মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞানে নোবেলপ্রাপ্তি

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: শনি, ১৮/১১/২০১৭ - ১২:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৮০ সাল, পাকিস্তান। প্রফেসর আবদুস সালাম সবেমাত্র পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার লাভ করেছেন। তার ছাত্র ড. রিয়াজুদ্দিন ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে তাঁর সম্মানার্থে এক সভার আয়োজন করেন। আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সম্মাননার দিন প্রফেসর সালাম ইসলামাবাদে আসলেন। কিন্তু জামায়াতে-ইসলামী সংগঠনের ছাত্রছাত্রীগণের তুমুল প্রতিবাদের মুখে কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারেন নি। ছাত্ররা শ্লোগান দিচ্ছিলো যে প্রফেসর সালাম যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকেন তবে তার পা ভেঙে দেয়া হবে। একজন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত মানুষকে এমনটা বলা হচ্ছে!

পাকিস্তান তো বটেই, পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্যই সম্মান বয়ে আনা একটা মানুষকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিভাগ সম্মাননা দেয়াটা খুব অদ্ভুত কিছু নয়। এই অনুষ্ঠান নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কোন কথাই ছিলোনা। কিন্তু হয়েছে!

কারনটার সাথে ধর্ম, বিদ্বেষ এবং ঘৃণা জড়িত। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে একটা আইন পাশ হয়। আইনটা হলো পাকিস্তানে এটা স্বীকার করে নেয়া যে - 'আহমদিয়ারা মুসলিম নয়'। প্রফেসর আবদুস সালাম ছিলেন আহমদিয়া গোত্রভুক্ত মুসলমান। কিন্তু পাকিস্তানে আহমদিয়াদের মুসলিম পরিচয় দেয়াটা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে প্রফেসর সালাম লন্ডনে চলে আসেন। কিন্তু পাকিস্তানের সাথে তাঁর সম্পর্ক পুরোপুরি ছেদ করেন নি। পাকিস্তানের বর্তমান বিজ্ঞান গবেষণার কাঠামো কিন্তু তাঁর হাত ধরেই গড়ে উঠেছে। পাকিস্তানের পদার্থবিজ্ঞানে, বিশেষ করে কণা এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উৎকর্ষ এবং সার্বিকভাবে দেশটার বিজ্ঞানে উন্নতির পেছনে এই নিজের দেশে নিগৃহীত লোকটার হাত আছে।

কিন্তু ধর্মকেন্দ্রিক বিদ্বেষ এবং বর্ণবাদিতা তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে সম্মান দিতে বাঁধাগ্রস্থ করেছে। বিজ্ঞানীর মর্ম ধর্মে বোঝেনা। তাঁর মৃত্যুর পরে যেখানে দাফন করা হয় সেই সমাধিস্তম্ভে লেখা ছিলো 'প্রথম মুসলিম বিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন'। মর্দে মুমিন মুসলমানগণ সেই 'মুসলিম' শব্দটা সমাধিস্তম্ভ থেকে মুছে দেন। ধর্ম কতটুকু বর্ণবিদ্বেষী হয় সেটা বোঝা যায়। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং আদিবাসী মানুষদের ঘরবাড়ি পোড়ানো, হত্যা, নির্যাতন ইত্যাদি এইরকম বিদ্বেষের সুন্দর উদাহরণ।

যাই হোক, এবার অন্য কথায় আসি। এখন পর্যন্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া মাত্র ৩ জন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনই গবেষণার কাজ করেছেন আমেরিকায় এবং সম্ভবত দুইজনই নির্ধার্মিক। একমাত্র নিজের দেশে কাজ করে (যদিও বিদেশ পড়াশোনা, তিনি ইংল্যান্ডেও কিয়দাংশ কাজ করেছেন।) নোবেল পাওয়া মুসলিম বিজ্ঞানীর নাম প্রফেসর আবদুস সালাম। তাঁকেও আহমদিয়া মুসলিম বলে নিজ দেশে নিগ্রহের শিকার হতে হয়। প্রফেসর সালাম নিজে কিন্তু বেশ ধার্মিক ছিলেন, এমনকি নোবেল পুরষ্কার বক্তৃতায় কুরানের বাণী পেশ করেছেন!

