সেই খুনে ঘড়িটা

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৭/২০২১ - ৩:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই গল্পটা আপনি বিশ্বাস করবেন না এবং হেসে উড়িয়ে দেবেন তা প্রায় নিশ্চিত। তবু যেহেতু কোন এক কবি বলেছিলেন, “পৃথিবী ও স্বর্গে এমন কিছু ঘটে যার সবটুকু আমাদের আয়ত্বের মধ্যে নেই….” সেহেতু আমি ঘটনাটা বলবো। কাহিনীটা বিচিত্র খামখেয়ালীপূর্ণ একটি ঘড়ি নিয়ে।

ঘড়িটা কিভাবে আমার কাছে এলো সেই ঘটনায় যাবার আগে দুনিয়ার ঘড়ি জাতির চরিত্র বিষয়ে দুটো কথা বলে নেই।

পৃথিবীতে সাধারণত দুই জাতের ঘড়ি আছে। প্রথম জাতটা হলো সে দিনের পর দিন ভুল সময় দেখিয়ে যাবে, সে জানে সে হদ্দ ভুল- তবু তাতে কোন লোকলজ্জা নেই তার, বরং ভুল সময়ের কাঁটা ঘুরিয়ে সারা দুনিয়াকে কাঁচকলা দেখিয়ে যাবে। এদের আমি বলি ‘ফটকা ঘড়ি’। দ্বিতীয় জাতের ঘড়ি হলো, সে চিরকাল সঠিক সময় দেবে শুধু যেদিন তার উপর ভরসা করবেন সেদিনটা বাদে। এই জাতের ঘড়িদের আমি ‘সাধু ঘড়ি’ বলি।

এই সাধু জাতের একটা ঘড়ির কথা আমার এখনো মনে আছে। ছেলেবেলায় যার ডাকে আমরা এক কনকনে শীতের সময় রাত তিনটার সময় উঠে গিয়েছিলাম। পড়িমড়ি করে চারটা বাজার দশ মিনিট আগে আমাদের নাস্তা শেষ করে ভোর পাঁচটার পরপরই ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে স্কুলে পৌঁছে যাই। স্কুলের সামনে পৌঁছানোর পর অদ্ভুত একটা অনুভূতি আমাদের গ্রাস করলো। আমরা ভেবেছিলাম পৃথিবীতে কেয়ামত ঘটে গেছে, কেননা চারদিকে আমরা বাদে আর কোথাও কোন কাকপক্ষীর চিহ্নমাত্র নেই। দুনিয়াজোড়া কবরের হিমশীতল নিস্তব্ধতা। আমরা সবাই স্কুলের বাইরের সিঁড়িতে বসে হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু করেছিলাম হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীর জন্য।

সাধু ঘড়ির জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য হলো তার উপর ভরসা করার জন্য আপনাকে প্রলুব্ধ করা। দিনের পর দিন সে আপনাকে একদম নিখুঁত সময় দিয়ে যাবে। তার উপর আপনার ভক্তি এতই পোক্ত হয়ে পড়বে যে আপনি মনে করবেন এই ঘড়ি যদি কখনো সেকেন্ডের এক চতুর্থাংশ এগিয়ে কিংবা এক অষ্টমাংশ পিছিয়ে যায়, সাথে সাথে পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাবে। আপনি যদি সূর্য এবং ঘড়ি এই দুটির মধ্যে কোন একটিকে অবিশ্বাস করতে চান, সেটা অবশ্যই সূর্য।

একবার হলো কী- এই সাধু ঘড়ির উপর বিশ্বাস রেখে এক সুন্দর সকালে ঢাকা-চট্টগ্রামের নন-স্টপ ট্রেন ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ধরার জন্য স্টেশনের উদ্দেশ্যে বের হলাম। রওনা দেবার আগে পুরো পরিবারকে ড্রইং রুমে জড়ো করে, বাচ্চাদেরকে চুমু খেয়ে, তাদের মুখে লেগে থাকা খাবারের কণা আদর করে মুছে দিয়ে, কড়ে আঙুল দিয়ে সবচেয়ে ছোট বাচ্চাটিকে আদর করে, কাজের লোককে যথাসময়ে বাজার সদাই সেরে আনার পরামর্শ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় নেমেও দূর থেকে সবাইকে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম।

