‘যে দেশে মানুষ বড়’, সোভিয়েত ইউনিয়নে পল্লীকবি

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৭/২০২০ - ৮:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে পল্লীকবি জসীম উদদীনের ভ্রমণ কাহিনী ‘যে দেশে মানুষ বড়’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। সত্যি বলতে সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে সরকারি ভাবে যাওয়া হাজার হাজার বিদেশি অতিথির চেয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব একটা আলাদা নয়, সোভিয়েত সমাজ ব্যবস্থার জয়গান করানোই ছিল হয়তো সেই সমস্ত দাওয়াত করে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য।

কবি শুধু মস্কো নয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ ও ঐতিহাসিক সমরখন্দ, সেই সাথে তাজিকিস্তান ভ্রমণ করেন। সেই হিসেবে তাঁর ভ্রমণ কাহিনীর অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য মূল্যবান, কারণে খুব কম বাংলাদেশের লেখকই ঐ অঞ্চলগুলোতে যাবার সুযোগ পেয়েছিলেন।

বইয়ের শুরুতেই, রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ নেবার ক্ষেত্রেও কবি বেশ দৃঢ় ভাবে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের কথা জানিয়েছেন তাঁর রুশ বন্ধুকে, “ আমাকে যদি নিমন্ত্রণ করেন তবে আমাই একলাই যাহাতে আপনাদের দেশে যাইতে পারি সেই ব্যবস্থা করিবেন। দলবদ্ধ হইয়া গেলে আমি আমার সফর ভালভাবে উপভোগ করিতে পারিব না। ইতিপূর্বে দলবদ্ধভাবে বিদেশে ভ্রমণ করিয়া আমি কিছুই ভালোমতো দেখিতে পারি নাই। আমি হয়ত কোথাও কিছু ভালোমতো দেখিবার জন্য অপেক্ষা করিতে চাহিয়াছি, বন্ধুরা আমাকে টানিয়া অন্যত্র লইয়া গিয়াছেন। তাছাড়া দলবদ্ধ ভ্রমণ পূর্ব হইতেই নির্দিষ্ট রুটিন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয়। আমি চাই আপনার দেশে আমি যেন যেখানে খুশী যাইতে পারি।“

সে এক গেরো, বাঙালিরা সেই সময়েও এবং এখনো অধিকাংশই ঝাঁকের কই হয়ে ভ্রমণের নামে চেক-ইন দিতেই পছন্দ করে থাকেন, দলবদ্ধ যাবার সামান্য সুবিধা থাকলেও ভ্রমণসঙ্গী মনের সঙ্গী না হলে শেষ পর্যন্ত আখেরে খুব একটা স্মৃতি জমা হয় না, ক্রশ চেক দেবার মত কিছু কিছু জায়গা কেবল কোনমতে যাওয়াটায় সম্পন্ন হয় শুধু।

যাত্রার শুরু হলো মহানগরী মস্কো থেকে, সেখানের নানা স্থান বিশেষ করে বলশেভিক বিপ্লবের কেন্দ্রগুলো ঘুরে কবি বিখ্যাত জাদুঘর হেরমেতাশের ( এককালে জারের প্রাসাদ , এখন বিশ্বসেরা জাদুঘরগুলোর একটি) আসেন এশীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র দেখতে।

এখানে কবির সাথে সেখানে বাংলা ব্যকরণ নিয়ে গবেষণারত রুশিদের দীর্ঘ আড্ডা হয়, এবং সেই সময়ের বাংলা সাহিত্য ও পূর্ববর্তী ইতিহাস নিয়ে তথ্যবহুল সব ঘটনা উঠে আসে বিশেষ করে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে পূর্ব-বাংলায় বাংলা ভাষায় সাহিত্য কোন দিকে যাচ্ছে, কারা কারা কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করছেন, কয় ধরনের ধারার জন্ম হয়েছে এই নতুন দেশে, উর্দুফার্সি ঘেঁষা ফররুখ আহমদ ঘরানার কবিদের দাপট কেমন, আবার শহীদুল্লাহ কায়সারের লেখনী কতটা প্রভাবশালী, সেই সময়ের সামান্য আলাপ আজকের জন্য সেইকালের দর্পণ এখনের পাঠকের জন্য।

নানা জায়গায় অতিথি হিসেবে ঘোরার সাথে সাথে কবি শিশুদের স্কুল পরিদর্শন করেন, নিজের লেখা কবিতার বাংলার জীবন ও নিসর্গ সেই রুশিদের কাছে তুলে ধরেন, সেই সাথে সোভিয়েত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লিখেন,

