মাসুদ রানারে স্মরি

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: শুক্র, ১৭/০৩/২০০৬ - ৬:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি পড়তে শিখেছি অল্প বয়সে। বড় ভাইবোনেরা অনেকদিন পর একটা ছোট ভাই পেয়ে বেশ সময় দিতেন আমাকে, অনেকটা খেলনার মতো, তাই হুড়োহুড়ি করে লেখাপড়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন। তাই আমি মাসুদ রানা পড়তে শুরু করি ফেলুদারও আগে, ক্লাস ফোরে পড়ার সময়। তার আগে অবশ্য কুয়াশা সিরিজ পড়ে শেষ করে ফেলেছি, আর শঙ্কু খানিকটা। তারপরই এই মহাপুরুষের কীর্তি আমার গোচরে আসে।

তবে আমি এঁচড়ে তখনও পাকিনি। মাসুদ রানার কীর্তি আমাকে বিস্মিত করতো। প্রতি পর্বেই সে নিত্যনতুন কোন নারীর অন্দরমহলে (আক্ষরিক অর্থে নিলে লজ্জা পাবো, আবার রূপক অর্থে নিলেও) আনাগোনা করে, একেওকে মেরেধরে একশা করে ছাড়ে, আবার পদে পদে নানা রসিক বোলচাল ... আমি মুগ্ধ হই তার কার্যকলাপে। ঠিক করি বড় হয়ে মাসুদ রানা হবো। এর আগে ভাবতাম জলদসু্য হবো, দেখলাম জলদসু্য হওয়ার চেয়ে মাসুদ রানা হওয়াই বেশি মাস্তিপ্রদ ও মৌজদায়ক।

মাসুদ রানার বান্ধবীদের প্রেমে পড়তাম আমিও। তাদের দেহ সৌষ্ঠব ও সলজ্জ সমর্পণের রাখোঢাকো বর্ণনা পড়ে সেই বালক বয়সেই একটু পাক ধরলো আমার মনে। হুমম। মনে মনে ভেবে রাখি, অনাগতা সোহানাদের কী কী উপায়ে খাতির করা যায়।

কিন্তু মাসুদ রানার প্রচ্ছদগুলো শাহাদাৎ চৌধুরী একেবারে মন খুলে করতেন। বিবসনা নারীর মোহময়ী কটাক্ষ দিয়ে একেবারে ভরপুর ... মূল্য এক কোটি টাকা মাত্র, আই লাভ ইউ ম্যান, নীলছবি ... এগুলো বেশ ইয়ে প্রচ্ছদসম্পন্ন ছিলো। আমার বড় ভাই খুব যত্ন করে মলাট দিতেন সব বইয়ে, কৌতূহলী বাড়ন্ত আমি আবার মলাট খুলে খুলে উঁকিঝুঁকি দিতাম।

বইয়ের ব্যাপারে বাসায় গুরুজনেরা বোধহয় একটু উদারই ছিলেন, তবে তাঁরা মাঝে মাঝে পঠিত বইগুলো হাতে নিয়ে উলেটপালেট দেখে গম্ভীর হয়ে যেতেন, নিজেদের মধ্যে গুজগুজ করে মাঝেমাঝে ইনজাংশন জারি করতেন, উঁহু, ঐ শেলফের তিন নাম্বার তাকের বইগুলো আরো বড় হয়ে পড়বে। এখন এই নাও, দার্জিলিং জমজমাট পড়ো বরং। দুষ্টু আমি রাজি হয়ে যেতাম লক্ষী ছেলের মতো, কারণ ঐ দাগী তাকের বইগুলো ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি। মুহাহাহাহাহা।