স্টেশন বেশী দূরে না। দশ মিনিটের হাঁটাপথ। আমার সাথে ছোট একটা পিঠব্যাগ ছাড়া আর কিছু নেই। রাস্তায় নেমে ঘড়ি দেখে বুঝলাম ট্রেন ছাড়তে চল্লিশ মিনিট বাকী আছে। হাতে যথেষ্ট সময় এখনো তাই রিকশা না দিয়ে ধীরে সুস্থে হেঁটে চললাম। পথে সরকারী কলোনীর কাছে মর্নিং ওয়াকে বেরুনো পাড়াতো মুরব্বীদের সাথে দেখা হলে তাদের শরীর স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করলাম। পাশে ডাবওয়ালার কাছ থেকে ডাব কিনে খাচ্ছিলেন তাঁরা। আমিও একটা ডাব কেটে স্ট্র পাইপ দিয়ে চোঁ চোঁ করে খেয়ে নিলাম। ফ্রেশ ডাবের পানি খেয়ে শরীরটা চাঙ্গা মনে হলো।

স্টেশনে পৌঁছে দেখা গেল আরো মিনিট পনের সময় হাতে আছে। পত্রিকার স্টলে গিয়ে আজকের খবরের শিরোনামগুলো দেখে নিলাম। দৈনিক ইত্তেফাকের একটা শিরোনাম দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল। পুরোটা পড়ার জন্য পত্রিকাটা কিনে নিলাম। অলস পায়ে হাঁটতে হাঁটতে পড়ছি। পড়া শেষ হতে ৪ নং প্ল্যাটফর্মের দিকে এগিয়ে গেলাম। ট্রেনটা ওদিকেই থাকার কথা।

কিন্তু কোথায় সোনার বাংলা? খাঁ খাঁ করছে ৪ নং প্ল্যাটফর্ম। সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করলে সে বললো ট্রেন তো সময়মত ছেড়ে গেছে প্রায় আধাঘন্টা আগে। আমি তখন সরু চোখে আমার ঘড়ি আর স্টেশনের ঘড়ি মিলিয়ে দেখলাম। আমার হারামি বিটকেলে ঘড়িটা ৫০ মিনিট ধীর গতিতে চলে আমাকে বেকায়দা অবস্থায় ফেলে দিল!

আবার ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটেছিল তার কয়েক মাস পরে। সেবার হাতে একদম সময় নেই বলে পড়িমরি করে রিকশা বাদ দিয়ে টেক্সি নিয়ে দ্রুতগতিতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাবার পর দেখা গেল ট্রেন তখনো ওয়ার্কশপ থেকে এসে পৌঁছায়নি। প্ল্যাটফর্মে আমি বেকুব ছাড়া আর কোন যাত্রী নেই। গরমে দরদর করে ঘামতে ঘামতে পৌনে এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলাম।

আসলে আমি ঠিক কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি দুই ফাজিল জাতের ঘড়ির মধ্যে কোনটা মানবজাতির জন্য বেশী ক্ষতিকর।

ফটকা ঘড়িগুলো আসলে তেমন ক্ষতি করতে পারে না। কারণ আপনি তাদের চরিত্র সম্পর্কে ভালো করেই জানেন। সেই হিসেবে আপনি নিয়মিত তাদের চাবি দিয়ে, ব্যাটারি বদলে, সময় ঠিকঠাক করে চালু রাখেন। আপনি কখনোই তার কাছ থেকে কিছু আশা করেন না, স্বপ্নেও ভাবেন না যে সে আপনাকে সঠিক সময় বাতলে দেবে, ফলে আপনি তাদের নিয়ে হতাশবোধ করেন না। আপনি হয়তো ড্রইংরুমে পত্রিকা পড়তে পড়তে আপনার কন্যাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘দেখ তো বাবলি তো এখন কটা বাজে?’ তখন আপনার কন্যা বলবে - ‘বাবা, ডাইনিং রুমের ঘড়িতে তো এখন এখন সোয়া দুটো বাজে।’