“ আমাদের দেশে যেমন শিশুরা ইতিহাসের ক্লাসে বাবা আদমের কাহিনী হইতে মানুষের জন্মান্তরের ঘটনা শিখিতে আরম্ভ করে, আবার বিজ্ঞানের ক্লাসে যাইয়া ইভোলিউশনের থিউরী শিখিয়া দুই বিপরীত ঘটনা লইয়া মুশকিলে পড়ে, এদেশের শিক্ষায় তেমন হইতে পারে না। বিজ্ঞানের গবেষণা-যন্ত্রে যে তথ্য টেকে না তাহা সোভিয়েত দেশ বিশ্বাস করে না। ছাত্রদিগকে তাহা শিক্ষা দেওয়া হয় না। “

অসীম কৌতূহল থেকে কবি যেমন সোভিয়েত কৃষকের বাড়ি গেছিলেন, সেখানে যন্ত্রকৌশল দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তেমনই আবার বর্ণনা করেছেন মস্কোর বলনাচের। বোঝা যাচ্ছে উনি একেবারেই যেখানে ইচ্ছে সেখানে না যেতে পারলেও নানা বৈচিত্র আনার চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন আব্দারে নানা জায়গায় যেতে।

এরপর পল্লীকবি পাড়ি দেন তাসখন্দ ( বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানী) । মাত্র ক’মাস আগে তাসখন্দে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা যেমন হয়েছিল, কবি সাহেবের সেই ৫০ বছর আগের ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় খুব ফারাক নেই, সেই একই চরসু বাজার যেখানে শৈল্পিক ভাবেই সব পণ্য থরে থরে সাজানো, একই স্থাপত্য, নিরাপদ সুন্দর পরিবেশ। কবি অবশ্য বেহস তাড়াহুড়ো করে সব জায়গার বর্ণনা দিয়ে গেছেন অনেকটা ধারাবর্ণনা মতো। পরে তিনি সমরখন্দে যান, এবং সম্রাট তৈমুরের সমাধিতে চালানো খননকাজ ও গবেষণা নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন,

“ কয়েক বৎসর আগে এই কবরগুলি খুঁড়িয়া তাহার ভিতরে মাথার খুলি এবং আর যাহা কিছু বাহির করিয়া লওয়া হইয়াছে। আমাদের দেশে হইলে এই কবর খোঁড়া লইয়া কত আন্দোলন হইত কিন্তু এখানে ইহা লইয়া কেহ কোনই উচ্চবাচ্য করে নাই।“

সেই সাথে সোভিয়েত দেশে লেখকদের সমাধি কিভাবে সংরক্ষিত থাকে এই দেখে নিজের দেশের কবিদের কবরের কথা স্মরণ করে বেশ হতাশাও ব্যক্ত করেছিলেন।

পরে কবি তাজিকিস্তান ঘুরে আসেন স্বল্প সময়ের জন্য, এবং সেখানে এক ড্যাম নির্মাণের জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য সরকার যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন সেটার সাথে বাংলাদেশের কাপ্তাইয়ের কথা মনে করে বেশ ক্ষোভ উদগীরন করেন,

“ এই প্রসঙ্গে আমাদের কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা মনে পড়ল। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করিতে কত শত শত আদিবাসী চাকমাদিগকে গৃহহারাম সম্পত্তিহারা করা হইয়াছে। যে মাটিতে তাহারা বাপদাদার আমল হইতে বসবাস করিত,যে গাছটির তলার তাহার শ্রান্ত হইয়া বসিত, বৃদ্ধদের কাছে পুরান কালের কাহিনী শুনিত, সেই মাটি ছাড়িয়া আসা কি কম বেদনাদায়ক। তাহাদিগকে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইয়াছে তাহাই কি সেই বেদনার ক্ষতিপূরক? কে বলিবে যে কর্ণফুলীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন ছিল না? প্রয়োজন ছিল, সহস্রবার বলিব যে প্রয়োজন ছিল, কিন্তু এই পরিকল্পনার সময় কতৃপক্ষ কি চাকমাদের জীবিকার জন্য অপর কোন বিকল্প ব্যবস্থা করিয়াছিলেন?”

