাছে?'
'ঠিক ওইখানে। ' উনি আবার অভিনয় করে দেখালেন। অধীর গলায় হাত নেড়ে নেড়ে বললেন - 'সরে যান। সরে যান। দোহাই লাগে। রাস্তা ছাড়ুন।'
'সেই থেকে আমার শান্তি নেই স্যার।', উনি বলে চললেন। 'সে আমায় সাবধান করতে আসে। অস্থির গলায় ডাকাডাকি করে, অস্থির হয়ে হাত নাড়ে,আমার টেলিগ্রাফের ঘন্টা বাজায়, চিৎকার করে বলে - শুনতে পাচ্ছেন? এদিকে দেখুন। '
আমি টেলিগ্রাফের ঘন্টার দিকে তাকিয়ে বললাম, 'গতকাল কি সে ঘন্টা বাজিয়েছিল যখন আমি এখানে বসে ছিলাম?'
'দুবার।'
'সব আপনার মনের ভুল। আমি এখানে ছিলাম। আমি কিছু শুনতে পাইনি। '
উনি মাথা নেড়ে বললেন, 'ভুল নয় স্যার। সে যখন ঘন্টা বাজায় আমি শুনতে পাই। আর কেউ শোনেনা। কিন্তু আমি ঘন্টা শুনলেই বুঝতে পারি সে বাজিয়েছে। '
'আর আপনি দুবার ঘন্টা শুনে বাইরে গিয়ে তাকে দেখেছিলেন?'
' হ্যাঁ দেখেছি। '
'দুবারই?'
'দুবারই। '
'আমাকে দরজা খুলে দেখাবেন? '
উনি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। মনে হল তার একদমই ইচ্ছে নেই। তবু জোর করে চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। আমি দরজা খুললাম। সুড়ঙ্গের মাথায় লাল আলো জ্বলছে। রেললাইনের দুধারে ভেজা পাথরের দেয়াল। মাথার উপরের আকাশে অজস্র তারা।
'তাকে দেখতে পাচ্ছেন? '
'না। সে নেই এখানে।'
'ঠিক তাই। কোথাও কেউ নেই।'
আমরা ভেতরে গিয়ে যার যার আসনে বসলাম। মনে ভাবছিলাম কী বলা যায় যা শুনতে বুদ্ধিমানের মতো মনে হবে। কিন্তু কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না।
উনি বললেন, ' আপনি আমার বিপদটা বুঝতে পারছেন স্যার?'
'ঠিক বুঝতে পারছি না কী বলতে চাইছেন।'
'এই অশরীরী আমাকে এবার কোন ঘটনা থেকে সাবধান করতে চাইছে? এবার কী বিপদ হবে? কার হবে? কোথায় হবে? এই রেললাইনে কিছু একটা দূর্ঘটনা ঘটবে। কিন্তু কী ঘটবে? যদি সেই ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয় তাহলে কিভাবে? আমার কী করার আছে? '
লোকটা পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছলো।
'আমি যদি টেলিগ্রাফে জানাই - সাবধান! বিপদ! - তাহলে একটা কারণ তো লাগবে। আমি জানাবো বিপদ। ওরা আমায় জিগ্যেস করবে কী বিপদ। আমি তখন কী বলবো? আমি জানি না কী বিপদ। সাবধান হও। ওরা ভাববে আমি পাগল। আমায় চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে। তাদের আর দোষ কি! এছাড়া তারা আর কী করতে পারে!'
লোকটার অবস্থা দেখে মায়া হলো। একজন দায়িত্বশীল বিবেকবান মানুষের জন্য এই যোগাযোগ প্রচণ্ড রকম মানসিক অত্যাচার।
ওই অশরীরী যখন প্রথমবার এলো তখনই কেন বললো না যে ওই ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটবে? কেন বললো না কীভাবে সেই দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব! দ্বিতীয় বারে নিজের মুখ না ঢেকে কেন বললো না ট্রেনে কেউ মারা যাবে। তাকে বাড়িতে থাকতে বল। সে আসে শুধু এইটুকু বোঝাতে যে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এবারেও এসে সে আমাকে সতর্ক করছে। কিন্তু সোজাসুজি কী হতে যাচ্ছে তা বলছে না কেন? আর আমার কাছেই সে কেন আসে? আমার কতটুকুই ক্ষমতা! আমি খুব সামান্য একজন সিগন্যাল ম্যান মাত্র। যাদের হাতে কিছু করার ক্ষমতা আছে তাদের কাছে যাচ্ছে না কেন?
