এক এগারো - ফিরে দেখা (২)

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০১/২০১৮ - ৫:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত গণমাধ্যম সংক্রান্ত একটা খবর দৃষ্টি কাড়ে। উইকিলিক্সে ফাঁস হওয়া মার্কিন ‘ক্যাবলের’ বরাতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ২০১১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে আমাদের জানায়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই অন্তত দুইটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানার অংশিদারিত্ব কেনার ব্যাপারে কাজ করেছিল সেই সময়ে। খবরে বলা হয়, ডিজিএফআই কথিত বাংলাদেশ পারস্পেক্টিভ রিসার্চ ফাউন্ডেসন নামে একটা প্রতিষ্ঠান তৈরী করে ইটিভির ২০% অংশীদারীত্ব কিনেছিল এবং চ্যানেল ওয়ানের এক-তৃতীয়াংশ অংশীদারিত্ব কেনার ব্যাপারটা প্রক্রিয়াধীন ছিল।

তবে ডেইলি স্টারের ‘স্টাফ রিপোর্টারের’ বাক্য গঠন শৈলীতে মার্কিন কূটনীতিক গীতা পাসির ২০০৭ এর ২৬ নভেম্বরে স্টেট-ডিপার্টমেন্টে পাঠানো মূল প্রতিবেদনের সাথে সেই ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনের অর্থের কিছুটা পার্থক্য তৈরী হয় (সময়-সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়)। ডেইলি স্টার লিখে, “They also disclose that even after the caretaker government had departed, the DGFI purchased shares of private TV stations.” বাক্যটা পড়ে মনে হতে পারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলে যাওয়ার ‘পরও’ ডিজিএফআই অংশীদারীত্ব কিনেছিল। (এবং even after শব্দ-যুগল ব্যবহারে আগেও কিনেছিল এমন একটা সন্দেহেরও অবকাশ থেকে যায়, যদিও সেক্ষেত্রে ‘কন্টিনিউড পারচেজিং/টু পারচেজ’ শব্দ-যুগল ব্যবহৃত হত।) আসলে ডিজিএফআই সংশ্লিষ্ট এক আইনজীবির বরাতে মূল প্রতিবেদনে গীতা পাসি বলতে চেয়েছেন, “এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলে গেলেও ডিজিএফআই যাতে গণমাধ্যমের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে... “...... military efforts to influence media even after the Caretaker Government departs is the reported purchase by DGFI of shares in private television stations” এখানে সময়ের ব্যাপারটা গুরত্বপূর্ণ। এক আইনজীবির বরাতে বলা এই খবরটার সত্যতা যাচাই করা যায় না, কিংবা পরে কোন অগ্রগতির কথা আর শোনা যায় না। এজন্য বলছি সময়টা গুরুত্বপূর্ন, যা নিয়ে পরে আলোচনা করব।

গীতা পাসির পাঠানো সেই প্রতিবেদনে দেখি গণমাধ্যম কর্মকর্তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা গোয়েন্দা বাহিনীর দ্বারা গণমাধ্যমকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করার কথা মার্কিন দূতাবাসকে অবহিত করছে। আসলে, উপরের বিভ্রান্তিকর সংবাদটা ছাড়া তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেখানে পাইনা। গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এবং গণমাধ্যম কর্তৃক এর শক্ত বিরোধিতা প্রত্যাশিতই ছিল। গণমাধ্যমে স্বাগত জানানো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই Emergency Powers Ordinance 2007 (ইপিও) এবং Emergency Powers Rules 2007 (ইপিআর) জারি করে। অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইপিআরের ৫ ধারা “ the publication of any criticism of the activities of the government that is deemed to be ‘provocative’ by the authorities, in news bulletins, video footage, talk shows, features, articles, editorials or cartoons” উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অবশ্য মাহফুজ আনাম ডেইলি স্টারে ১২ জানুয়ারী ২০০৭ তে ‘Gagging the Media is Not the Answer’, শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এর কড়া সমালোচনা করেন। তবে আমরা দেখি, গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ‘অতন্ত্র সৈনিক’ তখনকার উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সেপ্টেম্বর মাসে টক-শোয়ের উপর একগাদা বিধি-নিষেধ দিয়ে একটা ‘নীতিমালা’ গণমাধ্যমে পাঠান। এদিকে ‘অভিযোগকৃত দুনীতিবাজদের’ তালিকা অহরহ প্রাকাশ করা সম্পাদক মতিউর রহমান নিজের প্রকাশকের নাম তালিকায় আসলে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ‘সরকার কর্তৃক প্রভাবিত করার চেষ্টা’ জাতীয় নালিশের আয়রনিও আমারা দেখি। গীতা পাসি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গিয়ে আমাকে অবশ্য অতীতস্মৃতিকাতর করে দেন। তিনি বলেন, এরশাদের ‘জমানায়’ তার কবিতা দৈনিকের প্রথম পাতায় যে ছাপা হত, সেটা কি ‘নিউজ-ভ্যালু’র জন্য হত?