আমার রানাফিলিয়া অবশ্য বেশিদিন থাকেনি, কয়েক বছর পর রানার অভিযানের মান নামতে থাকে। শান্তিদূতের পর রানা আর পড়িনি সেভাবে, স্কুলের পড়াশোনার চাপ তেমন ছিলো না, তাই কী চাপে পড়ে রানা ছেড়ে দিলাম জানি না নিজেও। এখনও মাঝে মাঝে দানবাকৃতির শেলফের পেছনের সারি থেকে মাঝে মাঝে বার করে পড়ি জিপসী, রিপোর্টার, আই লাভ ইউ ম্যান, হ্যালো সোহানা, বিদায় রানা, চাই সাম্রাজ্য, লাল পাহাড়, অকস্মাৎ সীমান্ত... ভালো লাগে। এক একটা বই যে শৈশবের এক একটা দিনের স্মারক হয়ে আছে, সেটা বুঝতে পারি। সেই পুরনো বাড়ির জানালার মোটা কাঁচ দিয়ে আসা রোদ, কড়ই গাছের ছায়ার কথা মনে পড়ে, এক একটা পৃষ্ঠা উলটাই, মাঝে মাঝে চোখ কেমন ভেজা ভেজা মনে হয়। মাসুদ রানা পড়তে পড়তে আমি আবার শিশু হয়ে যাই।


মন্তব্য

অয়ন এর ছবি

মূল্য এককোটি টাকা যে কতোবার পড়েছি মনে নেই। বারবার পড়ার কিছু গোপন কারণও আছে অবশ্য।

দ্রোহী এর ছবি

আমি মুখারে স্মরি (কি কর্তাম? বুক ফাটে তবুও মুখ ফুটে না!)


কি মাঝি? ডরাইলা?

গৌতম এর ছবি

বড় গ্রামার বা ব্যাকরণ বইয়ের আড়ালে মাসুদ রানারে পড়তাম। সোহানাকে নিয়া তো হেভি ফাইট ছিলো আমাদের মধ্যে। মাসুদ রানা সেখানে জিততে পারে নাই। মুহাহাহাহাহা
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শ্যাজা এর ছবি

পুরনো বইগুলো হাতে পেলে এখনো নেড়েচেড়ে দেখি..

আপনি মিঞা স্মৃতির নিভু নিভু সলতেটা উসকাইয়া দিলেন..


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

antu এর ছবি

বস, এইবার মাসুদ রানা চরতিাষু লিখ্যা ফালান।
অন্তু

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

আহারে! সেই ছোটবেলার লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া মাসুদ রানা!!

কিছুদিন আগে হঠাত খুব রানা পড়তে ইচ্ছা করল। কারো কাছে নাই। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দেশ থেকে ২টা রানা আনলাম। কিন্তু একটাও শেষ করতে পারলাম না।

আসলেই ছোটবেলার সেই রানা আর নাই। নাকি আমিই বড় হয়ে গেছি।

ইয়ে, মানে...

----------------------------------------------------------------

এমন শহরে আমি ঘুরি , নাকি শহরটাই ভবঘুরে?


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

অমিত আহমেদ এর ছবি
আরিফুর রহমান এর ছবি

হম....

এইক্ষেত্রে ক্লিশে 'স্মৃতি তুমি বদনা' ব্যাভার করা যায় বোধয়!

আদিত্য [অতিথি] এর ছবি

ক্লাস সেভেনে থাকটতে মাসুদ রানা পড়া শুরু।
প্রথম ১৫০'র মতো বইয়ের মান খুব ভালো ছিলো।
তারপড়ও বাকি বই পড়ার কি এক নেশা।
৩০০'র বেশি মাসুদ রানা পড়েছি এপর্যন্ত।
ধন্যবাদ কাজীদা হাসি

onlineএ মাসুদ রানা পড়তে চাইলে,এখানে দেখুন:
http://www.facebook.com/pages/Masud-Rana-Series-Qazi-Anwar-Hussain/13442393172

অনিশ্চিত এর ছবি

মাসুদ রানাকে নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কাছে একটা প্রস্তাব আছে।