লোকটার অবস্থা দেখে মনে হল রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হলেও তাকে আমার শান্ত করা উচিৎ। তাই যৌক্তিক অযৌক্তিক বাস্তব অবাস্তব সব প্রশ্ন সরিয়ে রেখে তাকে স্বান্তনা দিলাম। সত্যি বলতে জোড়াতালি যুক্তি দেয়ার চাইতে স্বান্তনা দেয়ার কাজটাই আমি ভালো করলাম। আমার কথায় তার অস্থির ভাব অনেকটা কমে এলো। রাত দুটোর দিকে আমি হোটেলের দিকে রওনা দিলাম। আমি অবশ্য সারারাতই তাকে সঙ্গ দিতে রাজি ছিলাম কিন্তু উনি কিছুতেই আমার বিশ্রামের ব্যাঘাত করতে রাজি হলেন না।
হোটেলে ফেরার পথে সমস্ত ঘটনা চিন্তা করছিলাম। পরপর দুটো দূর্ঘটনার ব্যাখ্যা দুর্বোধ্য মনে হচ্ছিলো। ব্যাখ্যা খোঁজার চেয়েও জরুরী হচ্ছে এই ঘটনা শোনার পর আমার নিজের কর্তব্য কর্ম ঠিক করা। ভদ্রলোক নি:সন্দেহে বেশ বুদ্ধিমান, দায়িত্বশীল এবং সহৃদয় ব্যাক্তি। পরম নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব নিখুঁত ভাবে পালন করে চলেছেন। কিন্তু এরকম মানসিক অবস্থায় কতদিন তা করতে পারবেন? তার কাজ সামান্য হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি কি এই লাইনে রেল ভ্রমণের সময় এমন মানসিক স্থিতির একজন ব্যাক্তির উপর নিজের জীবন দিয়ে ভরসা রাখতে পারবো?
আমার কি সমস্ত কথা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো উচিত নয়? অথচ তিনি আমাকে বিশ্বাস করে সব কথা খুলে বলেছেন। কতৃপক্ষকে জানালে নি:সন্দেহে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। সেটাও তো তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। অনেক ভেবে শেষে মনে হল ভদ্রলোককে আমি নিজে সাথে করে একজন বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেব। ডাক্তারকে সব কথা খুলে বলে তার মতামত জেনে তারপর বাকি কর্তব্য স্থির করা যাবে। হয়তো ডাক্তার এই সমস্ত ঘটনাগুলোর গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা দিতে পারবেন৷ সূর্যোদয় পর্যন্ত তার ডিউটি। তারপর আবার আগামীকাল সূর্যাস্তের পর কাজ শুরু করবেন। আমিও সন্ধ্যেবেলায় তার সাথে দেখা করবো বলে কথা দিয়ে এসেছি।
পরদিন আবহাওয়া ভালো থাকায় আমি বিকেলের আগেই হোটেল থেকে বেরিয়ে পরি। হাটতে হাটতে যখন সংকেত ঘরের কাছাকাছি উঁচু জমিতে গিয়ে পৌছালাম তখনও সূর্য অস্ত যায়নি। নীচে নামার আগে উপর থেকেই একবার সংকেত ঘরের দিকে উঁকি দিলাম। এখান থেকেই প্রথম ভদ্রলোককে দেখেছিলাম। উঁকি দেয়ার সাথে সাথে যে দৃশ্য দেখলাম আর তার ফলে আমার মানসিক অবস্থা যেমন হলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সুড়ঙ্গমুখের লালবাতির সামনে দাঁড়িয়ে একজন লোক। সে তার বাম হাতটা দিয়ে তার চোখমুখ ঢেকে রয়েছে আর ডান হাতটা অস্থিরভাবে নাড়ছে। ঠিক যেমন করে গত রাত্রে সেই ভদ্রলোক আমায় অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন। এক অজানা আতঙ্ক যেন আমায় চেপে ধরলো। এক মুহূর্ত পরেই বুঝতে পারলাম যাকে দেখছি সে রক্তমাংসের মানুষই। কোন অশরীরী নয়। আরো কিছু মানুষ তার সামনে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই লোকটি তার সামনে দাঁড়ানো লোকজনকেই ওরকম ভাবে অঙ্গভঙ্গি করে কিছু দেখাচ্ছে। ওই লালবাতির সামনে একটা কাঠের খাটিয়া দেখা যাচ্ছে যা আগের দুদিন দেখিনি।
সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে হলো কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। তৃতীয় দূর্ঘটনাটিও ঘটে গেছে। উর্ধশ্বাসে নীচের দিকে ছুটলাম।
'কী হয়েছে? ', আমার সামনে যে পড়লো তাকেই জিজ্ঞাসা করলাম।
'সিগন্যাল ম্যান মারা গিয়েছে। আজ সকালে। '
'ওই ঘরে যে থাকতো?'