এক এগারোর প্রেক্ষাপট এবং এর বিস্তৃতি যথেষ্ঠ ব্যাপক, স্বল্প আয়তনে এত বড় আলোচনা সম্ভব না। শুধুমাত্রে কিছু কিছু ব্যাপারে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। দ্বিতীয়ত অনেক ঘটনা প্রবাহই বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়েছে, অথবা পর্দার আড়ালের অনেক ঘটনা কখনই জানা যাবে না। কূটনীতিকদের পাঠানো রিপোর্টেও এর প্রভাব দেখি। তৃতীয়ত, একটা নির্দিষ্ট নকশায় কিংবা দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা দেখায় বিভ্রমের সু্যোগ থাকে। যেমন, এই উপমহাদেশে সেনাবাহিনী ক্ষমতার কাছাকাছি আসবে আর ক্ষমতা দখল করবে না সেটাই অস্বাভাবিক। (আবার কেন সেনাবাহিনী ক্ষমতা ‘দখল’ করল না, সেটাও নিজ নিজ ‘ফ্রেম-অভ-রেফারেন্স’ থেকেই বিশ্লেষণ করি। যেমন, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জেনারেল মইন কেন ‘ক্ষমতা দখল’ করেন নাই এই বিশ্লেষণ তার দৈহিক গঠন/সৌষ্ঠব আইয়ুব খানের মত (অথবা নিদেনপক্ষে এরশাদের মত) নয় বলে ‘আত্মবিশ্বাসের’ অভাবে দখল করতে পারেনাই বলে টকশোতে বললেন। এটা কোন কৌতুক না কিন্তু।) যাই হোক, এই লেখায় আমি উইকিলিক্সে ফাঁস হওয়া কুটনৈতিক প্রতিবেদন গুলির উপর জোড় দিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লেখা গোপনীয় সেই প্রতিবেদনগুলিতে অকপটে বিষয়গুলি বলার চেষ্টা করেছে বলেই মনে হয়।

প্রথমে এক-এগারোর পটভূমিতে আরেকবার ফিরে যাওয়া যাক। জানুয়ারীর এগারো তারিখে সকালে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো (নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরুর আগে) তৎকালীণ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পেট্রিসিয়া বিউটেনিসের ‘Military says no to political role, extra-constitutional action’ শীর্ষক বিস্তারিত প্রতিবেদনে এক-এগারোর প্রক্ষাপটের কিছু অংশ উঠে আসে।

প্রতিবেদনে আমরা দেখি, এক-এগারো পূর্ববর্তী সময়ে রাজনীতিকদের একাংশ, ব্যবসায়ী মহল এবং সুশীল সমাজ (‘মাধুকরী ত্রয়ী’) বিদেশি কূটনৈতিকদের প্রচন্ড চাপ দিচ্ছেন যাতে তারা সামরিক বাহিনীকে এই মুহূর্তে সরকারে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে রাজি করায়। এক-এগারো সরকার গঠনের আগেই এই ত্রয়ী যে সব সমাধানের কথা কূতনৈতিকদের কাছে প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যেই মাইনাস-টু এবং জাতীয় ঐক্যের সরকারের প্রস্তাব ছিল (শেখ হাসিনা – খালেদা জিয়াকে দেশান্তরী করে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন)।

এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন এবং বিলেতের কূটনিতিকরা ৭-৯ তারিখের মধ্যে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আমল চৌধুরী এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের সাথে একাধিক মিটিং করেন। দুই সামরিক কর্মকর্তাই সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে পরিষ্কার অনিহা প্রকাশ করেন (এবং সামরিক বাহিনীতে এ ব্যাপারে অনিহা আছে সেটাও প্রকাশ করেন), এবং রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের পরামর্শ দেন।