তবে বইটি ১৯৬৮ সালে ছাপা বলে কিনা জানি না, সেখানে আবার এক লাইন জুড়ে দিয়েছেন আইয়ুব খান সম্পর্কে, ‘ আমাদের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খাঁকে যেভাবেই সমালোচনা করুন না কেন, তাঁর হৃদয়টি পরের দুঃখে সমবেদনায় ভরা।‘

এরপর কবি লেলিনগ্রাদে ( বর্তমান ও অতীতের সেন্ট পিটার্সবার্গ) একটি দুধের খামার ভ্রমণ করেন, এবং সোভিয়েত কৃষি ও যন্ত্র একসাথে কিভাবে এগোচ্ছে সেটা দেখে বেশ মুগ্ধতা জ্ঞাপন করেন। এর ক’দিন পর বেশ অসুস্থ হয়ে উনি হাসপাতালে ভর্তি হন, ফলে সোভিয়েত আমলের হাসপাতাল সেবা নিজের অভিজ্ঞতায় দেখার সুযোগ পান, যা এক হিসেবে বিরল অভিজ্ঞতা।

পুরো বইতেই কবি সাহেব রুশী নারীদের নিয়ে একটাই শব্দ বারংবার ব্যবহার করে গেছেন ‘ সুন্দরী’, এবং যার যার সাথেই পরিচিত হয়েছেন সকলকেই বলেছেন যে ‘ তুমি ভীষণ সুন্দরী, এবং পরিচিত শ্বেতলানা নামের রুশী তাকে ভৎসনা করে বলেছিল “ মেয়েদের সৌন্দর্য পুরুষের মনোহরণের জন্যই নাকি?” উনার এই বিশেষণ একাধিক ভ্রমণকাহিনীতেও দেখা গেছে যা বেশ শ্রুতিকটু, আবার একই সাথে উনি নিজের ক্ষেত্রে সৎ ছিলেন বোঝা যায়, নাহলে বারবার এই কথা লিখতেন না।

শেষ দিনগুলো বর্ণনা নানা বল নাচ ও নাটকের বর্ণনা এবং শিক্ষা বিভাগের নানা অভিজ্ঞতায় পূর্ণ, বইয়ের একেবারে শেষ লাইনটি ছিল, “ বিদায় সোভিয়েতভূমি বিদায়! রূপে ঐশ্বর্যে আদর্শবাদে তুমি সকল দেশের অনুকরণযোগ্য।“

১৯৬৮ সালে প্রথম প্রকাশ হলেও বইটি এখন নিয়মিত প্রকাশ করে পলাশ প্রকাশনী, দাম ২০০ টাকা ( সাদা পৃষ্ঠা) আর নিউজপ্রিন্টে ১০০ টাকা।

মুশকিল হচ্ছে এই বই পড়ে সোভিয়েত ব্যবস্থার বিশাল সব ফাঁকফোকর কিছুই ধরা পড়ে না, কবি যখন মস্কো গেছিলেন তখন ক্রুশ্চেভ জামানা পার হয়ে ব্রেজনেভের আমল চলছে, এবং আগের শাসকের একতরফা সমালোচনা করার যে একঘেয়ে রীতি চালু ছিল সোভিয়েত ব্যবস্থার তারও ছিটেফোঁটা পাওয়া যায় না। সেই সাথে প্রান্তিক মানুষের জনসংযোগ নাই, আবার ধরা যেতে পারে যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় গেছিলেন বলে বেছে বেছে অল্প কিছু মানুষের সঙ্গেই তাকে মিশতে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও কবিরা যে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হন বলে আমরা জানি, সেই বিশেষণের প্রতি কোন সুনাম পল্লীকবি এই বইতে করতে পারেন নাই। ‘যে দেশে মানুষ বড়’ বলে যে আদর্শের স্বপ্ন তিনি আঁকার চেষ্টা করছিলেন, এবং যে দেশের সকল মানুষ সমান হবার কথা ছিল, অল্প কয় দশকে সে দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ভুঁইফোঁড় বিলিওনিয়াররা দেখা দিল এবং সেই দেশকে মানুষ চিনলই কেবল দুর্নীতির জন্য- এই বিষয়টা ভাবার অবকাশ আছে। ভ্রমণকাহিনী তো আর শুধু রোজনামচা নয়, কালের, সমাজের দর্পণও।

ছবি: 
07/07/2011 - 11:39অপরাহ্ন

মন্তব্য

নাজমা কাজী এর ছবি

১৯৬৮ সালে কবি যে বিড়ম্বনা বোধ করেছিলেন দলবেঁধে সফর করার, কালের বিবর্তনে আজও তার খুব একটা হেরফের হয়নি। সমমনা সঙ্গী না পেলে ভ্রমনটা আসলেই কেঁচে যায়।
ভাল লেগেছে বইটির রিভিউ পড়ে, বইটি পড়বার আগ্রহ বোধ করছি।

তারেক অণু এর ছবি

প্রিয় কবি শেখসাদি বলেছিলেন ভ্রমণের সঙ্গী যদি মনের সঙ্গী না হয় তবে সেই ভ্রমণ বিষের সমান! এটা বেশ কমন বই, আপনার আগ্রহ থাকলে কবি সাহেবের ৪টা ভ্রমণ বইই জোগাড় করে রাখব।