' হ্যাঁ। স্যার। '
'আমার সাথে যার পরিচয় হয়েছে সেই নয়তো?'
'আপনি চেহারা দেখলেই চিনবেন স্যার। ', বলে সে তেরপলটা উঁচু করে দেখালো। চেহারা দেখে আর সন্দেহ রইলো না।
'কীভাবে ঘটলো এই ঘটনা?'
'ইঞ্জিনে কাটা পড়েছে। সারা দেশে তার মতো কাজের লোক আর পাওয়া যাবে না। আজ কোন কারণে তার মনে কী সন্দেহ হয়েছে সে রেললাইন পরীক্ষা করতে করতে যাচ্ছিলো ওই সুড়ঙ্গের দিকে পেছন ফিরে। হঠাৎ করেই সুড়ঙ্গ থেকে ইঞ্জিন বের হয়ে তাকে চাপা দিয়েছে। ইঞ্জিন চালক লোকটাই ওখানে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখাচ্ছে কী করে এই ঘটনা ঘটলো। টম! এই ভদ্রলোককে একবার পুরো ঘটনা খুলে বলোতো। '
ইঞ্জিন চালক এগিয়ে এলো। 'আমি একদম শেষ মুহূর্তে তাকে দেখতে পাই স্যার। তখন আর গাড়ি থামানোর উপায় ছিলো না। লোকটিকে সাবধান বলেই জানতাম। কিন্তু সে ট্রেনের হুঁইসেল শুনতেই পেল না। তখন আমি চিতকার করলাম। '
'কী বলে চিতকার করলেন?'
''সরে যান। সরে যান। দোহাই লাগে। রাস্তা ছাড়ুন। শুনতে পাচ্ছেন!'
আমি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। লোকটা বলে চললো।
'ওহ! কি ভয়ংকর ঘটনা স্যার। এত ডাকলাম হাত নাড়লাম। শেষটায় হাত দিয়ে নিজের চোখ ঢেকে ফেললাম যেন ওই ঘটনা চাক্ষুস না করতে হয়। '
কথা আর না বাড়িয়ে এই কাহিনী এখানেই শেষ করা যাক। ইঞ্জিন চালক আমায় যেভাবে হাত নাড়িয়ে পুরো ঘটনা অভিনয় করে দেখালো, কাকতালীয় ভাবে হতভাগ্য সিগন্যাল ম্যান ঠিক একইভাবে গতরাত্রে অশরীরীর সাবধান বার্তা অভিনয় করে দেখিয়েছিল।
--
বাসবী সরকার
মন্তব্য
খুব সুন্দর সাবলীল অনুবাদ। ভাল লাগলো। আরও লিখুন।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
অশেষ ধন্যবাদ। সময় নিয়ে পড়ার এবং উৎসাহসূচক মন্তব্যের জন্য
----
বাসবী
পড়ে, গায়ে কাঁটা দিল। খুব ভাল অনুবাদ।
অশেষ ধন্যবাদ। সময় নিয়ে পড়ার এবং উৎসাহসূচক মন্তব্যের জন্য
----
বাসবী
সময় নিয়ে অনুবাদ করার জন্য ধন্যবাদ।
অশেষ ধন্যবাদ। সময় নিয়ে পড়ার এবং উৎসাহসূচক মন্তব্যের জন্য
----
বাসবী
'সিগনালম্যান' শব্দটার একটা জুৎসই বাংলা যদি গল্পটার শিরোনাম হিসেবে থাকতো, বাংলা ভাষার ভাঁড়ারে আরেকটা প্রয়োজনীয় শব্দ জমতো।
মূল গল্পে (দ্বিতীয় পঙক্তিতেই) ঝাণ্ডাধর ভদ্রলোকের পতাকাটা গোটানো ছিলো, এখানে তাকে সেটা নাড়তে দেখে মনে হলো, আপনি যথেষ্ট 'হাত খুলে' অনুবাদ করেছেন। সে কারণে সিগনালম্যান শব্দটার একটা বাংলা বিকল্পের আবদার আরেকটু জোরেশোরে রেখে গেলাম।
জমিদার, চৌকিদার, দফাদার, জমাদ্দার, তালুকদার ইত্যাদির মত সাইনম্যানকে সংকেতদার নামকরণ করা যায়। যদিও জামিদার অর্থ কৃষক হওয়া উচিত ছিল কিন্তু বাঙলায় জমিদার বলতে কৃষকের পীড়ক বোঝায়।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
নতুন মন্তব্য করুন