অন্যদিকে আহমদিয়াদের মুসলিম হিসেবেই মানেন না বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ অন্য মুসলিমগণ। অণুজীববিজ্ঞানে পড়া আমার এক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু একবার আমাকে বলছে যে সে নীলফামারি যাবে। জিজ্ঞেস করলাম কেন। সে যে বললো তাতে বেশ অবাক হলাম। নীলফামারিতে নাকি কয়েকজন আহমদিয়া পরিবার আছে যাদেরকে প্রতিহত করা দরকার। সেখানে লোক লাগবে। সেজন্য সে চট্টগ্রাম থেকে নীলফামারিতে আন্দোলন করতে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম মুসলিমদের নিজেদের ভেতরেই যে পরিমান দ্বন্দ, সমস্যা, হানাহানী - সেগুলা আগে প্রতিহত করে তারপরে গুটিকয় আহমদিয়াকে শায়েস্তা করতে গেলে হয়না? আমি নিশ্চিত যে সে পাকিস্তানে থাকলে আজকে গিয়ে প্রফেসর আবদুস সালামের কবরে দুইটা ঢিল মেরে আসতো।

তাহলে টেকনিকালি সহীহ সুন্নী কোন মুসলিম বিজ্ঞানী এখনও নোবেল পুরষ্কার পান নাই। এইটা যে কতটা দুঃখজনক একটা ব্যাপার সেইটা টাইসন তার বক্তৃতায় বলেছেন (নিচে ভিডিও দেখুন)। বিশেষ করে পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ যেখানে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে। তুলনামূলকভাবে আমেরিকায় শুধু এক বছরেই ৬ জন বিজ্ঞানী নোবেল পান।

মুসলিম বিশ্বের জ্ঞানচর্চায় পিছিয়ে থাকাটা মানুষের, মস্তিষ্কের, সম্পদের, প্রাণের এক চরম অপচয়। অবমাননার বিষয়। অনুভূতিতে আঘাত লাগার প্রকৃত কারণ হওয়া উচিত!

সমস্যাটা হয়তো কয়েক জায়গায়। দারিদ্রাক্রান্ত মুসলিম পৃথিবী, যুদ্ধবিগ্রহ, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি ইত্যাদি। দারিদ্র্য একটা প্রধান অন্তরায় হলেও সমপরিমান ধনী মুসলিম-অমুসলিম বিশ্বের তুলনা করলেও মুসলিম বিশ্ব পেছনে পরে থাকবে। বিজ্ঞানে গুরুত্ব না দেয়াটা কারণ। ধর্ম এবং অন্ধবিশ্বাস যে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য কতবড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রমাণ বা আবিষ্কারের আগেই কোন জিনিস বিশ্বাস করে বসে থাকা মানুষজন আর যাই হোক, বিজ্ঞানী হতে পারেনা। আবার হাজার প্রমাণ দিলেও ধর্মবইয়ে অন্যরকম বলা আছে বলে বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে গ্রহণ করতে না পারা মানুষজনও কোনদিন বিজ্ঞানী হতে পারেনা। তারা বরং গবেষণাগারে চাকুরি করতে পারে। গৎবাঁধা প্রকাশনাও তৈরি করতে পারে। তাতে বিজ্ঞানের খুব বেশি হয়তো উন্নতি হবেনা। নোবেল পুরষ্কার এভাবে আসেনা।

এইখানে ধর্ম কিভাবে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেটা আমার একটা পুরানো লেখার অংশ থেকে তুলে দিচ্ছি -

বিজ্ঞানের শুরু হল পৃথিবীর সকল কিছুকে প্রশ্ন করা দিয়ে, পৃথিবীর নিয়মকানুন, ঘটনা এসব কিছুর শুলুকসন্ধান করা। আমরা যা দেখি, উপলব্ধি করি তার প্রক্রিয়া বোঝা, কোন ঘটনা কেন হচ্ছে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা। অর্থাৎ, প্রশ্ন করা ছাড়া বিজ্ঞান হতে পারেনা। একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া সেজন্য শুরু হয় প্রশ্ন দিয়ে, যার উত্তর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা এবং ফলাফল দিয়ে বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করতে হয়। যুক্তি দিয়ে ফলাফল বিশ্লেষণে যেই সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে যৌক্তিক তাকে গ্রহণ করা হয় এবং পুনঃপুনঃ বিভিন্ন পরীক্ষায় একই ফলাফল পাওয়া গেলে সেই সিদ্ধান্ত বা প্রমাণিত অনুকল্পকে তত্ত্বের মর্যাদা দেয়া হয়। ব্যবহারিক এবং সময়ের পরীক্ষায় তত্ত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়।