কাজী আনোয়ার হোসেন মারা যাবার পর (কথাগুলো লেখার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত) স্বাভাবিকভাবেই মাসুদ রানা সিরিজের ইতি ঘটার কথা। অন্য কেউ অবশ্য হাল ধরতে পারেন, কিন্তু সেটা ঠিক হবে না। সুতরাং কাজী আনোয়ার হোসেন বেঁচে থাকতেই আরেকটি চরিত্র সৃষ্টি করা দরকার যে মাসুদ রানার সহযোগী হয়ে আস্তে আস্তে মাসুদ রানার মতোই কিংবা তাঁর চেয়েও দুর্ধর্ষ একজন এজেন্ট হবে। অবশ্যই সেই এজেন্টের নির্মাতা হতে হবে জুনিয়রদের মধ্য থেকে সম্ভাবনাময় একজন। মাসুদ রানার পর সেই এজেন্টই মাসুদ রানার জায়গা দখল করবে, এবং মাসুদ রানা জায়গা নিবেন কাঁচাপাকা ভুরুর জনাব রাহাতের।
‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

রাগিব এর ছবি

মাসুদ রানার বইগুলো তো আর কাজীদা নিজে লেখেন না। বইগুলো লিখে একটা লেখক পুল, আর সম্পাদনাতেও কাজীদা ছাড়াও থাকে সম্পাদক পুল। তাই লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। যেটা চিন্তার কথা, তা হলো কাজীদার নামে বই বের করা হবে কি না ...

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় তিন গোয়েন্দা দ্বারা খুব ই প্রভাবিত ছিলাম...তিন গোয়েন্দার জিনা ভাবতাম নিজেকে..রাফি নামের কুকুর ছানা পোষারও শখ ছিল... এখন জিনার থেকেও অনেক বড় কিছু হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি..অনেক মানুষকে সাহায্য করার সময় এসেছে...

(জয়িতা)

কিংকর এর ছবি

কাজীদা এখন আমার জানামতে কিছউ বিশেষ বিশেষ তম বই গুলো লিখেন। যেমন, ৩০০ তম, ৫০০ তম ইত্যাদি। আর, সিরিজ সম্ভবত চলবে। তবে, অন্য কারও নামে ছাপা হলে জনপ্রিয়তা কিছউটা কমতে পারে। পাবলিক তো আবার ব্র্যান্ড বোঝে বেশী!

মুখফোড় এর ছবি

একটি তথ্য অবগত হইবার পর প্রবল বিস্ময় ও আক্রোশ অনুভব করিতেছি।

বিচিন্তা নামক একটি ভুইফোড় পত্রিকায় আমার এই লেখাটি দাড়িকমাসমেত প্রকাশ করা হইয়াছে। লেখকের নাম উল্লেখ করা হইয়াছে "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"।

বিচিন্তা সম্পাদক কি ইন্টারনেট হইতে আমার লেখাটি আমার অনুমতি না লইয়া অবলীলাক্রমে ছাপাইয়া দিলেন? সম্পাদকের আচরণ এইরূপ তস্করের ন্যায় কেন? তাহার কি ন্যূনতম ভদ্রতাবোধ বলিয়া কোনো কিছু নাই? সে কি গোয়ালঘরে বসিয়া সম্পাদনা শিখিয়াছে?

বিচিন্তার তস্কর সম্পাদনা পর্ষদের প্রতি তীব্র ধিক্কার জানাই। ইহারা মূর্খ, অভদ্র, ছোটোলোক। ইহার সম্পাদককে কানে ধরিয়া রাস্তায় এক চক্কর ঘুরাইয়া আনা উচিত। সে একটি রামছাগল।

পুনরায় এই পত্রিকায় আমার কোনো লেখা চুরি করিয়া ছাপানো হইলে আমি আইনগত ব্যবস্থা লইব।