এমনকি মইন ইউ আহমেদ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনে খুশি নন বলে জানান। তিনি আরও বলেন যদিও ১০ থেকে ৩০ জানুয়ারী তারিখ পর্যন্ত সেনা-মোতায়েন থাকবে, শুধুমাত্র ১৬ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর গ্রেফতারের অধিকার আছে (অথচ সংবাদ মাধ্যম বলছে পুরো সময়টার কথা)। তিনি সবসময় ‘মিলিটারি এইড টু সিভিল এডমিনিস্ট্রেশনের’ কথাই বলেছেন। কূটনিতিকরা অবশ্য ৮ তারিখ এরশাদের সাথেও সাক্ষাত করেন এবং তিনি সেনা-সমর্থিত জাতীয় সরকারের কথাই প্রস্তাব দেন।

জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধির কাছেও মইন ইউ আহমেদ সেই প্রচন্ড চাপের কথা বলেন। মজার ব্যাপার হল সেনাবাহিনী সংবিধান-বহির্ভুত কোন কাজ করলে যাতে জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে যেতে না পারে সেই মর্মে একটা চিঠি দিতে মইন ইউ আহমেদই প্রতিনিধিকে অনুরোধ করেন (রক্ষাকবজ হিসাবে)।

অবশ্য পরদিন (১২ জানুয়ারী) পাঠানো বিউটেনিসের প্রতিবেদন, যেখানে নতুন সরকারেরে ব্যাপারে ডিজিএফআই এর কাউন্টার-টেরোরিজম প্রধান ব্রিগেডিয়ার এটিএম আমিন মার্কিন দূতাবাসকে অবহিত করে, সেখানে জাতিসঙ্ঘ সংক্রান্ত আরেকটা খবর দেখি। ব্রিগেডিয়ার বারীর বয়ানে জানা যায়, সামরিক বাহিনী ‘একতরফা’ নির্বাচনে সহায়তা করলে শান্তি মিশনে সেনা পাঠানোতে প্রভাব পরতে পারে জাতিসংঙ্ঘ এধরনের একটা বার্তা সেনাবাহিনীকে দেয়।

যে সংস্কার-পন্থীদের কথা আমরা শুনেছিলাম, মোটা দাগে তাদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ধারনা করা যায় চাপ/গ্রেফতারের ভয়ে একদল সংস্কারের কথা বলছিল। একদল প্রকাশ্যে সমালোচনার সাহস দেখিয়েছে, অন্যদল ভিতরে ভিতরে কাজ করেছে। সদ্য বিদায়ী দল হিসাবে বিএনপি প্রকাশ্যে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল বেশি। ১৪ মে তারিখে ইংরেজি দৈনিক “Soul-searching in BNP welcome” শীর্ষক সম্পাদকীয়তে মাহফুজ আনাম এ নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে দেখা যায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ডঃ ওসমান ফারুক, বর্ষিয়ান নেতা সাইফুর রহমান এবং মেয়র সাদেক হোসেন খোকার প্রকাশ্যে সমালোচনার মুখোমুখি হয় বিএনপি।

ধারনা করা হয়, তথাকথিত ‘মাইনাস-টু’ তত্ত্বের প্রথম ধাপ শুরু হয় ২০০৭ এর প্রথমার্ধে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দানের এবং খালেদা জিয়াকে সম্ভাব্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে। শেখ হাসিনা ৭ মে বীরদর্পে ঢাকায় ফিরে আসলে এই ধারনার শেষ হয়।

জুন মাসের ৪ তারিখে মার্কিন দূতাবাসের জনৈক পেইজের পাঠানো "King’s” party could undermine free and timely election শীর্ষক এক প্রতিবাদনে কিছু কূটনৈতিক বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। আসলে সেখানে সংস্কারপন্থীদের দুর্দশার চিত্রই ফোটে উঠে। সেখানে জানা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করা জামায়তে ইসলামি ছাড়া অন্য বড় দলগুলির কিছু নেতা জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরি ফজলুল বারী, কিংবা কখনো কখনো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন ‘নতুন দল’ সম্বন্ধে কথা বলেছেন। এই যোগাযোগকারী নেতাদের মধ্যে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিল। দূতাবাসে যোগাযোগকারীদের তথ্য অনুযায়ী ৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলেও এ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। অবশ্য তখন বিএনপি নেতাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়।

এখানে পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, জামায়তে ইসলামী দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে এক ধরনের ‘ছাড়’ পেয়েছিল। স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা জেনারেল মতিনের জামাতপ্রীতিই এরজন্য দায়ী বলে ধারণা করা হয়। তিনি জামাতকে সরাসরি গণমাধ্যমে একধরনের ‘ব্ল্যাংকেট ক্লিন-চিট’ দিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দশট্রাক অস্ত্র মামলায় ব্রিগেডিয়ার রেজাকুল হায়দার অনুসন্ধানের মুখোমুখি হলেও জামায়তে ইসলামী পার পেয়ে যায়। ডেইলি স্টার ২৭ জুলাই (২০০৭) “Corruption and the Jamaat - The adviser's comments are surprising´ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এর সমালোচনা করে।