বিজ্ঞানের এই মূল বিষয়টি ধার্মিক দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন, আল্লাহ/ভগবান/ঈশ্বরের অস্তিত্বে অথবা ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত কোন কাহিনীকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন তবে আপনি সরাসরি নাস্তিক বা নির্ধার্মিক বলে বিবেচিত হবেন। মানে ধর্মে বর্ণিত কোন ঘটনা বা বিষয় বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নিতে হবে, প্রশ্ন তো করাই যাবেনা। এই বিষয়টাকে উল্লেখ করা হয় 'বিশ্বাস' হিসেবে। অন্ধভাবে বিশ্বাস করাটাই হল প্রচলিত অর্থে ধর্মচর্চা। এটা বিজ্ঞানের দর্শনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষ অভিজিৎ রায়দের সহ্য করতে না পারলে সম্ভব না। তাদের হত্যা করে, হত্যার ব্যবস্থা করে, বিচার না করে দেশে মুক্তচিন্তা সম্ভব না। মুক্তচিন্তা না করা গেলে জ্ঞানের বিকাশ অধরাই থাকে। গবেষণার পরিবেশ তৈরি হওয়া দূরের কথা। ভিন্নমতের প্রতি ঘৃণার বীজ রোপিত আছে ধর্মচিন্তায়। মুসলিম পৃথিবীকে জ্ঞানবিজ্ঞানে এগিয়ে আসতে হলে সহনশীলতার চর্চা করতে হবে। তাছাড়া আগামী শতকেও ৩ নোবেলই পাবেন।

আগেও কয়েকটা লেখায় দেখিয়েছি, বাংলাদেশে গবেষণার মান এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও করুণ। তুলনা করলে এরকম - পদার্থবিজ্ঞানে একবছরে পাকিস্তান থেকে ৩৮ টি উচ্চতর প্রকাশনা হয়, যেখানে বাংলাদেশে সংখ্যাটা ১!পাকিস্তানকে বাংলাদেশ জিডিপির দৌড়ে পেছনে ফেললেও বিজ্ঞানের দৌড়ে কয়েক গুণ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। যদিও যেই মানুষটার জন্য পাকিস্তানের বিজ্ঞানের এই উন্নতি তাঁকে ধর্মের কারনে তারা নিজেরা গ্রহণ করতে পারেনাই। কিন্তু আমি তো মনে করি বাংলাদেশ আরও কম সাম্প্রদায়িক দেশ। (যদিও আজকালকার ঘটনাগুলি দেখলে এই বিশ্বাসে দোলা লাগে।) আমরা কেন পাকিস্তানের চেয়ে অন্ততঃ বিজ্ঞানে ভালো করতে পারবো না?

ধর্মান্ধতা, হানাহানী, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি কাটিয়ে উঠে দেশের জন্য কার্যকর গবেষণা ব্যবস্থা, সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। কয়েকজন রোল মডেলও দরকার আমাদের। যারা দেশকে যেমন বিজ্ঞানে উন্নত করতে পারবেন, তেমনি তাদেরকে দেখে তরুণতরুণীরা উৎসাহিত হবেন।

(লেখাটা একটু অগোছালো হলো। তবুও, চিন্তাভাবনার ইটা দিয়ে রাখলাম :)। আমি আসলে মুসলিম-অমুসলিম ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে বিজ্ঞান গবেষণা, তার প্রাপ্তি ইত্যাদিকে চিন্তা করিনা। কিন্তু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ধার্মিক মানুষেরা চিন্তা করতে পছন্দ করেন বলে 'মুসলিম বিশ্বের বিজ্ঞান' টাইপ জিনিসপাতি লিখলাম।))


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

ধারণাটাকে একটু জেনারালাইজ করা যাক। যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের অর্জন সেলিব্রেট করতে অর্জনকে গোষ্ঠীর অর্জন বলে তাহলে কি আমরা আপত্তি করবো? আলোচনাটা আগানোর জন্য কিছু উদাহরণ পেশ করা যাক,

  • লিঙ্গভিত্তিক উদযাপন। যেমন এরকমটা বলা যে অমুকে একজন তৃতীয় লিঙ্গের পরিচালক।
  • অঞ্চলভিত্তিক উদযাপন। যেমন, কুড়িগ্রামের* সফল ব্যক্তি। একইভাবে সফল আদিবাসীদের নিয়ে উদযাপন হতে পারে**।
  • ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে উদযাপন যেটার উদাহরণ আপনার পোস্টে আছে

* সবচাইতে দরিদ্র এলাকার মধ্যে একটা
** হতে পারে - এখানে সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। ঔচিত্যের (normativity) নয়।