দুগ্ধপানের জন্য গাভীক্রয়, মোটেও ভাল কাজ নয়

তাসনীম এর ছবি

এটাতো দেখছি মিনার মাহমুদের বিচিন্তা। একসময় দারুণ কাটতি ছিল, যায় যায় দিন পত্রিকা নিষিদ্ধ হওয়ার পরে এটা দারুণ জনপ্রিয় ছিল। এরশাদ এটাও বন্ধ করে দেন, মিনার মাহমুদ পরে আমেরিকায় চলে যান।

পত্রিকাটা আবার মিনার মাহমুদের সম্পাদনায় বের হওয়াতে যতখানি অবাক আর খুশি হয়েছি, তারচেয়েও বেশি বিরক্ত লেগেছে চোরাই মাল দেখে। সম্মানিত সম্পাদক পর্ষদ শুধু দুই একটি লাইন গুগল করলেই বের হয় আসবে আসল আর নকল মাল।

আপনি বরাবর ই-মেইল করুন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বিচিন্তা ভুঁইফোড় পত্রিকা না, নব্বই দশকের সাড়া জাগানো পত্রিকা। মাঝখানে বন্ধ ছিলো, সম্প্রতি আবার চালু হয়েছে। সম্পাদক মিনার মাহমুদ। রিটন ভাই সম্ভবত উনার সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন।

ফোন নম্বর আর ইমেইল এড্রেস তো দেয়া আছে, সেখানে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।

বিচিন্তার সহসম্পাদক টুটুল ভাই আমার বহু পুরাতন অফিসের সহকর্মী। আমি যোগাযোগ করে দেখতে পারি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

কিন্তু মাসুদ রানার প্রচ্ছদগুলো শাহাদাৎ চৌধুরী একেবারে মন খুলে করতেন।

প্রথম দিকের প্রচ্ছদের অনেকগুলিই বোধহয় শিল্পী হাশেম খানের আঁকা ছিল। এখনকার মত বিদেশী সূত্র থেকে নেয়া টুকরা-টাকরা ছবির জোড়াতালি জগাখিচুড়ি কোলাজ নয়। ঐ পুরনো বইগুলির পরবর্তী রিপ্রিন্টগুলিতেও পুরনো প্রচ্ছদগুলি অনেকদিন ধরেই আর নাই - অথচ বই শুরু করার আগে ঐ মধুমাখা প্রচ্ছদগুলি অনেকক্ষন ধরে উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে রহস্য-রোমাঞ্চের জগতে কল্পনার শিরশিরানো পাখা উড়িয়ে দিতে দিতে কখন যে মূল গল্পে মোহাবিষ্ট হয়ে যেতাম তা আর টেরই পেতাম না। অথচ এখনকার প্রচ্ছদগুলি দেখলেই দৌড় দিতে ইচ্ছা করে (যদিও বহু বহু বছর পরে গতকাল রানার সর্বশেষ দুটি সংখ্যা কিনে এনেছি)।
'রত্নদ্বীপের' মূল প্রচ্ছদটা (হাশেম খানের করা) আমার খুব প্রিয় ছিল।