মে মাসের শেষের দিকে দেখা গেল বিএনপির নেতারা, যারা এক-এগারোকে সমর্থন জানিয়েছিল, তারা কিছুটা হতাশ হয়ে যাচ্ছন। তার দূতাবাসে নালিশ করেছে সেনাবাহিনী কিছু করছে না বলে, বিশেষকরে জেনারেল মইন কী চাচ্ছেন বুঝা যাচ্ছেনা।

দূতাবাসে যোগাযোগকারীরা শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেয়া এবং খালেদা জিয়াকে দল থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়াতে সংস্কার বাধাগ্রস্থ হবে বলে জানান। এটাও বুঝা গেল জেনারেল মইন তাদের কাছে ‘বিভ্রান্তিমূলক’। তিনি আস্বস্থ করেছেন এই বলে যে তার কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। আবার শেষে একটা ল্যাজ লাগাচ্ছেন, ‘দেশ যদি না চায়’। এদিকে আবার দেখা যায়, যোগাযোগকারীদের তথ্য অনুসারে, ব্রিগেডিয়ার বারী প্রথমে বলেছিলেন নতুন দল ‘সেনা সমর্থন পাবে’ – পরে তিনি এবং অন্য কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন ‘এধরনের কোন সিদ্ধান্তই হয়নি’।

বিশ্লেষণে একধরনের নেতৃত্বের সংকট নিয়েও চিন্তিত হতে দেখা যায়। জেনারেল মইনের ভুমিকা অস্পষ্ট, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস রাজনীতিতে আসার অপরিপক্ক চেষ্টায় সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছেন। কামাল হোসেনের যদিও ‘লিবারেল এলিট’দের কাছে গ্রহনযোগ্যতা আছে, রাজনীতির মাঠে লবডঙ্কা। ‘দলের স্বরূপ’ নিয়েও দ্বিধা-দ্বন্দ দেখতে পাই। বিএনপি মূলত আওয়ামী লিগ বিরোধিদের জোট, কিন্তু এই দল দাঁড়িয়ে গেলে তার ‘পরিচয়’ কি হবে?

অভিযোগ এবং বিশ্লেষণে এটাও উঠে আসে যে বড় দলগুলির ‘সংস্কারের’ আশাও কম, কারণ দুই নেত্রীই দলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। আবার দুই দলের, বিশেষকরে বিএনপির নেত্রীদের বিরুদ্ধে কিছু বলবে এই সাহসের অভাবও প্রতিয়মান হয়। মান্নান ভূঁইয়া আবার নালিশ করলেন, হান্নান শাহ ‘কথা বলায়’ বন্দি হয়েছেন। এদিকে জেনারলে মইনের দুই গুরুত্বপূর্ণ ‘উপদেষ্টা’ কামাল হোসেন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আতাউর রহমান দুজনেই বলেছেন দলগুলো এখনও সঠিক সংস্কার করতে পারেনি।

আওয়ামী লিগ এবং বিএনপি যে মোটেই পরিবর্তিত হয়নি, এক-এগারো আগের মতই রয়ে সেটাও কিছু কিছু উদারপন্থী-পর্যবেক্ষকের বিশ্লেষণে উঠে আসে। (যেমন ইংরেজী দৈনিকের সম্পাদক মাহফুজ আনাম)।

দূতাবাসের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে সংস্কারবাদীরা ধারনা দিচ্ছে তথাকথিত কিংস পার্টি তৈরী করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা হবে (যার মধ্যে সেনা সমর্থিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ থাকার কথাও বলা হয়), এদিকে আবার জেনারেল মইন (এবং বারীও) পরিষ্কার বলছে তাদের কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নেই। দূতাবাসে যোগাযোগকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দূতাবাসকে সন্ধিহান হতে দেখা যায়।

জিয়া এবং এরশাদের ক্ষমতায় আসার ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে অনেকে মনে করছিল তৃণমূলের সমর্থন ছাড়া এসব কিংস পার্টির ক্ষমতায় আসার উপায় হল, সরকারের সহযোগিতা, বিরোধীদের দমন বা নির্বাচনে কারচুপি।