প্রতীক এর ছবি

না, এতে আপত্তি করার কিছু নাই আসলে। কারণ এই অর্জনটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভেতরে পরে।

তবে এই অর্জনটা কোন গোষ্ঠী করছে সেটাকে একটা সূচক হিসেবে চিন্তা করা যায়। একটা অর্জন সংখ্যাগতভাবে যত ছোট গোষ্ঠী উদযাপন করবে, সেটা তত বড় নেতিবাচক উপাদান।

যেমন ধরুনঃ বাংলাদেশ > বিজ্ঞান বিভাগ > বুয়েট > ইইই > এ সেকশন > জিপিএ ৩.৯ এর চাইতে বেশী -- এখানে একজন নিজেকে যত বড় গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে, তার মানে হচ্ছে সে নিজেকে সেই গোষ্ঠীর ভাল-খারাপ সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করে। এখান থেকে সেই সমাজে মানুষটির বিকাশ বোঝা যায়, আরও বোঝা যায় সমষ্টিগতভাবে সেই সমাজের উন্নতির সম্ভাবনা কতটুকু।

প্রতীক এর ছবি

শুদ্ধিঃ না, এতে আপত্তি করার কিছু নাই আসলে। কারণ এই উদযাপনটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভেতরে পরে।

তবে এই উদযাপনটা কোন গোষ্ঠী করছে সেটাকে একটা সূচক হিসেবে চিন্তা করা যায়। একটা অর্জন সংখ্যাগতভাবে যত ছোট গোষ্ঠী উদযাপন করবে, সেটা তত বড় নেতিবাচক উপাদান।

শেহাব এর ছবি

দরকারী লেখা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশ একটা গবেষণাবিমুখ দেশ। কথাটাকে সুইপিং কমেন্ট মনে হলেও একটু খোঁজ করলে দেখবেন অতি সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া এখানে গবেষণা করার সহায়ক পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। খুব সহসা এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। বিদেশে গবেষণা করা অনেক বাংলাদেশী পাবেন, কিন্তু পুরোপুরি বাংলাদেশে গবেষণা করা ঠিকঠাক গবেষক পেতে হলে টেলিস্কোপ-মাইক্রোস্কোপ নিয়ে মাঠে নামতে হবে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা নিয়ে যত কম বলা যায়, লজ্জার পরিমাণ ততো কম হবে।

দেশে বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুব কম নেই, কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদন-বিপণন-বিক্রয়োত্তর সেবা-ব্যবস্থাপনা-কর্মসঞ্চালন-জনব্যবস্থাপনা-পরিবেশ-বর্জ্যব্যবস্থাপনা-পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন-উপস্থাপনা ইত্যাদি কোন বিষয়ে গবেষণার জন্য এক কানা কড়ি বরাদ্দ নেই, এমন কোন বিভাগও নেই। এই দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণা বৃত্তি দেয় না।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের (পূর্ববঙ্গ) এই চিত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে পালটায় না। ভারতের গবেষণার চিত্রটি মোটেও হতাশাব্যঞ্জক নয়, কিন্তু সেখানে বাঙালী গবেষকদের অবস্থান কতটুকু আশাব্যঞ্জক?

এশিয়ার খুব অল্প কয়েকটা দেশ বাদ দিলে বাকিগুলোতে গবেষণার অবস্থা বাংলাদেশের অনুরূপ, এমনকি অমুসলিম দেশগুলোতেও। কিছু কিছু এশীয় দেশ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নালগুলোতে নিয়মিত কাঁড়ি কাঁড়ি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে ফাটিয়ে ফেলছে। কিন্তু সেসব গবেষণা থেকে বাস্তবের কাজের দুনিয়ায় ফলদায়ী জিনিসপত্র কিছু বের হয় না। অমনসব প্রযুক্তি, কৌশল, তত্ত্বের জন্য আবার পশ্চিম দিকেই ধর্ণা দিতে হয়। এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবফাটানো গবেষণায় শিক্ষা বাণিজ্য হয়, কাজের কাজ হয় না। হলে সিঙ্গাপুর (০)-মালয়েশিয়া (০)-দক্ষিণ কোরিয়া (১ - তাও আবার শান্তিতে) থেকে বছর বছর নোবেল লরিয়েট বের হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

কিন্তু সেসব গবেষণা থেকে বাস্তবের কাজের দুনিয়ায় ফলদায়ী জিনিসপত্র কিছু বের হয় না।