কুয়াশার কথা বললেন। কুয়াশা-৩ এর কথা মনে আছে ? প্রচ্ছদে ছিল এক বেলি ড্যান্সারের আঁকা ছবি। এই ছবিটা বোধহয় আমাকে ঐ পিচ্চি বয়সেও খানিকটা পাকিয়ে দিয়েছিল। রাতের বেলা বালিশের নীচে ঐ সঙ্খ্যাটা লুকিয়ে রাখতাম ;-)। কাহিণীর পটভূমি ছিল মিশর আর পিরামিড। একটা দৃশ্যে কুয়াশা পিরামিডের সুড়ঙ্গে ভিলেনকে ধাওয়া করে বেড়ায়। তখন ঐ রূপকথার মত মরীচিকাময় সুন্দরী বেলি ড্যান্সার জেবা ফারাহ্‌ আর দীবা ফারাহ্‌, পিরামিডের অতল গহবরে গা-শিরশিরানো ভুতুড়ে মমি-তাড়িত রহস্যময় সুড়ঙ্গ - এসবের কথা কল্পনা করেই যে কি পরিমান রোমাঞ্চিত হতাম ভাবতে এখন যেমন অবাক লাগে, তেমনি হাসি পায়। তখন ভাবতাম আর আফসোস করতাম এসব প্রায়-কল্পলোকের বিষয় বোধহয় জীবনে বাস্তবে দেখা হবে না। তাই কল্পনাতেই যা পারি রসাস্বাদন করে নিতাম। অথচ কি আশ্চর্য, বহু বহু বছর পরে যখন সত্যি সত্যি জীবন্ত বেলি ড্যান্সার দেখলাম, এমনকি তার নাচও দেখলাম, পিরামিডের গহবরে মমি-তাড়িত সুড়ঙ্গে নিজেই সশরীরে ঘুরে আসলাম এবং একটায় নয় অনেকগুলোতে - তখন কিন্তু শৈশবের ঐ সুগভীর রোমাঞ্চ, ঐ অভূতপূর্ব অনির্বচনীয় শিহরণ কিছুতেই আর পেলাম না !!!

শৈশবে না দেখেও দেখার যে আনন্দ পেয়েছি, না গিয়েও যাওয়ার যে রোমাঞ্চ অনুভব করেছি -- এই বয়সে সত্যি সত্যি গিয়ে-দেখেও না-যাওয়া যাওয়ার বা না-দেখা দেখার সেই আনন্দ, রোমাঞ্চ বা শিহরনের শতভাগের একভাগও পাইনি।

মন, বয়স, কল্পনা, বাস্তবতা, এসব বড় আজিব চীজ ! তবে, মাঝেমধ্যে এখন মনে হয় - যত রহস্য আসলে নিজের মধ্যেই ! দেঁতো হাসি

তাসনীম এর ছবি

কুয়াশা-৩ এর প্রচ্ছদের কথা মনে পড়ল আপনার মন্তব্যে।

শৈশবের কল্পনার ভ্রমণকে বাস্তবের ভ্রমণ অতিক্রম করতে পারে না - আমারও একই উপলব্ধি। এই নিয়ে স্মৃতির শহরের একটা পর্ব লিখেছিলাম...যদিও পরে মনে হয়েছে লেখাটাতে অনেক কিছু বাদ পড়ে গেছে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খুলনার বিখ্যাত হক বুক ষ্টল থেকে ভাড়ায় মাসুদ রানা পড়তাম স্কুলজীবনে। তখনও ভাড়ায় বই পড়ার আনএথিক্যাল আসপেক্টটা বুঝতাম না। হক সাহেব পাড়ার চাচা ছিলেন তাই অন্য লোক দিয়ে বই ভাড়া করাতে হতো।

সেই উ সেন ১ পড়ার পর দেখা গেলো খুলনার কোত্থাও এর ২য় খন্ড নেই। ঢাকায় বেড়াতে এসে খুজলাম, কিন্তু পেলাম না। তখন জানতামও না যে কোথায় পাওয়া যেতে পারে। অবশেষে খুলনা ফেরার পথে গাবতলীর বিউটি সিনেমা হলের নিচতলায় বইয়ের দোকানটায় ওই ২য় খন্ডটা পেলাম। আহ, কি যে সুখ! বন্ধু মহলে বিশাল একটা 'চিজ' হয়ে যাবো। আর তর সহ্য হচ্ছেনা। বাস ছাড়তে দেরি ছিলো। ওই দোকানে বসেই বইটা একবার শেষ করলাম। তারপর খুলনা আসতে আসতে আরও দুইবার।

কাজীদা লেখা ছেড়ে দেওয়ার পর আর মাসুদ রানা আগের মতো ভালো লাগছিলো না। তাই পড়া কমতে কমতে কবে যে বাদ হয়ে গেছে জানিনা।

