আমার দেখা বুয়েটের ইউকসু ইলেকশানের গল্প

Fallen Leaf এর ছবি
লিখেছেন Fallen Leaf [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৩/০৭/২০১৩ - ৭:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৯৭ সালের শুরুর দিকের কথা। বুয়েটের ক্লাস শুরু হয়েছে মাস দুয়েক হল। প্রথম সেমিস্টারেই পাঁচ টা কোর্স আর তিনটা সেশানাল নিয়ে অবস্থা কেরসিন... বিশেষ করে মেকানিক্স কোর্স নিয়ে তো রীতিমত হিমশিম অবস্থা। এর মধ্যে শুনলাম ইউকসু ইলেকশান হবে। বেশ একটা থ্রিল অনুভব করলাম। ডাকসু ইলেকশানের কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি, ডাকসু নেতাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা পেপারে পড়েছি, বিবিসি বাংলায় শুনেছি। তো আমি একে ওকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলাম জানার জন্যে যে কে কোন দল থেকে ইলেকশান করছে, কে কেমন ইত্যাদি। জানতে পারলাম ইউকসু ইলেকশান হয় প্যানেল ধরে, সাতজনের একেকটা প্যানেল...ছাত্র দল একটা প্যানেল দেয়, ছাত্র লীগ একটা প্যানেল দেয়, ইউনিয়ন একটা প্যানেল দেয় ... এরকম। প্যানেল গুলো পরিচিত হয় ভিপি-জিএস-এজিএস প্রার্থীর নামে। যাই হোক ধীরে ধীরে প্যানেল ঘোষণা করা হল প্রায় সব দলের। তারেক-কামাল-কল্লোল প্যানেল হল ছাত্রদলের... জাহিদ-খালেদ-তুহিন হল ছাত্রলীগের প্যানেল। অন্য আরও প্যানেল বোধহয় ছিল কিন্তু আমার মনে নাই। প্রচারনা শুরু হল। সারা বুয়েট ছেয়ে গেল পোস্টারে পোস্টারে। এরকম একটা পোস্টারে একটা চেনা মুখ দেখে তো আমি অবাক...... আনোয়ার জাহিদ ভাই। জাহিদ-খালেদ-তুহিন প্যানেলের জাহিদ যে আনোয়ার জাহিদ তা দেখে তো আমি অবাক। বছর খানেক আগের বুয়েটে ভর্তির কোচিং সুত্রে আনোয়ার জাহিদ আমাদের অতি প্রিয় মানুষ। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় তখন পর্যন্ত ১০০% স্কোর করা একমাত্র পরীক্ষার্থী উনি। সান রাইজ কোচিং সেন্টারে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে আমাদের নিয়মিত ক্লাস নিতেন ইনি। আনোয়ার জাহিদ আমাদের ভোটে সেরা টিউটরও নির্বাচিত হয়েছিলেন সান রাইজের। আমি তো মহা খুশী এমন একজন গুনী মানুষ ইলেকশান লড়ছেন দেখে। একটু আশা জাগল মনে যে না ছাত্র রাজনীতি মানেই নষ্ট ছেলে আর ক্যাডারদের তাণ্ডব না। আমরা যারা লেভেল ১ টার্ম ১ এর নতুন ছাত্র ছাত্রী তারা তো প্রায় নিঃসন্দেহ যে জাহিদ ভাই ই জিতে যাচ্ছেন।

আমি হলের বাসিন্দা না হওয়ায় বিকালের পর কিরকম জম জমাট প্রচারণা চলত তা সম্পর্কে কোন আইডিয়া ছিল না। তবে দুপুরে আর বিকালে বাস ছাড়ার সময় লাল দেয়ালে, ক্যাফেতে আর অফ আওয়ারে মিছিল দেখে বুঝতাম জম্পেস প্রচারনা চলছে। এর মধ্যে ব্যাক্তিগত কারনে আমাকে দিন বিশেকের জন্যে হলে উঠতে হল যদিও এতে মন খুব সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু সত্যি বলতে কি এই বিশটা দিন ছিল আমার জীবনে অন্যতম স্মরণীয় একটা সময়। একদিন বিকালে হলের গেস্ট রুমে প্যানেল পরিচিতি দিতে আসল তারেক পরিষদ। শুনে এলাম তাদের বক্তব্য। এর পর দিন আসল জাহিদ পরিষদ। তাদের কথা বার্তাও শুনলাম। এরপর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আলোচনায় বসলাম কোন প্যানেল কেমন তা নিয়ে। জানা গেল তারেক ভাই মানুষ ভাল, দয়ালু কিন্তু রেজাল্টে একটু সমস্যা আছে। অন্যদিকে জাহিদ ভাই ও মানুষ ভাল, দিল খোলা কিন্তু উনারও সেই রেজাল্টেই সমস্যা। জাহিদ ভাইয়ের সমস্যা উনার রেজাল্ট বেশী ভাল, গোল্ড মেডেলিস্ট হতে যাচ্ছেন তাই সাধারন ছাত্র কে রিপ্রেজেন্ট করেন না, দুই দিন পর টিচার হয়ে ছাত্রদের কে বাঁশ দেবেন তা নিশ্চিত... এও শুনলাম যে ফার্স্ট প্লেস টিকিয়ে রাখতে তো উনাকে স্যারদের তেল দিয়ে চলতে হবে, ছাত্রদের স্বার্থ দেখবেন কিভাবে? ওয়ান ওয়ানের একজন স্টুডেন্ট হিসাবে খুব অবাক হয়েছিলাম এটা ভেবে যে কোথায় আসলাম রে বাব... স্যারদের তেল না দিলে ফার্স্ট হওয়া যায় না! অন্যদিকে তারেক ভাইয়ের অবস্থান রেজাল্টের দিক থেকে জাহিদ ভাইয়ের প্রায় উলটা পথে - তাই উনি ছাত্র মধ্যে জনপ্রিয়, ছাত্রদের পি.এল. বাড়ানোর আন্দলনে তারেক ভাইকে পাওয়া যাবে সাথে। রেজাল্ট খারাপের ভয় নাই তাই স্যারদের মুখামুখি হতে তিনি দ্বিধা করবেন না।