চীনে হচ্ছে মনে হয়।

****************************************

প্রতীক এর ছবি

দুইটা কথা। [এটা লিখতে অমল কৃষ্ণ বণিকের কথা মনে পড়ে গেল]

প্রথমত, গবেষণা করার উদ্দেশ্য এটা নয় যে দুনিয়া কাঁপানো গবেষণা করলেই হঠাৎ করে ফলদায়ী কিছু বের হয়ে আসবে। কোন একটা সমস্যার সমাধান স্থান (solution space) এত বড় হতে পারে যে যৌক্তিক সময়ে গবেষণার মাধ্যমে সেটার সমাধান বের হওয়া মোটামোটি অসম্ভব। আপনি বিনিয়োগ করতে থাকতে পারেন এবং আশা করতে পারেন যে একটা সময়ে সমাধান বের হয়ে আসবে। একটি সমাধান যে আসল সমাধান না সেটা বুঝতেও গবেষণা প্রয়োজন। সেই গবেষণা আপনার ভাষামতে ফলদায়ী না হতে পারে, কিন্তু সেটি সমাধান স্থানটিকে একটু হলেও ছোট করে। সেটিও কম বড় নয়।

পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত আমেরিকাতে প্রযুক্তির যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে এর শুরু কিন্তু বছর চল্লিশ আগে আইবিএমে করা কিছু বিরক্তিকর (boring) গবেষণার ফল। তৎকালীন সময়ে আইবিএমের গবেষককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এই আবিষ্কার কি কাজে লাগতে পারে? সেই গবেষক উত্তর দিয়েছিলেন, আমার জানামতে এটা কোন কাজে লাগার সুযোগ নেই। এখন দেখুন সেই বিরক্তিকর গবেষণার হাত ধরে এখন পুরো বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তি চলছে।

একেবারে নতুন কিছু ক্ষেত্র বাদ দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গবেষণা এত এগিয়ে গিয়েছে, আজকে চাইলেই আপনি হঠাৎ করে গবেষণায় ভাল হয়ে যেতে পারবেন না। এটি অনেক বিনিয়োগ এবং সময়ের ব্যাপার। ব্যাপারটি বাংলাদেশের গণিত অলিম্পিয়াডের অর্জনের সাথে চিন্তা করে দেখতে পারেন। বিনিয়োগ করতে থাকলেই আপনি একটা সময়ে নোবেল লরিয়েট পাবেন। আজকে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোবেল লরিয়েট দেখতে পাচ্ছেন সেসব বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিনের চর্চায় এই জায়গায় এসেছে। তাই এশীয় দেশগুলোর যারা গবেষণা করছে তাদের গবেষণা কোনভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এই দৌড়ে তাঁরা কিছুটা হলেও এগিয়ে গিয়েছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গবেষণা মানে যে তেলেসমাতি কিছু না সেটা সবাই জানেন। গবেষণার ফল পেতে যে অনির্দিষ্টকাল লাগতে পারে সেটাও সবাই জানেন। তবে গবেষণা মানে নিস্ফলা কিছু নয়।

জাপান ছাড়া এশিয়ার বাকি দেশগুলোতে (মানে যেখানে গবেষণা হয়) গবেষণার বয়স পঞ্চাশ-ষাট বছর হয়ে গেছে। এই সময়ে কৃষি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক ফলাফল এসেছে। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্য শাখাগুলোতে উল্লেখ করার মতো কিছু হয়নি। কেন কৃষি আর তথ্যপ্রযুক্তি পারলো, কেন অন্য সেক্টরগুলোতে চিন্তাজাগানিয়া, সম্ভাবনাজাগানিয়া, সন্দেহ/সংশয়জাগানিয়া, ভ্রান্তিঅপনোদনকারী, প্রশ্নজাগানিয়া তেমন কিছু মিলল না?

গবেষণার দুনিয়াটা ভৌগলিক সীমারেখা দিয়ে আবদ্ধ না। আজ আমি বাংলাদেশে বসে একটা বিশেষ বিষয়ে কাজ করতে নিলে সারা দুনিয়াতে সেই ক্ষেত্রে আগে যারা কাজ করে গেছেন, এখন যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের কাজের ব্যাপারে আমি জানতে পারবো। ফলে আমাকে বার বার চাকা বা আগুন আবিষ্কার করতে হবে না। তাই যে সব ক্ষেত্রে পশ্চিমা দুনিয়ার গবেষণা অনেক এগিয়ে গেছে আমি চাইলে মোটামুটি তাদের সমান পর্যায় থেকে শুরু করতে পারবো। কথা হচ্ছে আমার দেশ অমন গবেষণায় বিনিয়োগ করে কিনা। বাংলাদেশের কথা বাদ দিন, যারা পয়সা খরচ করে তাদের কথা বলি। আমি যে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর-দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বললাম সেখানে জার্নালপ্রকাশনী গবেষণার বাইরের গবেষণার কী অবস্থা? তাদের কোন গবেষণা কি অন্য দুনিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে চলা কোন গবেষণাকে কি সাপ্লিমেন্ট করতে পেরেছে?