আপনি তাতে মোটেও প্রতারিত হবেন না। আপনি নিশ্চিত যে সময়টা এখন সন্ধ্যে ৭টা থেকে ৮টার মাঝামাঝি। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে আপনি বিস্মিতবোধ করবেন। ঘন্টাখানেক আগেও সে সময় দেখিয়েছিল ৪টা বেজে ৪০ মিনিট। এর মধ্যে সে কিভাবে উল্টো ঘুরে গেল আপনি সেটা কখনোই বুঝে উঠতে পারবেন না।

যেমন আমি পারিনি আমার সেই অদ্ভুত ঘড়িটাকে বুঝতে- যে ঘড়ির গল্প শোনাবো এখন।

এই ঘড়িটা এমন একটা অস্বাভাবিক রকমের জটিল, সুরসিক, স্বাধীনচেতা যে এই ঘড়ি নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক গবেষণা ও আবিষ্কারের বাকী রয়ে গেছে। ঘড়ি হিসেবে এটার কাজ খারাপ না কিন্তু তার স্বেচ্ছাচারিতা এবং খামখেয়ালিপনাগুলো রীতিমত অষ্টম আশ্চর্য হতে পারে।

আমার এক বন্ধুর কাছেও একটা স্বেচ্ছাচারী ঘড়ি ছিল যেটা সে ছাড়া অন্য কেউ বুঝতো না। সে বলতো, “যেমন ধরো, যখন ঘড়িটাতে পনেরোর ঘন্টা বাজালো এবং এর কাঁটাটাকে দেখা গেল ১১টার ঘরের ২০ মিনিট পরে, আমি জানি ওটায় তখন আসলে পৌঁনে ৮টা বাজলো।” এমন দুশ্চরিত্রের অধিকারী হবার পরও সে বলতো ওটা এমন একটা অসাধারণ নির্ভরযোগ্য ঘড়ি যার উপর নিশ্চিন্তে বিশ্বাস রাখা যায়। তবে তাকে বোঝার জন্য গভীর মনোযোগ দরকার হয়, যার সেটা নেই সে খুব সহজেই ঘড়িটা দিয়ে বিভ্রান্ত হবে। বন্ধুর সাথে তার অদ্ভুত ঘড়িটার বোঝাপড়া হয়ে গেলেও আমার ঘড়িটা ছিল একেবারেই অবাধ্য এবং বেপরোয়া।

ঘড়িটার চরিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটা হলো অনিশ্চয়তার প্রতি তার বাড়াবাড়ি রকমের আসক্তি। সে কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে স্থির থাকতে রাজী নয়, সম্পূর্ণরূপে তার মেজাজমর্জি এবং আবেগের(হ্যাঁ আবেগ) উপর নির্ভর করে চলে। একদিন হয়তো খুব চঞ্চল এবং প্রাণবন্ত হয়ে তিনঘন্টা এগিয়ে যাবে । পরদিন সে এমন মৃতবৎ পড়ে থাকবে যে নিজের পা টেনেও চলতে পারছে না, প্রতি চারঘন্টায় দুই ঘন্টা করে পিছিয়ে থাকবে, বিকেলের মধ্যে হয়তো এমন অচল হয়ে পড়বে যে তাকে দিয়ে আর কিছু করানো অসম্ভব। আবার সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে উৎফুল্ল হয়ে চলতে শুরু করবে নিজের ইচ্ছামত। নিজের খেয়ালে চলার পথে তার স্বাধীনতার কোন সীমা নেই।

ঘড়িটা কিভাবে আমার কাছে এলো সেই ঘটনাটা বলি।

আমরা একবার বন্ধু আশরাফের রাজশাহীর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলাম। আশরাফ কিছুদিন আগে বড়সড় একটি ঘড়ি কিনেছে -তার ভাষায় ‘রাজশাহীতে সেই প্রথম এমন একটা জিনিস তুলে এনেছে’। আশরাফ প্রায়ই নানান রকম ‘অভিনব জিনিস তুলে আনে’ রাজশাহীতে। সে তার বেডরুমে তিন টন ওজনের প্রাচীন কারুকার্যময় পালঙ্কের পাশে দাঁড়িয়েও বলবে - ‘দেখেছো ছোট্ট জিনিসটা কী সুন্দর দেখতে, আমি এটা আমি ভারতের রাজস্থানের একটা রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলাম’। কথাটা সে এমন সুরে বলবে যেন ওটা রাস্তার ধারে পড়ে ছিল এবং সে টুপ করে পকেটে পুরে তুলে এনেছে।