দিন ঘনিয়ে আসতে লাগল ইলেকশানের। বাড়তে লাগল প্রচার, ভুল বললাম বলা যায় বাড়তে লাগল অপপ্রচার। রটানো হল জাহিদ ভাইয়ের জামাতী কানেকশান। ফার্স্ট ইয়ারে নাকি উনি জামাতের সাথী বা কিছু ছিলেন এখন ভোল পালটে লীগের বেশ ধরেছেন। এ নিয়ে জাহিদ ভাই খোলা খুলি চ্যালেঞ্জ জানালেন যে কেউ যদি প্রমান দিতে পারে তাহলে উনি ভিপি পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। কেউ কোন প্রমান হাজির করল না ... নতুন অভিযোগ এনে হাজির করল...জাহিদ ভাইয়ের বিশাল প্রাসাদ নির্মাণের কাজ চলছে উত্তরায়...প্রাসাদের কাজ শেষ করার জন্যে যা টাকা দরকার তা উনি ভিপি হলে ইউকসু তহবিল থেকে হাতিয়ে নিবেন। জাহিদ নানা ভাবে অভিযোগ খন্ডনের নানান চেষ্টা করলেন...উনার বন্ধুরা দিন রাত হলের রুমে রুমে গিয়ে বুঝিয়ে আসল জাহিদের টাকার দরকার নাই। কাজ কত টুকু হল বুঝলাম না ...কিন্তু নতুন আরেক অভিযোগ এসে হাজির হল। জাহিদ ভাইয়ের বান্ধবী ঘটিত সমস্যা আছে ... ক্যারেক্টার প্রবলেম। আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকলাম কি ভাবে জেতা অবস্থান থেকে জাহিদ ভাই পেছাতে শুরু করলেন। আমরা যারা জাহিদ ভাইয়ের ভক্ত কুল তারা জাহিদ ভাইকে অনুরোধ করতে থাকলাম যে এরকম গুজব আমরাও ছড়াই না কেন? এক কথায় উনি তা নাকচ করলেন...কোন রকম ব্যাক্তি গত আক্রমন নয় প্রতিপক্ষকে। আমরা মেনে নিতে বাধ্য হলাম।

এরপর আসল সেই বহুল প্রতীক্ষিত ইউকসু ডিবেট সপ্তাহ। প্রথমে হল জিএস ডিবেট। লড়বেন খালেদ ভাই আর কামাল ভাই। সেই বছর বুয়েট জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এবং সেই বিতর্ক দলের অধিনায়ক ছিলেন সিভিলের এই খালেদ ভাই। স্বাভাবিক ভাবেই উনার উপর অনেক ভরসা ছিল। একটা প্রশ্নের কথা মনে আছে আমার ... খালেদ ভাইকে করা একটা প্রশ্ন ছিল যে আপনি ছাত্রদের দাবী আদায়ে স্যার দের উপর কি ভাবে চাপ প্রয়োগ করবেন। উনার উত্তর ছিল একজন ডিবেটর হিসাবে এটাই আমার দক্ষতার জায়গা ... যুক্তির প্রয়োগে নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠাই বিতারকিকের কাজ। তাই স্যার দের কে যুক্তির মাধ্যমে দাবীর প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে আমার এই দক্ষতা কাজে লাগাব ইনশা-আল্লাহ। খালেদ ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল ভাই কে যখন এই একই প্রশ্ন করা হল উনি উত্তর দিলেনঃ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর ... বিতারকিক কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না দাবী আদায়ে......" অডিটোরিয়ামে হাত তালির ঝড় বয়ে গেল... উনার বাকি বক্তব্য শুনতে পাই নি। এরকমই ঘটল অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরে। কামাল ভাই কথার প্যাঁচে খালেদ ভাই কে কুপকাত করে গেলেন নিজে কি করে কি করবেন তার কিছুই না বলে এবং বিপুল হাত তালি ও পেলেন। বোঝাই গেল যে খালেদ ভাই ও হারতে যাচ্ছেন। মন খারাপ করেই হলে ফিরেছিলাম সেই সন্ধ্যায়।

এরপর হল ভিপি ডিবেট। একটা প্রশ্ন ছিল জাহিদ ভাইয়ের কাছে যে "আপনি কি মনে করেন যে বুয়েটের ছাত্র সংসদের ইলেকশান দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর ব্যানারে হওয়া উচিত? এই যে লীগের প্যানেল, দলের প্যানেল এরকম রাজনৈতিক প্লাটফর্মে থাকলে কি বুয়েট কে জাতীয় রাজনীতির হানাহানি কাটাকাটি থেকে দূরে রাখা যাবে?" জাহিদ ভাইয়ের উত্তর ছিল "অবশ্যই রাজনৈতিক দলের প্রভাব মুক্ত থাকা উচিত বুয়েটের ছাত্র সংসদ। রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে ইউকসু কে যেন বের করে আনা যায় আমি সেই চেষ্টাই করব। ইউকসু আমাদের দাবী দাওয়া তুলে ধরার প্লাটফর্ম ...তাই এটা জাতীয় রাজনীতির প্রভাব মুক্ত থাক সেটাই আমার কাম্য।" আমি খুব খুশী হয়েছিলাম উত্তরটাতে কিন্ত সে খুশী বেশীক্ষন টেকেনি। আমার এখনও মনে আছে একই প্রশ্নের উত্তরে তারেক ভাই বলেছিলেন আমি কি চাই সেইটা ব্যাপার না ... ছাত্র রা কি চায় সেটাই মুখ্য ... হাত তালি তে অডিটোরিয়াম কেপে উঠেছিল। এরকম আরও অনেক প্রশ্নের উত্তরেই তারেক ভাই উনি কি করবেন বা উনার কি করনীয় কি তা এড়িয়ে গিয়ে কথার ফুলঝুরি তে উত্তর দিয়েছিলেন। যেমন আরেকটা প্রশ্ন ছিল জাহিদ ভাইয়ের কাছে "আপনি জিতলে কোন কাজ টি সর্ব প্রথম করবেন?" উত্তরে উনি বলেছিলেন "হলের ও ক্যাফের খাবারের মান উন্নয়ন হবে সব চাইতে প্রথম কাজ"/ অন্যদিকে তারেক ভাই একই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন "আমি সবার আগে আমার প্রতিপক্ষকে জড়িয়ে ধরব এই বলে যে আমরা বুয়েটিয়ান রা ভাই ভাই আমাদের কোন বিভেদ নাই।"