আবার এদিকে দেখা যাচ্ছে সংস্কারপন্থীরা চাচ্ছে্ন রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকুক, অন্ততপক্ষে কিংস পার্টি দাঁড়ানোর আগে পর্যন্ত। আবার সংস্কারে নেই এমন মূলধারার রাজনীতিকরা চাচ্ছেন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক। কামাল হোসেনের মত লোকরাও চাচ্ছেন নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকুক। অবশ্য উপদেষ্টা মইনুল হোসেন রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পক্ষে অবস্থান নেন। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের ২৫ মে (২০০৭) সংখ্যায় “Law Adviser's unfortunate comments” শীর্ষক সম্পাদকীয়তে এর সমালোচনা করতে দেখি।

তবে কূটনীতিকদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেনারেল মইন তাদের নিশ্চয়তা দেন তার নেতৃত্বের এবং পর্যবেক্ষণের আওতায় কোন ‘অভ্যূত্থানের’ সম্ভাবনা নেই, এবং মার্শাল’লরও কোন সম্ভাবনাও নেই, যদি না সেনাবাহিনীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে না যায়।

প্রতিবেদনের সমাপনী বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ‘নতুন দলের’ সংবাদ এখন সরাসরি প্রাচার করেছে। বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, কিংস পার্টি যদি সেনাবাহিনীর ‘এক্সিট-স্ট্র্যাটিজির’ অংশ হয় তাহলে নতুন দলকে প্রচুর সাহায্য দিতে হবে। এটাও বলা হয়, শহরে কম হলেও গ্রামাঞ্চলে দুই নেত্রীর প্রচুর সমর্থক। সবকিছু বিবেচনায়, নতুন দলকে জিতাতে হলে সময়মত নির্বাচন হবার সুযোগ কম, এবং সবচেয়ে বড় কথা, কিংস পার্টি দাঁড়ানো মানেই দুই বড় দলের পরিসমাপ্তি।

সংস্কার-পন্থীদের কার্যকলাপ এবং জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের কার্যক্রমের কিছু সংবাদ ৭ অগাস্ট ২০০৭ এ পাঠানো গীতা পাসির প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়। বিএনপির প্রাক্তন সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের সাথে জুন মাসের কথোপকথনে ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ একটা কাঠামো দেখা যায়। মূলত আওয়ামী লিগ, বিএনপি এবং ফেরদৌস কোরশির পিডিপির সংস্কার-পন্থী রাজনীতিকদের দিয়ে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানো হবে। পরবর্তীতে নির্বাচনে এরা একটা দল হিসাবে অংশগ্রহণ করবে।

বিএনপি সংস্কার-পন্থীদের নেতা মান্নান ভুঁইয়া এবং জহির উদ্দিন স্বপনের ১ অগাস্টের মিটিংএ আরও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মান্নান ভুঁইয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘জনপ্রিয়তা’ হারানোর কথা তুলে ধরেন। দেশ যে ‘খাদের কিনারায়’ সেটাও বলেন। তিনি বলেন একমাত্র সমাধান উপদেষ্টা পরিষদে পেশাদার রাজনীতিকের অন্তর্ভুক্তি। মান্নান ভুঁইয়া ‘ক্ষমতার অংশীদারিত্ব’ না পেলে যে সংস্কার যে সফল করা যাবে না এ ব্যাপারে বক্তব্য দেন।

এদিকে আওয়ামী লিগের পক্ষ থেকে আমীর হোসেন আমুকেও ‘জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনে’ দেরি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির ভাই গিয়াসুদ্দিন কাদের চৌধুরির ভূমিকা মজার, তিনি মান্নান ভুঁইয়ার সংস্কার পন্থীদের দলেও আছেন, আবার খালেদা জিয়ার সাথেও যোগাযোগ রাখেন।

বিভিন্ন সূত্রের বরাতে সেখানে দেখা যায় ৫ আগস্ট একটা মিটিং হয় যেখানে ‘সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা’ ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ ব্যাপারে নীতিগত ভাবে সমর্থন দেন। কিন্তু তথাকথিত ঐক্যের সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ এই ব্যাপারটাও নিশ্চিত করা হয়। মান্নান ভুঁইয়া-আমু দু’জনেই এতে হতাশা প্রকাশ করেন। ফখরুদ্দিন আহমেদ তার পেশাদার জীবনে সর্বোচ্চ সচিবের পদে ছিলেন, তার অধিনে কিভাবে তারা থাকবেন। সম্ভবত আগস্ট মাসেই জাতীয় ঐক্যের সরকারের স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করে।