আশরাফ তার ‘তুলে আনা’ ওই ঘড়িটা নিয়ে খুব গর্বিত। ঘড়িটা ছিল উনিশ শতকের পুরোনো ধাঁচের গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লক। আট ফুট উঁচু ঘড়িটা একটা ওক কাঠের কারুকার্যময় বাক্সের ভেতর রাখা, ওটার অভিজাত চেহারার ডায়াল, দোলক এবং ঘন্টা সবকিছুই সমীহ জাগায়। খাওয়াদাওয়া সেরে আমরা যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন আমাদের পাশে ঘড়িটার কিংবদন্তীর মতো উপস্থিতি পরিবেশে বাড়তি মাধুর্য যোগ করেছিল।

আমাদের আলোচনার মধ্যে অন্য সকল বিষয় ছাপিয়ে ঘড়িটাই মধ্যমনি হয়ে উঠলো। আশরাফ বললো, ঘড়িটার ধীরস্থির এবং ভাবগম্ভীর ঘন্টাধ্বনি শুনতে সে খুব পছন্দ করে। মাঝরাতে যখন সমস্ত বাড়ি, সমগ্র পৃথিবী সুনসান, তখন ঘড়িটার পাশে ইজি চেয়ারে বসে থাকে সে। মনে হয় তার সঙ্গে কোন এক পুরোনো বন্ধু বসে গল্প করছে। তারা দুজনে বসে তাদের পুরোনো দিনের সুখ দুঃখের পাঁচালী গাইছে, পুরোনো বন্ধুবান্ধবদের স্মৃতিচর্বন করছে। ঘড়িটাকে মানুষের চেয়ে কোন অংশে কম মনে হয় না তার। ঘড়ি নিয়ে তার এই আপ্লুত মনোভাব আমাদেরকেও স্পর্শ করলো। সবচেয়ে বেশী নাড়া দিল আমার স্ত্রীকে।

পরদিন ঢাকা ফিরে আসার পথে আমার স্ত্রী সারাক্ষণ ভাবনার ঘোরে ডুবে থাকলো। ঢাকায় পৌঁছে বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি দিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটে ওঠার সময় সে মুখ খুললো, ‘আচ্ছা, আমরাও যদি সেরকম একটি ঘড়ি কিনতে পারতাম, সে আমাদের সাথে সাথে থাকতো, কী দারুণ ব্যাপার হতো, তাই না? তার সঙ্গ পেয়ে আমার নিঃসঙ্গতা দূর হয়ে যেতো।”

কথাগুলো সে এমনভাবে বললো যেন আমাদের দেখেশুনে রাখার জন্য কোন কেয়ারটেকার রাখার কথা বলছে, বিশেষ করে আমাদের অনাগত সন্তানের দেখাশোনা করার মতো কেউ।

সে যাই হোক, পরবর্তীতে কথাটা আমারও মনে ধরলো। পুরান ঢাকায় নবাবপুর রোডে আমার পরিচিত একজন ছিল যার কাছ থেকে আমি প্রায়ই এন্টিকস জাতীয় জিনিসপত্র কিনতাম। আমি তাকে লিখলাম এমন একটি ঘড়ির ব্যাপারে। কয়েকদিন পর সে উত্তরে লিখলো যে ভাগ্যক্রমে আমি যেমনটি চাই তার কাছে হুবহু সেরকম একটা জিনিস এসেছে। এটা খুবই দুর্লভ এবং তার দেখা সবচেয়ে প্রাচীন ঘড়ি। সে ওটার ছবি এবং বিস্তারিত তথ্যও চিঠির সাথে পাঠালো এবং জানতে চাইল ঘড়িটা পাঠিয়ে দেবে কিনা। ছবি এবং তার বর্ণনা পড়ে মনে হলো সে যা বলেছে তাতে কোন ভুল নেই। জিনিসটা আসলেই দুর্লভ এবং সংগ্রহে রাখার মতো। আমি তৎক্ষণাৎ লিখে জানালাম পত্রপাঠ যেন পাঠিয়ে দেয়।