======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

guest writer rajkonya এর ছবি

সবাই দেখি মাসুদ রানার দারুন ভক্ত!
তখন প্যাকেজ নাটকের শুরুর সময়। মাসুদ রানার ''প্রাচীর পেরিয়ে''। ভাল খারাপ কিছুই লাগেনি। কেন না, তখন পর্যন্ত আমি মাসুদ রানা সিরিজের একটা বইও পড়িনি।
এর দুই বছর পরে দশম শ্রেণিতে উঠার পরে এক বান্ধবী ক্লাসে ''প্রাচীর পেরিয়ে'' নিয়ে আসল। ক্লাসের মধ্যে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তাম। কী কারণে যেন ক্লাস হচ্ছিল না। স্পোর্টসের সময় মনে হয়। আমরা বইটা পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মাঝখানে মাঝখানে অনেক পৃষ্ঠা কেটে ফেলা হয়েছে। যে সব পৃষ্ঠা আছে, সেগুলোর লাইনগুলোও খুব ভাল মত কালি দিয়ে প্রলেপিত! ঘটনা-কাহিনি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হতাশ হলাম খুব। তবে একদম শেষের লাইন

উলটো বুঝল রানা

এই কথাটা আমাদের খুব হাসাত। এটা আমাদের কোড ল্যাঙ্গগুয়েজ হয়ে গেল। দেঁতো হাসি

এরপরে মাসুদ রানা পড়ার কোন আগ্রহ হয়নি।

হুমায়ুন আহমেদের ''অমানুষ'' বইটা খুব প্রিয়। এটার মাসুদ রানা ভার্সন হল ''অগ্নিপুরুষ''। সবার কাছে অনেক প্রশংসা শুনে কিনে আনলাম পড়ার জন্য। পড়তে গিয়ে বারবার খটকা খাচ্ছি। ছোট্ট মেয়ে এনি আর মাসুদ রানা? কিসের সাথে কী? আর ১২ বছরের মেয়েক এভাবে উপস্থাপন? ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিলাম। কষ্ট করে এনির মৃত্যু পর্যন্ত পড়লাম। তারপর সেই যে বই বন্ধ করলাম আজো খুলিনি।

এই হল আমার জীবনের ''মাসুদ রানা''।

জনাব এর ছবি

ছোট্ট মেয়ে এনি আর মাসুদ রানা? কিসের সাথে কী? আর ১২ বছরের মেয়েক এভাবে উপস্থাপন?

বুঝলাম না ঠিক কি বুঝাইলেন! বইটা সত্যই পড়ছিলেন নাকি ?

জনাব এর ছবি

এর দুই বছর পরে দশম শ্রেণিতে উঠার পরে এক বান্ধবী ক্লাসে ''প্রাচীর পেরিয়ে'' নিয়ে আসল

প্রাচীর পেরিয়ে নামে মাসুদ রানার কোন বই আছে নাকি মনে করতে কষ্ট হইতেছে।
ভুয়া সেই নাটকটা বানানো হইছিল 'পিশাচ দ্বীপ' থেকে। প্রাচীর পেরিয়ে নামে কোন বই মাসুদ রানার প্রথম ২০০ তে নাই- এর পরে আর পড়ি না দেইখ্যা আছে কিনা শিউর না।

মেঘা এর ছবি

অগ্নিপুরুষ রানা সিরিজের অন্যতম একটা সেরা বই। আমি জানি না আপনি কি বুঝেছিলেন তবে আপনার মন্তব্যে আমি খুব অবাক হলাম। আর পিশাচ দ্বীপ তো অবশ্যই একটা ভালো বই। যারা বই পড়ে তারা সবাই বলবে এটা। রানা ভক্ত হবার দরকার নাই এটা বলার জন্য।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

দ্রোহী এর ছবি

ছোট্ট মেয়ে এনি আর মাসুদ রানা? কিসের সাথে কী? আর ১২ বছরের মেয়েক এভাবে উপস্থাপন? ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিলাম।