গীতা পাসি তার সমাপনী মন্তব্যে বলেছেন, ‘তথাকথিত সংস্কারবাদীরাই’ জাতীয় ঐক্যের সরকারের সমর্থক বলে মনে হয়। দুই নেত্রীর পরে তারাই যে দলের ‘বৈধ’ নেত্রীবৃন্দ সেটা প্রমানে তারা মরিয়া এবং বর্তমান সরকারের অধিনে কাজ করতে পারলে এই জাতীয় ঐক্যের সরকারের ধারণাটা কিছুটা বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু দুই নেত্রীকে সরানোর জগাখিচুরি চেষ্টার পর তাদের বোধদয় হয়েছে ব্যাপারটা এত সহজ না এবং এখন ভয় পাচ্ছে নেত্রীরা না আবার ফিরে আসে।

(চলবে)

এক এগারো - ফিরে দেখা (১)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

+ নির্বাচিত বা রাজনৈতিক সরকারকে উৎখাত করে অনির্বাচিত সরকার যা প্রধানত প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার কিছু সুনির্দিষ্ট কায়দা আছে। ঘরে ঢুকে সবাইকে একযোগে হত্যা করা থেকে শুরু করে সর্বশেষ জিম্বাবয়েয়ান পদ্ধতি পর্যন্ত কায়দাগুলো সময়ের সাথে সাথে অথবা ভূমিভেদে কিছুটা পালটায়, কিন্তু মূল ব্যাপারগুলো এক থাকে। ১৯৫৩ সালে ইরানে ব্রিটিশ-মার্কিন স্পনসর্ড সামরিক অভ্যুত্থানের অনেক বিষয়ের সাথে ২০০৭-এর বাংলাদেশের ঘটনাবলীর মিল আছে। বিশেষত বিউটি আপা, আনু ভাইদের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, তৎপরতার ব্যাপারগুলো তো একেবারে দ্যেজা ভু!

++ রাজনীতিবিদদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্বার করে সুশীল (+প্রকাশ্য/অপ্রকাশ্য উর্দি) সরকার প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়ারা দুই দিন যেতে না যেতে ঐসব দুর্নীতিদষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আবর্জনাসম রাজনীতিবিদদের কিনতে মরিয়া হয়ে যায়। অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে প্রথমেই যে কাজটা করে সেটা হচ্ছে সবার গলা চেপে ধরা। তারা যদি ধোয়া তুলসী পাতাই হন তাহলে জনগণের কণ্ঠরোধ করতে হয় কেন?

+++ ২০০৭-২০০৮ সময়কালে যেসব দুর্নীতি, সংস্কার ইত্যাদির দোহাই দিয়ে যারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র বিপরীতে কিংস পার্টি গঠন করতে গিয়েছিল তাদের বেশিরভাগ জনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দুর্নীতির মহাসাগর আবিষ্কৃত হবে। একটা উদাহরণ দেই। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপি সরকারের আমলে ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করার একটা প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। কাজটা পেয়েছিল ‘ক্যানন-দেশবাংলা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যার কর্ণধার ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, বিএনপি নেতা। দাগী আসামীদের মতো করে একসাথে দশজন ভোটারকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে কিছু কাজ দেখানো হয়েছিল বটে, কিন্তু সেই ছবিসহ ভোটার আইডি বাংলাদেশের লোকজন আর পায়নি। এখানে দুর্নীতির পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। আবার শূন্য দশকের প্রথমভাগে বিএনপি সরকারের আমলে সিএনজি অটোরিক্‌শা আমদানীসংক্রান্ত এক চরম দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। বহুল আলোচিত সেই দুর্নীতির সাথে যে সব আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল তার একটির নাম সপ্তসিন্ধু লিমিটেড যার কর্ণধার ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, বিএনপি নেতা। এহেন ধব্‌ধবে পরিষ্কার নেতা ২০০৭-২০০৮ রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নতুন, পরিষ্কার রাজনৈতিক দল পিডিপি গঠন করে অপ্রকাশ্য সামরিক সরকারের হালুয়া-রুটির ভাগ নিতে নেমে পড়েন। অবশ্য জনাব কোরেশী ২০০৮ সালের শেষের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খেলাপী ঋণের কারণে।