তিন দিন পার হবার পর একদিন দুপুরে দরোজায় করাঘাত। কাজের মেয়েটা এসে জানালো বাইরে দুজন লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। আমি এগিয়ে গেলাম কে আসলো দেখতে।

দেখলাম ক্লান্ত চেহারায় দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে একটা ট্রাকের চালানপত্র। দেখে একটু বিস্মিত হলেও চালানের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম এরা আমার ঘড়িটা নিয়ে এসেছে। আমি খুশী হয়ে উঠে বললাম। “আরেব্বাহ!! জিনিসটা এসে গেছে দেখি। জলদি নিয়ে আসেন উপরে!!”

কিন্তু তারা বলল জিনিসটা অসম্ভব ঝামেলার। তুলতে গিয়ে মাঝপথে আটকে গেছে। মনে মনে একটু তিরস্কার করে বললাম, ‘ব্যাটা গর্দভ। সামান্য একটা ঘড়ির বাক্স দোতলায় তোলার মুরোদও নাই তোদের ’।

ব্যাপার বোঝার জন্য স্যান্ডেলে পা গলিয়ে আমি নিজে তাদের সাথে নীচে নামলাম এবং সিঁড়ির মাঝামাঝি পর্যন্ত নেমে বেকুব হয়ে গেলাম। দোতালায় ওঠার সিঁড়ির মাঝখানে দৈত্যাকার একটা কাঠের সিন্দুক বেকায়দা ভঙ্গিতে আটকে আছে। আমার হঠাৎ কেন জানি মনে হলো গুলিস্তানের কামানটা ঢাকায় আনার জন্যও হয়তো এমন একটা সিন্দুক ব্যবহার করেছিলেন মীর জুমলা।

ওই কাষ্ঠনির্মিত দৈত্যাকৃতির সিন্দুকের ভেতরেই ছিল আমার সেই ঘড়িটা।

বুঝে গেলাম এই জিনিসকে আস্ত উপরে তোলা সহজ কাজ নয়। আমি দারোয়ানকে পাঠিয়ে একটা করাত এবং কয়েকটা কুড়াল যোগাড় করে আনলাম। রাস্তা থেকে আরো দুজন কুলীও ডেকে আনা হলো। পাঁচজনের যৌথ বাহিনীর আধঘন্টা চেষ্টায়, কুড়াল করাতের সদ্ব্যবহার করে অনেক কুস্তাকুস্তির পর সিন্দুকের পেট থেকে ঘড়িটাকে বের করে আনা হলো। ইতিমধ্যে আমাদের দালানের উপর নীচের সকল বাসিন্দাদের সব ধরণের যাতায়াত বন্ধ হয়ে ছিল সিঁড়িতে। রাস্তা থেকে আসা দর্শকেরও কমতি ছিল না। তাদের টীকাটিপ্পনীরও অভাব ছিল না। সেই টিপ্পনীগুলো কেমন মধুর ছিল তা আর বলতে চাই না।

অনেক ধকল সামলে ঘড়িটা ওপরে তোলার পর ডাইনিং রুমের এক কোনায় বসানো হলো। ডাইনিং রুমে দাঁড়ানোর সাথে সাথে ঘড়িটার প্রথম ইচ্ছেটা হলো সামনে পাওয়া যে কোন এক মানব সন্তানের ঘাড়ের উপর লাফিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করা। দ্রুত হাতে তাকে ধরে পতন ঠেকানো হলো। তার সেই মহতী ইচ্ছাটাকে কাঠের তক্তা বসিয়ে তার উপর পেরেক মেরে রুদ্ধ করে দেয়া হলো। সিঁড়ি থেকে তুলে এনে ঘরের মধ্যে স্থাপন করা পর্যন্ত যেসব কসরত করতে হলো তাতে আমার হাত পা যেভাবে ছড়ে গিয়েছিল তা সারতে সপ্তাহখানেক লেগেছিল।

ব্যাণ্ডেজ এবং ওষুধ লাগাবার পর খাওয়াদাওয়া সেরে আমি শুতে গেলাম। মাঝরাতের দিকে আমার স্ত্রী আমাকে জাগিয়ে তুলে খুব বিষন্নতার সাথে জানালো যে ঘড়িটা এইমাত্র ১৩টার ঘন্টা বাজালো। তার কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাসমতে এর অর্থ হলো আজ রাতে কেউ একজনের মৃত্যু হবে। কে হতে পারে সেটা?