সবার নিশ্চয়ই এতক্ষনে কিছুটা ধারণা হয়ে গেছে যে '৯৭ এর ইউকসু ইলেকশানে কে জিতেছিল। ঠিক। ছাত্রদল সমর্থিত তারেক-কামাল-কল্লোল প্যানেলের সাত জনই জিতে গিয়েছিলেন। জাহিদ ভাই প্রায় ৬০০ ভোটে হেরে গেছিলেন। সব চেয়ে কাছাকাছি কন্টেস্টে হেরেছিলেন খালেদ ভাই ৮০ বা ৮২ ভোটে। সেই ইলেকশনে আমি একজন পোলিং এজেন্ট থাকায় ভোট গণনার সময় ভেতরেই ছিলাম। যখন ভোট গণনা চলছিল তখন অবাক হচ্ছিলাম দেখে যে সবাই মোটামুটি রাজনৈতিক দল বিবেচনায় নিয়ে প্যানেল ধরে ভোট দিয়েছে...ইন্ডিভিজুয়াল প্রার্থীর ব্যাপারে ভাল মন্দ বিচারটা গুরুত্বই পায় নি। যদি কোন ব্যালট পেপারের প্রথম ভোট টা ১ পড়ে তাহলে মোটামুটি এটা প্রায় নিশ্চিত ছিল যে বাকি গুলো ৭, ১৪, ২১, ২৮, ৩৫, ৪২ তে পড়বে। সুতরাং যতই সবাই জাতীয় রাজনৈতিক দলের ব্যানার বাদ দিয়ে ইলেকশানের কথা বলুক না কেন ভোট দেয়ার সময় কিন্তু প্যানেল ধরে বিএনপি বা আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্যানেল কেই ভোট দিতে দেখেছি।

প্রথম বারের মত খুব কাছে থেকে ফলো করা এবং সেই সাথে অনেকাংশে নিজে জড়িত থাকা কোন ইলেকশান থেকে আমার টেক হোম লেসন ছিল ডার্টী গেইম খেলতে পারে না দেখেই অনেক ভাল প্রার্থী ইলেকশানে হেরে যায়...আর প্রার্থী নিজে কি করবে না করবে এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব শোনার চাইতে ভোটাররা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল হওয়া দেখতেই বেশী পছন্দ করে। ভাল ছাত্ররা কেন রাজনীতিতে আসে না সে প্রশ্নের উত্তর ও পেয়েছিলাম সেই বারই।

এরপর আমরা থাকতেই বুয়েটে আরও দুটা ইউকসু ইলেকশান হয়েছে ১৯৯৯ আর ২০০১ সালে। সেসবের ও অনেক গল্প মনে পড়ছে...আরেক পর্বে লিখব হয়ত সময় সুযোগ পেলে। কিন্তু প্রতি বারই বুয়েটের ছেলেমেয়েরা অদ্ভুত অদ্ভুত যুক্তির বলে ছাত্র সংসদ নির্বাচিত করেছে। যার ফলাফলও কিন্তু এখন হাতে নাতে পাচ্ছে বুয়েট।


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

আমার মনে হয় না দলের সমর্থন দেখে সবাই ভোট দিয়েছে, অন্তত আমি দিই নি। আনোয়ার জাহিদকে ইলেকশনে দেখে আমিও অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু ভালো ছাত্র হিসেবে তার সাথে সাধারণ ছাত্রদের যে দূরত্ব ছিলো, তারেক ভাইয়ের সে সমস্যা ছিলো না। তারেক ভাইকে সবাই নিজেদের একজন মনে করেই ভোট দিয়েছে। আমার ধারণা, উনি লীগের প্যানেল থেকে দাঁড়ালেও ফলাফল একই হতো।

বাঙ্গালী এর ছবি

এর মানে হল // নিজেদের// মনে করাতে পারলেই ইলেকশনে জেতা যায়, আর কিছু লাগে না

Fallen Leaf এর ছবি

কিছু ছাত্র তো অবশ্যই প্যানেল ধরে ভোট দেয় নি.... তা হলে তো খালেদ ভাই আর জাহিদ ভাই দুজনেই একই ভোটের ব্যাবধানে হারতেন... আপনি হয়ত সেই দলেই পড়েন।

মাটি ছেঁচড়ে যাওয়া জিন্সের প্যান্ট, বুক খোলা পাঞ্জাবী, সার্বক্ষণিক সিগারেট হাতে ক্যাফের সিঁড়িতে বসে আড্ডাবাজীতে রত রক বয় ইমেজ আলা তারেক ভাইকে আমি বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানের ভিপি প্রার্থী হিসাবে দেখে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। সাধারন ছাত্র রা বোধ হয় এটাকেই পছন্দ করেছে। আমি কিন্তু আরেকটু দায়িত্ব শীল আবহের কাউকে বুয়েট নির্বাচিত করবে এই আশা করেছিলাম। আমি যে ভুল ছিলাম তা তো বলাই বাহুল্য।

buet এর ছবি

এই তারেকের চাদাবাজি পেপারে রিপোরট করার কারোনে বহিরাগত দিয়ে এক ছাতরোকে তারেক মারিয়েছিলো; তারেক আর পরে বুয়েটে ঢুকতে পারেনি

Fallen Leaf এর ছবি

তারেক ভাইকে যেমন দেখেছি তাতে এটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। ধন্যবাদ জানানোর জন্য।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তারেক ছিলো বুক খোলা, পুরোনো সাদা পাঞ্জাবিওয়ালা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাঙ্গা স্যুটকেস খুব কাজের জিনিস। আর বুয়েটে বাঁশের কেল্লার ফ্যান সেই আমলেও কম ছিলো না।

আনোয়ার জাহিদ ছাত্রলীগের ভিপি ক্যান্ডিডেট হিসেবে যোগ্য ছিলেন না। তাকে নমিনেশন দেওয়া হয় মাঝরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে এনে। লীগের কাউন্সিলে ভিপি ক্যান্ডিডেট হওয়ার মতো যোগ্য লোক ছিলেন, যেমন, আতাউল ভাই। আনোয়ার জাহিদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় রাজনীতির খেলায় তার হেরে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিলো। তিনি নিজের দলের লোকজনকেই চিনতেন না। রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচন করে ইউকসুকে অরাজনৈতিক করার কথা বলা তার অযোগ্যতা। কোনো নির্বাচনই অরাজনৈতিক নয়।