আমার পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা বিভাগের মূল কাজ হচ্ছে পশ্চিমা দুনিয়া সর্বশেষ কোন প্রযুক্তিটা বের করলো সেটা শকুনের চোখ দিয়ে নজর রাখা। তারপর সেটা নূন্যতম সময়ের মধ্যে যোগাড় করে তার হুবহু নকল বের করা। প্রযুক্তিটি লাগসই বা টেকসই কিনা সেটা পর্যন্ত তারা বিবেচনা করে না। তারা সব সময় চায় পা'কে জুতোর মাপে ফিট করাতে।

আমার পর্যবেক্ষণকে যে কেউ ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারেন, তবে তাতে গবেষণায় জাপান ভিন্ন বাকি এশিয়ার চিত্র পাল্টাবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

নীচের লিঙ্কগুলি দেখেনঃ
http://www.bbc.com/news/health-41386849
http://www.businessinsider.com/china-teleportation-space-quantum-internet-2017-7
http://english.gov.cn/news/top_news/2016/08/08/content_281475412068727.htm
একটা মানব জিনের বেইস এডিটিং, একটা কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন নিয়ে সফল গবেষণা সংক্রান্ত, একটা মহাশুন্যে ডার্ক ম্যাটার নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে "ডার্ক ম্যাটার পার্টিক্‌ল এক্সপ্লোরার" স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সংক্রান্ত। তিনটিই এশিয়াতে - চীনে। প্রথম দু'টিই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে "ওয়ার্ল্ডস ফার্স্ট"। এগুলির কোনটাকেই তো আপনার ভাষায় "জার্নালপ্রকাশনী গবেষণা"-সর্বস্ব মনে হচ্ছে না, বরং কাটিং-এজ, যুগান্তকারী বা অন্ততপক্ষে নবযুগ-সূচণা ও প্রচণ্ড-রকম ফলদায়ী হওয়ার সম্ভাবণা-জাগানিয়া গবেষনা বলেই তো মনে হচ্ছে! অন্তত প্রথম দু'টি। আর তৃতীয়টি তাৎক্ষণিক বা আশু ফলদায়ী না হলেও, নিশ্চিতভাবেই আপনার ভাষায় "চিন্তাজাগানিয়া, সম্ভাবনাজাগানিয়া, সন্দেহ/সংশয়জাগানিয়া, ভ্রান্তিঅপনোদনকারী, প্রশ্নজাগানিয়া"-র রিকোয়ারমেন্টটি দুর্দান্তভাবেই ফুলফিল করে। করে না? প্রথমটি চিকিৎসা ও মানবস্বাস্থ্যর জগতে (এমনকি তার চেয়েও বেশি হতে পারে ভবিষ্যতে) বৈপ্লবিক ও যুগান্তকারী পরিবর্তনের সম্ভাবনা-জাগানিয়া বলেই তো মনে হচ্ছে। ২য়টির ক্ষেত্রেও তাই। ২য়টির সম্ভাবণা বিষয়ে এখানে কিছুটা দেখুন। বিষয়ে একজন লেখক বলছেন এটা আধুনিক বিশ্বের চেহারাটাই আমূল বদলে দিতে পারে
এগুলি সামান্য তিনটি নমুনা। মাত্র তিনটি নমুনা। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে মাঝে-মাঝেই যেসব খবর দেখি, তাতে মনে হয় না চীন এখন আর সস্তা নকলিবাজির পর্যায়ে পড়ে আছে। টাকা কামানোর জন্য ঐসব এখনো করছে নিশ্চয়ই, কিন্তু ঐ টাকা তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রায় সবখাতেই মৌলিক, দিগন্তপ্রসারী ও প্রভূত ফলদায়ী গবেষনার কাজেও এখন বিনিয়োগ করছে। ফলও পেতে শুরু করেছে। আধুনিক চীন মনে হয় না জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-অর্থনীতি-ব্যবসা-বানিজ্য সহ কোনো ট্যাঞ্জিবল বিষয়ে কারও থেকে পিছিয়ে থাকতে চায়। ক্যাটাস্ট্রোফিক কিছু না ঘটলে, যেসব জায়াগায় ঘাটতি আছে সেসব জায়গাতেও বাকিদের ধরে ফেলা ওদের জন্য সুদুর-পরাহত বলে মনে হয় না। মহাকাশ-বিজ্ঞান থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম ফিজিক্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও লাইফসাইন্স থেকে শুরু করে যোগাযোগ প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি থেকে পুরকৌশল - সবখানেই তো দেখছি ওরা আছে। এবং এগুলি জার্নালের পাতায় সীমাবদ্ধ না, বহুকিছুই ওরা বাস্তব দুনিয়াতেই করে দেখাচ্ছে। এতকিছু স্রেফ মৌলিকতা বা সৃজনশীলতা-বিহীণ হুবহু নকলিবাজি বা কপি-পেস্ট করে অর্জন করা কি সম্ভব?? আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না, আপনি কি বলেন?