আমি বললাম, আমি জানি না, তবে মনে হচ্ছে পাশের বাসার কুকুরটা হতে পারে।

আমার স্ত্রী বললো যে তার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা একটা বাচ্চা। নিশ্চয়ই আমার পেটের বাচ্চা। সে কাঁদতে শুরু করলো। তাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পেলাম না আমি। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো বেচারী।

সকালে উঠে আমি তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিশ্বাস করাতে পারলাম যে রাতে সে ভুল শুনেছে কিংবা দুজনে মিলে দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম।। এরপর তার মুখে হাসি ফুটলো এবং নাস্তাপানি খেয়ে দিন শুরু করলো।

কিন্তু দুপুরের দিকে ঘড়িটা আবারো ১৩টার ঘন্টা বাজানোর সাথে সাথে তার ভীতিটা ফিরে আসলো। এবার সে ধরে নিলো শুধু বাচ্চা না সাথে আমিও মারা যাবো এবং সে নিঃসন্তান বিধবা হয়ে পড়বে। আমি ব্যাপারটাকে কৌতুক হিসেবে নেবার চেষ্টা করাতে সে আরো ভেঙ্গে পড়লো। বললো, সে নিশ্চিত যে আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি, কিন্তু তাকে খুশী রাখার জন্য এমন হালকা করে দেখাচ্ছি। সে বলল যেহেতু ভবিতব্য ঠেকানোর কোন উপায় নেই, সে অনিবার্য সেই পরিস্থিতি সাহসের সাথে মোকাবেলা করার চেষ্টা করবে।

সে রাতে ঘড়িটা আবারো ১৩টার ধ্বনি বাজালো। আমার স্ত্রী ধরে নিলো এটা সম্ভবত তার মরিয়ম খালার মৃত্যু ঘন্টা। সে ভাবতে চাইল এমন অলুক্ষণে ঘড়িটা আমাদের নয়, ওটা ঘড়ি আমাদের কখনোই ছিল না। আমার উদ্দেশ্যে তিরস্কারের সুরে বললো- কেন যে ওসব ছাতার মাথা জিনিসের শখ হয় আমার। আমি যে কবে ওসব অপ্রয়োজনীয় শখ, প্রাচীন ঘড়ি সংগ্রহের দুর্বুদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো ইত্যাদি।

আমার বউ উদোর পিণ্ডিটা চট করে বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার পরও আমি কিছু বললাম না। কারণ আমি স্ত্রৈন টাইপ লোক না হলেও সাধারণত স্ত্রীর অবাধ্য হই না। ঘড়িটার ব্যাপারে তার আগ্রহই যে বেশী ছিল সেটা মনে করিয়ে দিলাম না তার অসুস্থ শরীরের কথা ভেবে। চুপচাপ হজম করে নিলাম অভিযোগ।

পরদিন সকালে ঘড়িটা ৪ বার তেরোটার ঘন্টা বাজালো এবং এটা আবার তাকে একটু উৎফুল্ল করে তুললো। এবার তার মনে হলো যে পরিবারের সবাই মারা যাবো। সে বললো যে যদি আমরা সবাই একসঙ্গে মরি তাহলে আর কোন দুশ্চিন্তা নাই। মনে হচ্ছে আমরা সপরিবারে কোন দুরারোগ্য মহামারীতে মারা পড়বো। সবাই মারা গেলে কেউ কারো জন্য কষ্ট পাবে না ভেবে সে একটু হালকা বোধ করতে লাগলো।