অল্পকিছু ব্যতিক্রম বাদে অধিকাংশ লোকই ফুল প্যানেলে ভোট দেয়। একটা কারেকশন, ছাত্রদল ফুল প্যানেলে জিতে নাই। ক্রিড়া সম্পাদক হিসেবে লীগ থেকে বাপ্পী জিতেছিলো।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমি শুনেছিলাম আনোয়ার জাহিদ ইউনিয়ন থেকে পল্টি দিয়ে ছাত্রলীগে ঢোকাটাই পরাজয়ের আসল কারণ। তোমাদের ক্লাসেরই একজন বলেছিল।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

উনি ইউনিয়ন থেকে পলটি দিছেন কিনা, আমি নিশ্চিত না। তবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে অ্যাকটিভলি জড়িত ছিলেন না, এটা নিশ্চিত। এ কারণে নিজের দলের লোকজনকেই চিনতেন না। একবার উনার জন্য (লীগ প্যানেল) ক্যানভাস করতে যাওয়ার পথে উনি আমাদের কাছেই ভোট চাইছেন। মজার ব্যাপার হলো, আমার এক ফ্রেন্ডও লীগের প্যানেল থেকে নির্বাচন করতেছে এবং সেও তখন আমাদের সাথেই ছিলো। উনি নির্বাচনের জন্য এতোটা অপ্রস্তুত ছিলেন যে, নিজের প্যানেলের সবাইকেও ভালোমতো চিনতেন না।

তখন বুয়েটে ছাত্রদলের রমরমা অবস্থা ছিলো। কাউন্সিলে লীগের ক্যান্ডিডেট ছিলো সম্ভবত ৩ জন। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রদল ঠেকাতে কাউন্সিলরদের ভোট না নিয়ে এদের ৩ জনকেই বাদ দিয়ে আনোয়ার জাহিদকে ঘুম থেকে তুলে এনে নমিনেশন দেয়। তার ভালো ছাত্র ইমেজকে কাজে লাগানোর ধান্দা ছিলো। সেই নির্বাচনের পরে আর কোনোদিন লীগের মিছিলে যাই নাই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

Fallen Leaf এর ছবি

তাহলে তো বলতে হবে অন্তত আনোয়ার জাহিদ কে নমিনেশন দেয়া টা গুড মুভ ছিল। এর পরের ইলেকশনে আর যাই হোক লীগের কাউন্সিলরের অভাব হয় নাই। আনোয়ার জাহিদ কে দেখেই হোক আর যাই হোক অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমাদের ক্লাসেরই তিন বা চার জন লীগের কাউন্সিলর ছিল।

কোন ছেলে বা মেয়ে যদি লীগের পক্ষে কথা বলে তাহলেই তাকে লীগের দালাল বলে গালি দেয়া হয়। এটা বেশী করে ইউনিয়নের তথাকথিত শুদ্ধ রাজনীতির ছেলে পেলেরা। তো এই ভয়েই অনেকে নীরব সমর্থক হয়েও লীগের পক্ষে কাজ করে না। তা না হলে তো আপনি যেমন বলছেন যে তিন জন কাউন্সিলর ছিল মাত্র, তাতে আনোয়ার জাহিদের আরো বেশী ভোটে হারার কথা ছিল।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কাউন্সিলর ৩ জন না, ভিপি ক্যান্ডিডেট হতে আগ্রহী ৩ জন ছিলো। কাউন্সিলর ছিলো ২৫০এর মতো। এই ৩জনকে ডিঙিয়ে আনোয়ার জাহিদের নমিনেশন পাওয়া লীগের পোলাপানই ভালোভাবে নেয় নাই। আনোয়ার জাহিদ যে ভোট পেয়েছিলেন, তা মূলত প্যানেলের জন্য, ব্যক্তি ইমেজ কাজ করে নাই। আনোয়ার জাহিদকে দেখে পোলাপান অনুপ্রাণিত তো হয়ই নাই; বরং লীগের রাজনীতি থেকেই সরে গিয়েছে। সারা বছর পার্টির জন্য কাজ করার পরে হাইজিপিএই যদি নমিনেশনের প্রভাবক হয়, তাইলে স্বার্থ ছাড়া কেউ পার্টি করবে না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

Fallen Leaf এর ছবি

জামাতী ট্যাগের উৎস কোথা থেকে তা বোঝা গেল। ইউনিয়ন থেকে লীগে যোগ দেয়া তো নতুন কিছু না। যেই বাম রা পচলে ভাম হয়। যারা পচন ধরার আগে নিজেকে শুধরাতে পারে তারা লীগে যোগ দেয়...মতিয়া চৌধুরী থেকে শুরু করে নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ আরো অনেক উধাহরন তো চোখের সাম্নেই আছে।

রাগিব এর ছবি

আমরা ঠিক এর পরের সেমিস্টারে বুয়েটে ঢুকি। আমার খালি এটাই মনে আছে, ঢোকার পরে পরেই একটা বিশাল মিছিল দেখেছিলাম, যার শ্লোগান ছিলো,

"তারেক কামাল অবাঞ্ছিত,
অবাঞ্ছিত অবাঞ্ছিত"

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

Fallen Leaf এর ছবি

তারেক ভাইকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল বলে কানে এসেছিল। তবে আসলে করা হয়েছিল কিনা জানিনা। উনি কি ঠিক মত পাশ করে বের হতে পেরেছিলেন? জানালে খুশী হব।

হাসিব এর ছবি

এই মন্তব্যটা,

যখন ভোট গণনা চলছিল তখন অবাক হচ্ছিলাম দেখে যে সবাই মোটামুটি রাজনৈতিক দল বিবেচনায় নিয়ে প্যানেল ধরে ভোট দিয়েছে...ইন্ডিভিজুয়াল প্রার্থীর ব্যাপারে ভাল মন্দ বিচারটা গুরুত্বই পায় নি। যদি কোন ব্যালট পেপারের প্রথম ভোট টা ১ পড়ে তাহলে মোটামুটি এটা প্রায় নিশ্চিত ছিল যে বাকি গুলো ৭, ১৪, ২১, ২৮, ৩৫, ৪২ তে পড়বে। সুতরাং যতই সবাই জাতীয় রাজনৈতিক দলের ব্যানার বাদ দিয়ে ইলেকশানের কথা বলুক না কেন ভোট দেয়ার সময় কিন্তু প্যানেল ধরে বিএনপি বা আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্যানেল কেই ভোট দিতে দেখেছি।