****************************************

প্রতীক এর ছবি

প্রথমে দ্বিমত পোষণ করি। আপনি বলেছেন,

গবেষণার দুনিয়াটা ভৌগলিক সীমারেখা দিয়ে আবদ্ধ না। আজ আমি বাংলাদেশে বসে একটা বিশেষ বিষয়ে কাজ করতে নিলে সারা দুনিয়াতে সেই ক্ষেত্রে আগে যারা কাজ করে গেছেন, এখন যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের কাজের ব্যাপারে আমি জানতে পারবো। ফলে আমাকে বার বার চাকা বা আগুন আবিষ্কার করতে হবে না। তাই যে সব ক্ষেত্রে পশ্চিমা দুনিয়ার গবেষণা অনেক এগিয়ে গেছে আমি চাইলে মোটামুটি তাদের সমান পর্যায় থেকে শুরু করতে পারবো।

আমে যেসব ক্ষেত্র সম্পর্কে জানি, সেসব ক্ষেত্রে এটি সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের চর্চা ছাড়া আপনি চাইলেই একটি গবেষণার শেষ প্রান্ত (cutting edge) থেকে শুরু করতে পারবেন না। আপনার এমন গবেষক লাগবে যারা এটি পারবে। এমনকি একটি গবেষণার ফল নতুন করে তৈরী করতেও অনেক দক্ষতা লাগে। আপনি আজকে একটি পেপার পড়েই সেটি নকল (reproduce) করে ফেলতে পারবেন না। সেরকম গবেষণার চর্চা অনেক সময়ের ব্যাপার।

আমি জানি না আপনি পশ্চিমা বিশ্বের কোন গবেষণাকে ফলদায়ী বলছেন। কম্পু বিজ্ঞান বাদে খুব কম ক্ষেত্রের গবেষণাই কম সময়ে শিল্পে (industry) চলে যায়। দয়া করে সাম্প্রতিক কালের পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটা গবেষণার উদাহরণ দেবেন যেটি আপনার কাছে ফলদায়ী মনে হয়েছে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যে কোন গবেষণা একটি অনিঃশেষ প্রক্রিয়া। এখানে শুরু করতে গেলে একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে হবে এমনটা নয়, প্রাগ্রসর গবেষকদের সহায়তা নেয়া যাবে না এমনটাও নয়। একজন গবেষক প্রক্রিয়াটির কোন পর্যায় থেকে শুরু করতে পারবেন সেটি তার জ্ঞান, সামর্থ্য ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। গবেষণা যখন সম্মিলিত প্রচেষ্টার বা বৃহত্তর উদ্যোগে হয় তখন মোটামুটি সাম্প্রতিক পর্যায় থেকে কি শুরু করতে পারার কথা না!

নকল ব্যাপারটা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মৌলিক বিজ্ঞানে কি নকল বলে কিছু হয়?