কিন্তু ঘড়িটা ক্রমাগত ১৩ ঘন্টা বাজাতে থাকলো প্রতিদিন। আমার স্ত্রী বলতে লাগলো আমাদের সব আত্মীয় বন্ধু মারা যাবে, তারপর সকল পাড়াপ্রতিবেশীও। মনে হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর জন্য ভয়ানক কোন মহামারী এগিয়ে আসছে।

ঘড়িটা পুরো মাস জুড়ে সারাদিন তেরোটার ঘন্টা বাজাতে থাকলে মনে হলো পুরো ঢাকা শহরে একজনও জীবিত মানব সন্তান থাকবে না।

তারপর কেন যেন একটু বিরতি নিল ঘড়িটা। ক্রমাগত মানব হত্যায় ক্লান্ত হয়ে বোধহয় ঘড়িটা একটু বিশ্রাম নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরতিপর্ব শেষ হবার পর ঘড়িটা এবার একটা নতুন অধ্যায় শুরু করলো। নির্দোষ সংখ্যক ঘন্টা বাজাতে শুরু করলো যেমন ৩৯ এবং ৪১। তার প্রিয় সংখ্যাটি হলো ৩২, তবে দিনে অন্ততঃ একবার ৪৯ ঘন্টা বাজাবেই এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সে কখনোই ৪৯ এর বেশী বাজায় না। এর কারণ কী আমি জানি না।

ঘড়িটা কোন নির্দিষ্ট বিরতি নিয়ে ঘন্টা বাজায় না, যখন ওর মনে হয় একটু বাজানো উচিত, তখনই বাজিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে এক ঘন্টার মধ্যেই তিনচারবার আবার কখনো দেখা যায় সারাদিনে এক আধবারের বেশী বাজেনি। এক অদ্ভুত খেয়ালী ব্যক্তিত্ব তার।

আমি প্রায়ই ভাবতাম তাকে একবার মেরামতের জন্য নিয়ে যাই এবং সময়টা ঠিক করে আনি। কিন্তু কেন যেন আমি তার সময় নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের দুঃসাহসী তামাশাগুলোর ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই সে কাজে হাত দেয়া হয়নি।

কিন্তু আমার এই ভালোবাসার প্রতি তার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। এমনকি সে তার নিজের নির্ধারিত নিয়মকেও প্রতিনিয়ত লংঘন করে যাচ্ছিল এবং খোলাখুলিভাবেই তাদের অপদস্থ করে চলেছিল। যেমন, গত পরশু সে সোয়া দুইটার সময় ৩৮টা বাজার ঘন্টা বাজালো এবং তার বিশ মিনিট পরেই ঘোষণা দিল যে যে মাত্র ১টা বাজে।

আসলে তার ব্যাপারটা কী? দীর্ঘ এক শতাব্দী সময় দেখাতে দেখাতে বুড়ো হয়ে গেছে বলে এমন কাণ্ড করছে? নাকি সে তার বর্তমান মালিকের উপর কোন কারণে বিরক্ত হয়েছে এবং সেই কারণে বারবার তার বিদ্রোহী আচরণটা প্রকাশ করতে চায়? তাহলে তার বিরুদ্ধে এমন কোন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে সে আমাদের মাথা পুরোপুরি নষ্ট করতে না পারে।

সেটা আর সম্ভব হলো না। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবার আগেই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এসে হাজির। একদিন ভোরবেলা আমাদের বাড়িতে পুলিশ এসে কড়া নাড়তে থাকলো। পুলিস অফিসার ঘরে ঢুকে আমাকে বললো, ‘আপনাকে থানায় যেতে হবে। আপনার নামে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে’।

গত পরশু আমাদের পাশের বাড়ির একজন বয়স্ক লোক হার্ট এটাক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর ৮৯ বছর বয়সী স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে -পাশের বাড়ির রমিজ তালুকদার(আমি) তাদের বাড়িটা দখল করার জন্য একটি ভাড়াটে খুনীকে দিয়ে তাদের দুজনকে হত্যা করার চেষ্টা করছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। যে খুনী দিনরাত এলোমেলো ঘন্টা বাজিয়ে বুড়োবুড়ি দুজনের হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে দিয়েছে যার ফলে বুড়োর এটাক হলো।