আর এই মন্তব্যটা,

প্রথম বারের মত খুব কাছে থেকে ফলো করা এবং সেই সাথে অনেকাংশে নিজে জড়িত থাকা কোন ইলেকশান থেকে আমার টেক হোম লেসন ছিল ডার্টী গেইম খেলতে পারে না দেখেই অনেক ভাল প্রার্থী ইলেকশানে হেরে যায়...আর প্রার্থী নিজে কি করবে না করবে এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব শোনার চাইতে ভোটাররা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল হওয়া দেখতেই বেশী পছন্দ করে।

সাংঘর্ষিক।

ভাল ছাত্ররা কেন রাজনীতিতে আসে না সে প্রশ্নের উত্তর ও পেয়েছিলাম সেই বারই।

উত্তরটা কী?
আমার ধারণা ভালো ছাত্ররা বেশিরকমের স্বার্থান্বেষী হয় বলে ওরা রাজনীতিতে যায় না। তাছাড়া রাজনৈতিক জ্ঞানার্জনের জন্য সময়টা দরকার সেটা তাদের নেই।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার ধারণা ভালো ছাত্ররা বেশিরকমের স্বার্থান্বেষী হয় বলে ওরা রাজনীতিতে যায় না।

বুলস আই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

Fallen Leaf এর ছবি

মানতে পারলাম না। রাজনীতি স্বার্থেরই জায়গা। ছাত্র ইউনিয়নের মানুষ জন সবার মাথায় ঢুকিয়েছে যে রাজনীতি তে আসতে হলে স্বার্থহীন হোয়ে আসতে হবে। তাদের এই কনসেপ্ট সারা বিশ্বে মার খেয়েছে এবং তারা আরও মার খাবে। বাংলাদেশের ভাল ছাত্র রা যত তাড়াতাড়ি এটা বুজবে ততই দেশের জন্যে মঙ্গল।

উন্নত দেশে ভাল ছাত্র রা জাতীয় রাজনীতিতে লিড দেয়...ওবামা ক্লিনটন মারকল সবাই একজন আরেকজনের চাইতে তুখোড় আর এরা ছাত্র অবস্থাতেও ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। এঁরা ছাত্র রাজনীতি করা কে নিজের বায়োডাটাতে এ্যড করতে পারার মত স্বার্থপর দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখে। আমাদের এই তথাকথিত বাম রাজনীতির প্রকোপ থেকে বুয়েটকে দয়ের করতে না পারলে দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছেলে মেয়েদের কাছ বাংলাদেশ রাজনইতিক কোন সুফলই পাবে না।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বাংলাদেশের ভাল ছাত্র রা যত তাড়াতাড়ি এটা বুজবে ততই দেশের জন্যে মঙ্গল।

ভালো ছাত্র কারা? হাই জিপিএ থাকলেই ভালো ছাত্র হয় না। হাই জিপিএধারী অনেকেই সামাজিকভাবে লোকজনের সাথে মিশতেই পারে না, রাজনীতি করা তো দূরে থাক।

অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ভালো হলেই সে সবকিছুতে ভালো হবে, এটা ভুল ধারণা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কল্যাণ এর ছবি

বাম রাজনীতি আগে নাকি বাঁশের কেল্লা আগে দূর করা দরকার?

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

Fallen Leaf এর ছবি

বাম দল। বাঁশের কেল্লা অর্থাৎ বিএনপি-জামাতের সৃষ্টিই হয়েছে বাম দল গুলোর কারনে। ৭৫ এ বিএনপি-জামাত ছিল না দেশে। বাম দল গুলো যদি ৭৫ এর পর যথাযথ ভাবে তাদের বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করত তাহলে জিয়া ক্ষমতা দখল করতে পারত না। আর তাছাড়া প্রোপাগান্ডা মূলক রাজনীতীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে এ দেশে বাম রূপী ভাম রা যার ব্যাপক ব্যাবহার করেছে বাঁশের কেল্লা। @কল্যান

কল্যাণ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

গুরু গুরু

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

হাসিব এর ছবি

হাসি আপনার আরোও পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা প্রয়োজন।

Fallen Leaf এর ছবি

হাসিব...জোক টা ভাল লাগল। আপনি চিন্তা করছেন তো?

Fallen Leaf এর ছবি

অপপ্রচার যা চালানো হয়েছিল তার অনেকটাই ছিল জাহিদ ভাই নিয়ে। কিন্তু ভোটের সময় দেখা গেল তার প্রভাব অন্য প্রার্থীদের উপর ও পড়েছে। আর এই ডারটি গেইম মানে গুজবে কান দিয়ে ভোট যারা দেয় তারাও এখন কার বাশেরকেল্লার সমর্থক বা ওই গোত্রীয়। এই দুটি ব্যাপারকে এক করে দেখলেই আপনার কাছে ব্যাপারটা আর সাংঘর্ষিক বলে মনে হবে না। দুটি ব্যাপার হল একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করতে খুব বেশী সময় দিতে হয় না। এখানে ছাত্র রাজনীতিকে কঠিন বানিয়েছে ইউনিয়ন করা ছেলেপেলেরা। কার্ল মার্কস আর লেলিন বাদ না পড়া থাকলে তারা যে হারে নাক সিটকায় কিংবা শ্রমিকের স্বার্থ নিয়ে চায়ের কাপে আর র্যালগ কর্নারে ঝড় না তুললে রাজনিতির র ও জানে না বলে অছ্যুত করে দেয়, আমেরিকা বিদ্বেষের কথা বলে ক্যাপিটালিস্টিক সোসাইটিকে গুল্লি মারার ধোঁয়া না তুলতে পারা কে ধামাধারী আর ছাপোষা ট্যাগ লাগায় দেয় বলেই ছেলে পেলে রা ভাবে উরে বাবা এত সময় তো নাই এগুলার পেছনে দেয়ার মত। এটাই বুয়েটের রাজনীতি সচেতনা সৃষ্টির মূল বাধা। মানতে চান আর নাই চান।