++++ জাতীয় স্বার্থে কতগুলো বিষয়ে গভীর তদন্ত হওয়া দরকার। বিশেষত ২০০৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থাকা সরকারগুলো যে সব আন্তর্জাতিক ক্রয়, বিক্রয়, লিজ চুক্তি করেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা আবশ্যক। যেমন, মেজর জেনারেল রুহুল আমীন চৌধুরী, যিনি বর্তমানে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন। খনিজ সম্পদ তার দায়িত্বে ছিল। ঐ সময়ে অস্ট্রেলিয়ান এক কোম্পানী বাংলাদেশে ভারী খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ পাবার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়। এই ব্যাপারে পরে আর কিছু বিস্তারিত জানা যায় না। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন বরাদ্দ প্রদান, বরাদ্দ বাতিলের বিষয়গুলোও দেখা দরকার। ঐ সময়কার সরকারগুলোর কার্যক্রম সংবিধান সংশোধন করে বৈধতা দেবার ফলে এই প্রকার তদন্ত করা কিছুটা কঠিন হয়ে গেছে, তবে অসম্ভব নয়। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সরকার এমন তদন্ত করতে পারে।

+++++ বিএনপি-আওয়ামী লীগের কাছে কাম্য ছিল তাদের দলের যারা মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে স্বপ্রণোদিত হয়ে যোগ দিয়েছিল, সংস্কারের নামে দলকে বিলুপ্ত করতে চেয়েছিল, ২০০৭-২০০৮-এর অপ্রকাশ্য সামরিক সরকারের হালুয়া-রুটির ভাগ নিতে গিয়েছিল তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করার। অথচ আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করি উভয় দল সেসব বিভীষণদেরকে পুনর্বাসিত করেছে, পদ দিয়েছে, নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে।

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য।

+ ১৯৫৩ মোসাদ্দেগের পতনের পরিকল্পনার সাথে ইরানের খনিজ সম্পদের (তেল-গ্যাসের) সম্পর্ক ছিল, বাংলাদেশে সেই সম্পদ নেই। বাংলাদেশের ঘটনা হয়ত ভিন্ন, ভোগলিক অবস্থান হয়ত গুরত্বপূর্ণ। তবে স্বীকার করি মার্কিন পছন্দ এখনও নুরী আল মালিকি কিংবা হামিদ কারজাইয়ের মত ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার। তার কিছুটা ব্যর্থ চেষ্টা বংলাদেশেও দেখাও গেছে। তবে জেনারেল মইনকে আমি ‘বেনিফিট-অভ-ডাউট’ দিব। ২০০৮ এ এবং ২০০৯ এর বিডিয়ার বিদ্রোহে উনার ভূমিকা প্রশংসার এবং এই উপমহাদেশের সেনা-ক্ষমতা-দখলের ইতিহাসের থেকে আলাদাভাবে মূল্যায়নের দাবি রাখে। পরের পর্ব গুলিতে আলোচনার ইচ্ছা রাখি।

++ হ্যা, সূত্র একই। তবে সাধারনের গলাচেপে ধরা তো হয়না। গণ-হারে দুর্নীতি বিরোধি অভিযান চলে, যেটা জনগণের আবার সমর্থন পায়। দুর্নীতি দমন পদক্ষেপ জনগণের সমর্থন পাবার একটা পথও বটে। ( ২০০৭ এর জুলাইতে পরিচালিত জরিপে জণগনের সমর্থন বাড়ার প্রমান পাওয়া গেছে বাংলাদেশে)। তবে মূল ধারার রাজনৈতিক দলের বিপরীতে দল দাড়া করানোর জন্য আবর্জনা দরকার।

+++ কোরেশী সাহেবের ইতিহাস জানতাম না। ধন্যবাদ।

++++ সরকারের কার্যক্রমের সাংবিধানিক বৈধতা কিন্তু দুর্নীতি তদন্তে কোন বাধা হয়ে দাড়ায় না, যদি তদন্ত করার ইচ্ছা থাকে।

++++ শাস্তিতো পেয়েছে। আওয়ামী লিগ অবশ্য এগিয়ে আছে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘ভোট-জয়ের’ হিসাবনিকাশও কাজ করেছে। এই মূহূর্তে সাবের হোসেন চোধুরির নাম মনে পড়ছে।

তবে, দুইটা পয়েন্ট – কিছু সংস্কারের কথাবার্তা দরকার ছিল। যেমন সাইফুর রহমান, তাকে আমি মধুলোভী দলে ফেলব না। আবার গণতান্ত্রিক সরকারও রাজনীতিতে উৎকর্ষের জন্য কোন কাজ করছে না, ফলশ্রুতিতে জী-হুজুর টাইপ রাজনৈতিক তৈরি হচ্ছে। নব্বই থেকে গণতান্ত্রিক সরকাররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমরা আজকের ‘ছাত্রনেতাদের’ স্ট্যান্ডার্ড দেখছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

+ জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ণ জানার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে ক্ষমতার সূতো নাড়ানো কোন জেনারেলকে কোনপ্রকার ‘বেনিফিট অভ ডাউট’ দিতে রাজী না। জাতীয় সংসদ তাদের কর্মকাণ্ডকে ratify করার পরেও তারা গা ঢাকা দিয়ে আছে কেন? মামলায় সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছিল, তারা আসেনি। আদালতে বলা হয়েছে তাদের বর্তমান ঠিকানাও অজ্ঞাত। বোঝা যাচ্ছে Capo dei Capi তার Caporegime-দেরকে Nascondiglio-তে নিরাপদে রেখেছে।

++ সাধারণের গলাও চেপে ধরা হয়। তার খবর মিডিয়াতে তেমন আসেনা বা আসতে পারে না। ঐ সময়ে সকল প্রকার চায়ের দোকানের আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। সকল প্রকার সরব প্রতিবাদ বন্ধ হয়ে যায়। কতিপয় অতিউত্তেজিত পাবলিক অথবা সামরিক শাসনের তাওয়ায় নিজের পরোটা ভেজে নেবার মতলবে থাকা অতিচালাকের কথায় বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই। তারা সময়ে ‘হিটলার’কেও সমর্থন দেবে। ঐসব সমর্থকদেরকে জিজ্ঞেস করা দরকার তাদের পেয়ারের শাসকেরা অতীতের সামরিক শাসকদের অন্যায় ও দুর্নীতির ব্যাপারে মুখে তালা দিয়ে রাখে কেন? তাদের নিজেদের আমলে তারাও কীভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে?

+++ কিংস পার্টি করে তিন প্রকার মানুষ — সামরিক বাহিনীর চাপে পড়ে প্রাণভয়ে ভীত মানুষ, আবাল পাবলিক, নিজের চামড়া বাঁচিয়ে মালকড়ি হাতানোর আশায় থাকা হাড়পাকা শয়তানের দল।

++++ ঠিক তদন্ত করার, মামলা করার ইচ্ছা থাকলে এগুলো করা কোন ব্যাপার না।

+++++ বেঈমানী কেবল উপরের দিকেই হয়নি, তলার দিকেও হয়েছে। মোট বেঈমানদের মধ্যে এক-আধলারও শাস্তি হয়নি, কোন দলেই।

- দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে খুব অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাকি কোন দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের কোন চর্চ্চা নেই। বিকল্প নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ নেই। নিয়মিত কার্যক্রম নেই, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই, কর্মীর মূল্যায়ণ নেই। এখানে দলে উন্নতি করার একমাত্র উপায় তৈলমর্দন ও উৎকোচ। এক একটি রাজনৈতিক দল মূলত তার সর্বোচ্চ নেতার দল হিসাবে পরিচিত, সুতরাং এখানে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আশা করা বৃথা।

- দুই সামরিক শাসক — জেনারেল জিয়া আর জেনারেল এরশাদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেবার সাহস করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তী ২৮ বছরে আর কারো সাহস হয়নি। সামরিক সরকারগুলোর আমলে শিক্ষায়তনগুলোতে যে পরিমাণ লাশ পড়তো, যে পরিমাণ অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যেতো আজ তার পরিমাণ অনেক কম। তাহলে নির্বাচন দিতে ভয় কেন? কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম, এক কচি নেতা বলছেন, এখন হল-ভর্তি-হলের সিট ইত্যাদি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন সুতরাং এখন আর নির্বাচনের দরকার নেই। আর কিছু বলার নেই।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

নব্বই থেকে গণতান্ত্রিক সরকাররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমরা আজকের ‘ছাত্রনেতাদের’ স্ট্যান্ডার্ড দেখছি।

মানসম্পন্ন ছাত্রনেতা হওয়ার জন্য ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়াটা কতটা জরুরী? হাজারটা ইস্যু রয়েছে, চাইলে যা নিয়ে একজন মানসম্পন্ন মেধাবী ও ত্যাগী নেতা ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করে সর্বজনমান্য নেতা হয়ে উঠতে পারেন, নির্বাচনটা হল সেকেনডারী বিষয়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

নির্বাচন জরুরি। নাহলে হুমকী ধামকী মারধোরের বাইরের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা তৈরি হয় না। সরকারী অথবা প্রধাণ বিরোধীদলের ছাত্র রাজনীতিতে নব্বই এর পরের প্রজন্ম সেটাই প্রমাণ করেছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হচ্ছে। চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তিন নম্বর নামান। বইসা আছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।