নাজমা কাজী এর ছবি

তারেক অণু অশেষ কৃতজ্ঞ থাকবো।

হিমু এর ছবি

অর্ধপ্রাসঙ্গিক: রুশ সাহিত্যের তুমুল অনুবাদ বাংলায় হয়েছে, যেগুলো গুণে আর মানে চমৎকার। কিন্তু অনুবাদকরা দেশটিকে শেষ দিন পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন বলে বাঙালি পাঠকের কাছে পরিচয় করিয়েছেন। রুশ সোভিয়েত (পরিষদ) শব্দটা নিতে পারলে কেন রুশ সোয়ুয এর জায়গায় বাংলা কোনো বিকল্পের বদলে ইংরেজি ইউনিয়ন লিখতে হলো, এ প্রশ্নটা হঠাৎ মাথায় এলো। ইউনিয়নের কোনো সরেস বাংলা এমনকি প্রগতি-রাদুগার অনুবাদকদের মাথায়ও আসেনি। এখন পর্যন্ত কয়েকটি গ্রামের জোটকে ইংরেজি ইউনিয়নই ডাকা হয়। বাঙালির চরিত্রেই সম্ভবত একতার এমন কড়া ঘাটতি যে অন্য ভাষা থেকে শব্দ এনে তাকে জোট বাঁধতে হয়।

কাজী  এর ছবি

বাঙালির চরিত্রেই সম্ভবত একতার এমন কড়া ঘাটতি যে অন্য ভাষা থেকে শব্দ এনে তাকে জোট বাঁধতে হয়।

তাই কি? একতা-র অভাব হলে "একতা" শব্দটাই থাকার কথা না। ইউনিয়ন এর উৎস হচ্ছে ল্যাটিন "unus (one)" --> "unio (unity)" --> Anglo-french "union". বাংলা "একতা" unity অর্থে ব্যবহৃত হয় । তারপরে তার আর বিস্তৃতি ঘটেনি। আমার কাছে একতার অভাবের চাইতে মাথা খাটানোর অভাবটাই বেশী মনে হচ্ছে।

হিমু এর ছবি

ইউনিয়ন মানে যে জোট, সেটা আপনি আমার কথা পড়ে আর উদ্ধৃত করেও ধরতে পারেননি দেখে আশঙ্কা হচ্ছে, বাঙালির চরিত্রে হয়তো আরও কিছু গুণের ঘাটতি আছে।

তারেক অণু এর ছবি

ভালো পয়েন্ট, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সোভিয়েত রাশিয়ায় শুনতাম সবসময়। 'সোভিয়েত দেশ' নামে চালু ছিল কিছু একটা কিন্তু সেটা শুধু গল্প সংকলনের ক্ষেত্রে

Emran  এর ছবি

ব্যক্তিগত মতঃ উৎকৃষ্ট ভ্রমণ কাহিনীর কাজ হল ভ্রমণকে উপলক্ষ্য করে ভ্রামনিক/লেখক/কথকের ভাবনা, মনন, দর্শনের গভীরে পাঠককে নিয়ে যাওয়া। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে (ক) উৎকৃষ্ট ভ্রমণ কাহিনীর মূল বিষয় আসলে এর লেখক, ভ্রমণ নয়; (খ) উৎকৃষ্ট ভ্রমণ কাহিনীর সঙ্গে উৎকৃষ্ট উপন্যাসের পার্থক্য সামান্য; এবং (গ) বাংলা ভাষায় উৎকৃষ্ট ভ্রমণ কাহিনী কম। এমনকি রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ কাহিনী পড়েও আমরা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বেশী বা নতুন কিছু জানতে পারিনা। একটা (তর্কসাপেক্ষে একমাত্র) উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হল দেশে বিদেশে; এই বই পড়ে আমরা যতটা না আফগানিস্তান সম্পর্কে জানতে পারি, তার চেয়ে বেশী জানতে পারি ব্যক্তি সৈয়দ মুজতবা আলী সম্পর্কে।

জসীম উদদীনের ভ্রমণ কাহিনী আসলে জসীম উদদীনের কবিতার মতো; গভীরতা বা দুই বাক্যের মাঝখানে কোন অব্যক্ত অর্থ নেই। What we see is what we get! বাংলা ভাষায় রচিত ভ্রমণ কাহিনীর ক্ষেত্রে এটাই মনে হয় সাধারণ প্রবণতা। এদিক থেকে চিন্তা করলে বাংলা ভাষার অধিকাংশ ভ্রমণ কাহিনী আসলে পর্যটন পুস্তিকার সমতুল্য।

তারেক অণু এর ছবি

'বাংলা ভাষার অধিকাংশ ভ্রমণ কাহিনী আসলে পর্যটন পুস্তিকার সমতুল্য।'- একমত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।