Emran  এর ছবি

আমার ধারণা ভালো ছাত্ররা বেশিরকমের স্বার্থান্বেষী হয় বলে ওরা রাজনীতিতে যায় না। তাছাড়া রাজনৈতিক জ্ঞানার্জনের জন্য সময়টা দরকার সেটা তাদের নেই।

সহমত।

ডঃ কামাল হোসেন খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। কিন্তু ১৯৬০-র দশকের শেষদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যদি ডঃ কামাল হোসেনের হাতে থাকত, আমরা হয়ত এখনও পূর্ব পাকিস্তানই থাকতাম। আমাদের সৌভাগ্য যে সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন একজন "খারাপ" ছাত্র।

Fallen Leaf এর ছবি

শেখ মুজিব খারাপ ছাত্র ছিলেন এটা মানতে পারলাম না। কামাল হোসেন কি করেছেন না করেছেন সে কথা তুলে তাঁকে ভাল ছাত্রের রাজনীতীতে আসার উদাহরন হিসাবে উল্লেখ করবেন... এটা ঠিক না। উনি দেশ স্বাধীন করতে পারতেন কিনা সেই টা ভিন্ন কথা...দেশ স্বাধীন কোন পুতুল খেলা না। দেশ স্বাধীনের কথা বলে শেখ মুজিব কে খারাপ ছাত্র হিসাবে উল্লেখ করা অন্যায়। শেখ মুজিব এক জনই হয়...এক জনই আসে হাজার বছরে।

আনয়ার জাহিদের "ভাল ছাত্র" হওয়া কে কেমন নেতিবাচক ভাবে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে ব্যাবহার করা হয়েছে সেটাই বোঝাতে চেয়েছি।

Shafiqur Rahman Anu এর ছবি

তাজউদ্দিন আহমেদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি তে ১ম), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (প্রাক্তন নির্বাচিত VP ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও প্রাক্তন CSP) - দুজনই খুব 'ভাল ছাত্র' ছিলেন এবং তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে বেশ সফলও ছিলেন!
শের এ- বাংলাও একজন সফল রাজনৈতিক নেতা ও 'ভাল ছাত্র'ও ছিলেন!
ডক্টর কামাল হোসেন - সাধারণ মানুষের কথা যেমন বুঝতেন না - তেমনি তাদের সাথে মিশতেও পারতেন না (আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)!
যা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শের এ- বাংলারা পারতেন !

সাইদ এর ছবি

ডঃ কামাল হোসেন খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। কিন্তু ১৯৬০-র দশকের শেষদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যদি ডঃ কামাল হোসেনের হাতে থাকত, আমরা হয়ত এখনও পূর্ব পাকিস্তানই থাকতাম। আমাদের সৌভাগ্য যে সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন একজন "খারাপ" ছাত্র।

চলুক

Shafiqur Rahman Anu এর ছবি

তাজউদ্দিন আহমেদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি তে ১ম), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (প্রাক্তন নির্বাচিত VP ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও প্রাক্তন CSP) - দুজনই খুব 'ভাল ছাত্র' ছিলেন এবং তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে বেশ সফলও ছিলেন!
শের এ- বাংলাও একজন সফল রাজনৈতিক নেতা ও 'ভাল ছাত্র'ও ছিলেন!
ডক্টর কামাল হোসেন - সাধারণ মানুষের কথা যেমন বুঝতেন না - তেমনি তাদের সাথে মিশতেও পারতেন না (আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)!
যা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শের এ- বাংলারা পারতেন !

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই লেখাটা যে করেই হোক আমার চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। আজ অন্য লেখা খুঁজতে গিয়ে এটা সামনে চলে আসে। যেহেতু ঐ সময়কালে আমি বুয়েটে ছিলাম এবং প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম তাই গোটা বিষয়টা আমার চোখে কী ছিল তা বলে রাখি।

১.
আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে ইউকসু নির্বাচনটি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, ১৯৯৭ সালে নয়। ঐ সময়ের যারা এখানে আছেন তারা সালটি একটু চেক করে দেখবেন।

২.
আইনত ইউকসু নির্বাচন প্যানেল ধরে হয় না, এবং শিক্ষার্থীরা কোন দলের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে না। বাস্তবে জাতীয় পর্যায়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর বুয়েট শাখা ইউকসুর কেন্দ্র ও হল পর্যায়ের নির্বাচনে নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে আসনগুলোর বিপরীতে প্যানেল দেয়। নির্বাচনী প্রচারণা মূলত ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে করা হয় বলে আপাতভাবে মনে হয় নির্বাচনটা প্যানেল ধরে হয়।

ঐ সময়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ নির্বাচনে ভোট দিতে আসতো না। যারা সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল তারা প্যানেল ধরে ভোট দিত। আর বাকি যারা ভোট দিতে আসতো তাদের মধ্যে ঐ আমলে গ্ল্যামারপ্রীতি ও ছাত্রদলপ্রীতি ছিল ফলে তাদের দেয়া ভোটে সেটার প্রতিফলন দেখা যেতো। কোন পদের জন্য প্রার্থীরা অপেক্ষাকৃত অপরিচিত হলে আপাত নির্দলীয় ভোটাররা ছাত্রদলের প্রার্থীকে ভোট দিতো। এভাবে একবার ইউকসুতে সম্পাদকীয় পদে ছাত্রদলের এমন একজন নির্বাচিত হয়েছিল যে তার গোটা বুয়েট জীবন প্রথম বর্ষে পড়েই কেটেছে। শেষে যখন টের পেল বুয়েট পাশ করা তার কর্ম না, তখন হাল ছেড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। হলের সম্পাদকীয় পদগুলোতে শুধু ছাত্রদলের প্রার্থী বলে এমনসব জন পাশ করতো যারা ঐ পদের কাজ সম্পর্কে কোন ধারণা রাখতো না। আমাদের হলের বার্ষিকী সম্পাদক (অবশ্যই ছাত্রদল করা) কর্তৃক প্রকাশিত এক ম্যাগাজিনে তার লেখা আধা পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়তে ডজন দুই বানান ও ব্যাকরণগত ভুল ছিল। তার নামের নিচে লেখা ছিল ‘বার্সিকি সম্পাদক’। মেধাহীন, যোগ্যতাহীন, তস্কর এমনসব নির্বাচিত সম্পাদকদের আরও ডজনখানেক গল্প বলতে পারবো।