অ্যানি কে? যদ্দূর মনে পড়ে অগ্নিপুরুষের মেয়েটার নাম ছিল লুবনা। আপনে কি আদৌ বইটা খুলে দেখেছিলেন? নাকি কারো কাছ থেকে বইটার কথা শুনেছেন?

guest_writer এর ছবি

ওহ, হ্যাঁ, অগ্নিপুরুষের মেয়েটার নাম এনি ছিল না। লুবনা। বইটা মনে দাগ কাটেনি বলেই হয়ত নামটা মনে ছিল না।

সাফি এর ছবি

খুব ছোটবেলায় মাসুদরানা পড়তে যেয়ে 'অন্দরমহলের' সন্ধান পেয়ে যাই, তখন হুড়োহুড়ি করে বাসার সব মাসুদ রানা উল্টে পাল্টে বিশেষায়িত অংশ পড়ে ফেলি, আর পড়া হয়নি মাসুদ রানা মন খারাপ

সাজ্জাদ সাজিদ এর ছবি

লেখা এবং অতঃপর মন্তব্যগুলো পড়তে খুবই ভালো লাগছিলো।

তারেক অণু এর ছবি

চলুক
খাড়ান, আমার স্মৃতিও আসিতেছে রানারে লইয়্যাই-

অতিথি লেখক এর ছবি

৪ টি মাস পেরিেয় গেলো, তারেক অণু কথা রাখেনি। কেউ কথা রাখে না। (দীর্ঘশ্বাসের ইমো হবে)

- কাজী

মেঘা এর ছবি

বাসায় আপু বড় থাকার কারণে বাসায় বিভিন্ন রকম বই আসা যাওয়া করতো। অনেকগুলোই আমার হাত দিয়ে ছোঁয়াও নিষেধ ছিলো। রানা সিরিজ স্কুল লাইফের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। মনে আছে একবার স্কুল বন্ধের সময় বাসায় আপু অনেক বই নিয়ে এসেছিলো পড়ার জন্য। তার মধ্যে মৃত্যুর প্রতিনিধি নামের মাসুদ রানা বইটা ছিলো। আমাকে পড়তে না করেছিলো। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে যেয়ে ধরা খেয়ে কি বকাটাই যে খেয়ে ছিলাম আম্মু কাছে। তারপর অনেকিদন পড়া হয় নি রানার বই। কলেজে এসে আবার শুরু করেছিলাম পুরোদমে। কত বই পড়েছি তার হিসাব নাই। ৩০০ বই আমার নিজের কেনা আছে। ইদানিং পড়াই হয় না আর। কাজীদা লিখেন না বলে সেই পুরোনো রানার মজাটা আর নাই।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

Rashed এর ছবি

মূল লেখা পড়ে কি জানি একটা মন্তব্য মনে এসেছিল, কিন্তু পরের মন্তব্য গুলো পড়তে পড়তে ভুলে গিয়েছি কি বলতে চেয়েছিলাম! কড়াই গাছের স্মৃতি উস্কে দিলেন ভাই।

তারেক অণু এর ছবি

"মাসুদ রানা পড়তে পড়তে আমি আবার শিশু হয়ে যাই।"- আহা আহা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অনেক কথা মনে পড়ে গেল এই লেখা পড়ে। আমার মা আমাকে সব'ই পড়তে দিতেন, তবে আপনার মতন ক্লাস ফোরে এগুলা কিছুই পড়ি নাই। সপ্তম শ্রেনী'তে উঠে পড়া শুরু হয়। তবে মায়ের নির্দেশ ছিল শেলফের একদম নিচের তাক থেকে পড়া শুরু করতে হবে। একদম উপরের ৩ নম্বর তাকের বই কেবল নাইনে উঠে পড়া যাবে। তার আগে নয়। আমি মায়ের নির্দেশ মেনেছিলাম, কিন্তু উল্টো ক্রমানুসারে। 'কায়রো' পর্বটা দিয়ে আমার ইঁচরে পাকা বই পড়া শুরু হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।