অভিযোগ শুনে বেদিশা হয়ে গেলাম। এটা মোটেও সত্যি নয়। আমি বুড়োবুড়ির কাছে শুধু তাদের বাড়ির সামনে অবহেলায় ফেলে রাখা গোলাপ বাগানটা কেনার আবদার করেছিলাম মাসখানেক আগে। তাও নগদ টাকা দিয়ে। চোখের সামনে এমন একটা বাগান আগাছায় ভরে যাচ্ছিল যত্নের অভাবে। দেখতে নিজেরই খারাপ লাগতো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আমিই ওই বাগানের শোভা সবচেয়ে বেশী উপভোগ করতাম। কিন্তু কঞ্জুস বুড়ো কিছুতে বিক্রি করতে রাজী হয়নি বলে ফিরে আসার সময় আমি আপন মনে গজ গজ করে বলেছিলাম- বুড়ো মরলে ওই বাগান আমার হবে। বুড়ি হয়তো দরোজার ফাঁক দিয়ে কথাটা শুনে ফেলেছিল।

গোলাপ বাগান কিনতে চেয়ে পুলিশের হাতকড়া পরার দুঃখ নিয়ে নীচে নামতে নামতে নচ্ছার খুনে ঘড়িটার দিকে তাকালাম একবার। ঘড়িটা যেন আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে হঠাৎ করে ডং ডং করে চারটা ঘন্টা বাজিয়ে দিল। সোয়া সাতটার সময় চারটা ঘন্টা বাজিয়ে শোনাবার মানে কী আশ্বাস, বিদায়বার্তা নাকি নেহাত তামাশা করলো- কিছুই বুঝতে পারলাম না।

-------------------------------------------------------------------------
[সচলায়তনের জন্মদিন উপলক্ষে গল্পটি লেখা হয়েছে জেরোম কে জেরোমের ‘দ্য ক্লকস’ অবলম্বনে]


মন্তব্য

গগন শিরীষ  এর ছবি

জেরোম কে জেরোম এর লেখাগুলো এত মজার, আপনার অনুবাদও চমতকার হ‌য়েছে!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনুবাদ করতে দুঃসাহস লাগে। তবে পড়তেও সাহস লাগে সেটা নিজেকে দিয়ে বুঝি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দীর্ঘ অনুবাদ ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

কল্যাণ এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে নীড়ুদা। একটা বড় মন্তব্য লিখে রেখেছিলাম কিপে, কিন্তু পাচ্ছি না এখন আর। যাই হোক, জেরোমের ত্রি রত্নের নৌবিহার আমার দারুণ পছন্দের গল্প। বারবার পড়ি। এই গল্পটা এত সুন্দর করে আমাদের চেনা পরিবেশে মিলিয়ে দিলেন!

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আহা আপনার মুছে যাওয়া মন্তব্যের জন্য এমন আক্ষেপ রয়ে গেল। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এক লহমা এর ছবি

জেরোমের মজলিসি অথচ অনুচ্চকিত হাসির গল্পের অনুবাদ কঠিন। অভিবাদন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ জানুন এক লহমাদা। অনুবাদের মতো ক্লান্তিকর জিনিস কমই আছে। করতে যেমন, পড়তেও তেমন। কিন্তু কেউ 'ভালো হইছে' বললে আরেকটা অনুবাদের সাধ জাগে হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ওডিন এর ছবি

দুর্দান্ত অনুবাদ হয়েছে! গুরু গুরু

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনুবাদ ধন্য হলো। কৃতজ্ঞতা হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রণদীপম বসু এর ছবি

দারুণ হয়েছে ! ধন্যবাদ।
মানুষের জীবনের ঘণ্টাও যে সবসময় নিয়ম মেনে বাজবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এই তত্ত্বজ্ঞান আমরা না বুঝলেও ঘড়িটা ঠিকই বুঝে ফেলেছে ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কথা সত্য! জ্ঞানী ঘড়ি বলে কথা। হো হো হো
পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

অনুবাদ যথেষ্ট প্রাঞ্জল এবং সুখপাঠ্য হয়েছে । ধন্যবাদ ।

নাজমুছ ছাকিব

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।