কেউ যদি মনে করে থাকেন বুয়েটের ঐ আমলের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতেন তাহলে তিনি ভুল করছেন। আমি বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে নানা রকমের ছোট-বড়, ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিতদের নির্বাচন দেখেছি। তার প্রত্যেকটিতে আমি দেখেছি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশক্ষেত্রে ভোটারদের বড় অংশ দলান্ধ/স্নেহান্ধ/গোষ্ঠীঅন্ধ/বিবেচনারহিত। ভোটার হিসাবে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এর বাইরের কিছু নয়।

৩.
জাতীয় রাজনীতিতে চিত্র তারকা, খেলোয়ার, শিল্পী ইত্যাদি সেলেব্রিটিদেরকে হঠাৎ করে সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী বানিয়ে দেবার প্রবণতা ওই আমলে বুয়েটেও ছিল। তবে সেটা একটা বিশেষ দলে বেশি দেখা যেতো। সেখান থেকে তারা প্রায়ই ফায়দা তুলতে সক্ষম হতো। এটা দেখেই হোক বা অন্য কোন কারণে হোক নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকের এক ইউকসু নির্বাচনে সম্পাদকীয় পদে ছাত্রলীগ এমন এক সেলেব্রিটিকে (বুয়েট মাপে) মনোনয়ন দেয়। বিষয়টা খোদ ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সারা বছর পার্টির কোন কর্মকাণ্ডে না থেকে, প্রতিপক্ষ ও প্রশাসনের অত্যাচার সহ্য না করে শুধু নির্বাচনের সময় দলের প্রার্থী হবার চেষ্টাকে ত্যাগী কর্মীরা নিজেদের অপমান হিসাবে দেখে। নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা নিজেদের পোস্টারে উপরের কোনে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিলেও ঐ প্রার্থী নিজেই নিজের পোস্টার ছাপায় যেখানে বঙ্গবন্ধুর বদলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাজী নজরুল ইসলামের ছবি ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারেনি সে আসলে কোন দল থেকে নির্বাচন করছে। নির্বাচনের ফলাফল কী হয়েছিল সেটা সবার বোধগম্য। এমন অভিজ্ঞতা পার হবার পরেও ছাত্রলীগ ১৯৯৬-এর নির্বাচনে পার্টি না করা সেলেব্রিটিকে কী বিবেচনায় ভিপি পদে মনোনয়ন দিয়েছিল সেটা স্পষ্ট নয়।

১৯৯২-১৯৯৬ সময়কালের বুয়েটে ছাত্রলীগের কোন মিটিংয়ে-মিছিলে-আন্দোলনে আনোয়ার জাহিদকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কেউ দেখে থাকলে দয়া করে এখানে বলে যাবেন। সময়কালটা বিএনপি’র আমল। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের দৌরাত্ম যেমন ছিল তেমন খালেদা জিয়ার ‘ডাল-ভাত দর্শনের প্রচারক’, আট জন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে উপাচার্য হওয়া অধ্যাপক শাহজাহানের অত্যাচারও ছিল। উল্লেখ্য, অধ্যাপক শাহজাহান হচ্ছেন বুয়েটের প্রথম উপাচার্য যার বিরুদ্ধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী – তিন পক্ষই আন্দোলন করেছিল। শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচী চলাকালে বুয়েট ছাত্রলীগের হাম্মাদ মুজিব রূপনকে পুলিশ যখন রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে, বুটের লাথি মেরে আধমরা করে গ্রেফতার করেছিল তখন ছাত্রলীগ ও অ-বিএনপি ছাত্র সংগঠনগুলো যে আন্দোলন করেছিল তখন রূপনের ব্যাচমেট আনোয়ার জাহিদের ভূমিকা কী ছিল? কারো জানা থাকলে দয়া করে এখানে বলে যাবেন।

৪.
১৯৯২-১৯৯৬ সময়কালে আনোয়ার জাহিদকে বুয়েটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া – কোন কর্মকাণ্ডটিতে দেখা গিয়েছিল? যারা সানরাইজ কোচিং-এ তার ছাত্রছাত্রী ছিলো না তাদের সাথে তার ইন্টার্যাংকশনের কোন সুযোগ কি ছিল? তারা কী করে বুঝবে যে সে ‘গুণী মানুষ’! আনোয়ার জাহিদের রানিং মেট খালেদ হোসেন চৌধুরী প্রথম বর্ষে থাকতেই ইউকসু নির্বাচন করে রশীদ হল থেকে বিতর্ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিল। সেই বার গোটা বুয়েটে ছাত্রলীগ কেবল ওই একটা পদই পেয়েছিল। খালেদ ঐ সময়কালে বুয়েটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অন্দোলনগুলোতে জড়িত ছিল, বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিল, ঐ বছরের জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন রশীদ হল দলের সদস্য ছিল (দলনেতা ছিল ছাত্রলীগের কর্মী আনোয়ার পারভেজ শেফিন)। শুধু খালেদের প্রফাইল বিবেচনায় নিলেও ভিপি প্রার্থী হিসাবে আনোয়ার জাহিদ তার তুলনীয় নয়। ভুলটা আনোয়ার জাহিদের নয়, ভুলটা তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতৃত্বের। ইয়ার লস থাকলে ভিপি প্রার্থী করা যাবে না, বা নির্বাচনে জেতা যাবে না এমনটা বুয়েটে ঠিক হলে ঠিক তার আগের বার ছাত্রদল থেকে ইয়ার লস করা একজন ভিপি নির্বাচিত হতে পারতো না। ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা মঞ্জুর রহমান বা আতাউল মাহমুদকে বাদ দিয়ে আনোয়ার জাহিদকে মনোনয়ন দেয়া খোদ ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরাই মেনে নেয়নি।