কম্পু বিজ্ঞান বা তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া আরও যে মিলিয়ন মিলিয়ন জিনিস আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি সেগুলোর যে কোন একটার উন্নয়নের ক্রমবিকাশ লক্ষ্য করলে পশ্চিমা বিশ্বের গবেষণার ফলটা টের পাওয়া যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রতীক এর ছবি

দুঃখজনক হলেও সত্যি আমার মনে হচ্ছে যে আপনি নির্বাচন পক্ষপাত (selection bias) এবং নির্বাচন পক্ষপাত (confirmation bias) পক্ষপাতদুষ্ট। আমি আপনাকে যত উদাহরণই দেখাই আপনার মনে হবে আপনার ধারণাই সঠিক। সুতরাং এই আলোচনা এখানেই শেষ হোক।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাস্তবের দুনিয়ায় ব্যক্তি ষষ্ঠ পাণ্ডব কী ভাবলো না ভাবলো তার কোন মূল্য নেই। কোন বিশেষ গবেষণা, তা সেটা পূর্ব দেশেই হোক আর পশ্চিম দেশেই হোক, যদি সত্যি এগিয়ে যায় তাহলে সেটার সুফল সবাই কম-বেশি পাবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রতীক এর ছবি

দ্বিতীয়ত, আপনার পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে মন্তব্যটি তথ্যগতভাবে ভুল। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, তাই পশ্চিমবঙ্গের গবেষণার চিত্রটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের চিত্র তুলে ধরে না। তাই তুলনাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। তবে আপনি ধরে নিতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ হওয়ায় সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ শিক্ষকেরা বাংলা ভাষাভাষী। আমার জানাশোনা বলে সেভাবে চিন্তা করলেও পশ্চিমবঙ্গ বেশ এগিয়ে। যেমন ধরুন এখানে টেবিল ৬ এ [১] দেখা যাচ্ছে ২০১৪ পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী প্রকাশনার হিসেবে ২৪টির মাঝে পশ্চিমবঙ্গের ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে।

তথ্যসূত্রঃ
[১] India’s Science and Technology output, 1989-2014: A Scientometric Analysis, http://digitalcommons.unl.edu/cgi/viewcontent.cgi?article=3759&context=libphilprac

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কিত আমার মন্তব্যটি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গবেষণাতে সীমাবদ্ধ নয়। পশ্চিমবঙ্গ একটি ভারতীয় রাজ্য যার নিজস্ব সরকার আছে, রাজস্ব আয়-ব্যয় আছে, বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ আছে, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে। তো পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক বাজেটে গবেষণা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কী পরিমাণ? সর্বভারতীয় বরাদ্দের শতকরা হারের সাথে তুলনা করলে সেটা কি আশাব্যঞ্জক? যে সব গবেষণা প্রতিষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চালায় সেগুলোতে গবেষণার কী অবস্থা? রোনাল্ড রসের শহরে তাঁর পরে আরও একশ' বছর পার হতে চললো; তো এই সময়ে সেখান থেকে আর কী মিললো? গবেষণার যে সব খাতে ভারতে অবস্থানরত ও গবেষণারত ভারতীয়দের সুনাম আছে সেখানে বাঙালী গবেষকদের কী অবস্থা?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রতীক এর ছবি

পশ্চিমবঙ্গের গবেষণার প্রসঙ্গটি আপনি তুলেছেন। আমার কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে এমন পরিসংখ্যান দিয়ে আমার মতটি তুলে ধরলাম। আপনি যদি দ্বিমত হয়ে থাকেন, তবে আপনিই কিছু পরিসংখ্যান দিন না যেটি দিয়ে আমি বুঝতে পারি?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না। কারণ, পুরোপুরি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চালায় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য রাজ্যগুলোর প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কী পর্যায়ে আছে সেটা তুলনা করে দেখা হয় না। রাজ্য সরকারের অর্জনের দাবীগুলো মূলত পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃতিত্ব। তাহলে আমি এই কথা কী করে বললাম? সেটা পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে একটু খোঁজ নিলেই বোঝা যাবে। এখানেও কৃষি ছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে অল্পস্বল্প অর্জন পেতে পারেন, বাকিগুলো অনুল্লেখযোগ্য। বিষয়টা আমরা আরেকভাবে দেখতে পারি। আমরা যদি এমন একটা তালিকা করার চেষ্টা করি পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গত সত্তর বছরে কী কী অর্জন করেছে তাহলে কেমন হয়?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

পাকুড়  এর ছবি

আমরা যদি এমন একটা তালিকা করার চেষ্টা করি পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো গত সত্তর বছরে কী কী অর্জন করেছে তাহলে কেমন হয়

সহমত

সোহেল ইমাম এর ছবি

ধর্মান্ধতা, হানাহানী, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি কাটিয়ে উঠে দেশের জন্য কার্যকর গবেষণা ব্যবস্থা, সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। কয়েকজন রোল মডেলও দরকার আমাদের। যারা দেশকে যেমন বিজ্ঞানে উন্নত করতে পারবেন, তেমনি তাদেরকে দেখে তরুণতরুণীরা উৎসাহিত হবেন।

চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।