৫.
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী তারেক-বিন-আজিজের জামাকাপর কেমন বা তার অ্যাপিয়ারেন্স কেমন এগুলোর চেয়ে জরুরী ব্যাপার হচ্ছে তারেক আপাদমস্তক রাজনৈতিক কর্মী। ছাত্রদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার সরব ও সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল। সম্ভবত বুয়েট ছাত্রদলের সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিল। সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল। ১৯৯৬ সালে বুয়েটে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্কে রানার-আপ দলের দলনেতা ছিল তারিক (সেবার চ্যাম্পিয়নও বুয়েটের আরেকটি দল হয়), বারোয়ারী বিতর্কের রানার-আপও সে। তারেক উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডস্ট্যান্ড করা, সুতরাং সে খুব খারাপ ছাত্র ছিল এমনটা বলা যায় না। যেহেতু সেই সময়ে বুয়েটে ছাত্রদল সবচে’ বড় সংগঠন ছিল, এবং তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলপ্রীতি ছিল তাই নির্বাচনে তারেকের জেতাটা খুব কঠিন কিছু ছিল না। তারেকের বিপক্ষে যারা দাঁড়িয়েছিল তা্দের কেউই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি।

৬.
১৯৯৬ সালের পরের কথা বলতে পারবো না, তবে ঐ সময় পর্যন্ত বুয়েটে প্লেস ধরে রাখতে কোন ডিপার্টমেন্টেই শিক্ষকদের তেল দেয়ার কোন ব্যাপার ছিল না। এই প্রকার কথাও তখন শুনিনি। যারা ফলাফলের প্রথম দিকে থাকতো তাদের কেউ অটো ভ্যাকেশন বা পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনে যুক্ত হলে শিক্ষকরা তাকে ডেকে একটু বাড়তি বকাবকি করতেন — এইটুকুই। অন্য কোথাও যেমন বাজার করে দেয়া, বাড়ির কাজ করে দেয়া, উপহার দেয়া, আর্থিক সুবিধা আদায় করার গল্প শুনি বুয়েটে কখনোই এমন নোংরামীর কথা শুনিনি।

৭.
সকাল দশটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মিছিল করার পর্ব বাদ দিলে ঐ আমলে বুয়েটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত শুরু হতো সন্ধ্যার পর থেকে। সবচে’ কার্যকর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলত রাত দশটা থেকে। ইউকসু নির্বাচনের মৌসুমে যে হলে হলে, পলাশীতে আর রেস্টুরেন্টগুলোতে ভোটের রাজনীতির চর্চ্চা দেখেনি তার পক্ষে নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করা সম্ভব নয়। দুনিয়ার যে কোন নির্বাচনে প্রার্থীদের নাড়িভুঁড়ি বের করে ম্যাগনিফায়িং গ্লাসে পরীক্ষা করার ব্যাপার ঘটে; কিছু ফাও গুজবও রটে। বুয়েটও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে বুয়েটের মতো ছোট জায়গায় ফাও গুজব হালে পানি পায় না।

৮.
ইউকসু ডিবেট আর দশটা ডিবেটের মতো নয়। সেখানে প্রথমে প্রত্যেক প্রার্থী নিজে কী কী করতে চায়, কী ভাবে সেটা বলার সুযোগ পায়। প্রশ্নোত্তর পর্বে একই প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেক প্রার্থীকে দিতে হয়। এই পর্বে কিছু প্রশ্ন আয়োজক বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবের প্যানেল তৈরি করে, বাকিগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগেই সংগ্রহ করা প্রশ্নগুলো থেকে বাছাই করে হয়। প্রশ্নগুলোর মধ্যে কিছু কমন প্রশ্ন থাকে যেগুলো প্রতিবারেই করা হয়ে থাকে।

বিতর্কের প্রথম পর্যায়ে খালেদ/কামাল/জাহিদ/তারেক সবাই নিজে কী করতে চায়, কী ভাবে সেটা বলার সুযোগ পেয়েছিল, সুতরাং সেটা আবার প্রশ্নোত্তর পর্বে মনে করিয়ে দেবার কিছু নেই। কামাল বা তারেক যে মনভুলানো কথাগুলো বলেছিল সেই কথাগুলো আগের ইউকসু ডিবেটগুলোতে আরও অনেকে বলে গিয়েছিল এবং তাদের বেশিরভাগ জন এই প্রকার কথা বলার দরুণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরক্তির কারণ হয়ে ভোট খুইয়েছিল।

৯.
ইউকসুতে আমার নির্বাচন করার এবং ছাত্রদলের প্রার্থীর কাছে ২ ভোটের ব্যবধানে হারার অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের ছাত্রলীগের পাঁচজন কর্মী সময়মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা পরিশোধ না করায় তাদের ভোটাধিকার ছিল না। ঐ পাঁচজন ভোট দিলে আমি হয়তো ৩ ভোটের ব্যবধানে জিততে পারতাম। আমার খেদটা সেখানে নয়। আমার খেদটা হচ্ছে আমার প্রতিপক্ষ অন্ততপক্ষে ঐ সম্পাদকীয় পদটার জন্য অযোগ্য প্রার্থী ছিল। তার গোটা আমলে সে একটা কাজও করেনি বা করতে পারেনি। ঐ পদে তার অযোগ্যতা সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অবগত ছিল। তবু তারা তাকেই ভোট দিয়েছিল ছাত্রদলের প্রার্থী বলে।

নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলাম বলে আমি ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে দেইনি। পরবর্তীতে আমার রাজনৈতিক সহকর্মীদের সাথে মিলে যা কিছু করেছি তাতে যে অতি সামান্য কাজ হয়েছিল তাতে যারা আমাকে ভোট দেয়নি তারাও নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছিল। ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে গীতায় বর্ণিত নিষ্কাম কর্মের মতো ‘ফল লাভের আশা না করিয়া কর্ম করিয়া যাওয়া’। বুয়েটে চাইলে অনেক কিছু করা সম্ভব ছিল, নির্বাচিত না হয়েও করা সম্ভব ছিল। সেটা অনেকেই করে দেখিয়েছে। দলে পদ না পেলে বা নির্বাচিত হতে না পারলে যে সব ‘ভালো ছাত্র’ রাজনীতির ব্যাপারে উৎসাহ হারায় অমন বসন্তের কোকিলরা রাজনীতিতে না আসলেই ভালো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।